একাই লড়াই করলেন। নিজের নামের পাশে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরিটিও যোগ করলেন। সেই সঙ্গে ইনিংস পরাজয়ের লজ্জা থেকে দলকে রক্ষা করলেন। কিন্তু টসে জিতে ফিল্ডিং করার যৌক্তিকতা কতটা ছিল? দলে ব্যাটিং লাইনআপে ৮ জন ব্যাটসম্যান নিয়ে কৌশলটা ছিল টেস্ট ড্র করার। কিন্তু টসে জিতে প্রথম কয়েক ঘণ্টার সুবিধা নিতে গিয়ে সবই যেন এলোমেলো। টেস্টে সময় যতই গড়াতে থাকে পিচ ততোটাই ভয়ঙ্কর হতে শুরু করে। বিশেষ করে পঞ্চম দিন সেই পিচের অবস্থাটা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তাই তৃতীয় দিনের পর থেকে ব্যাটসম্যানদের জন্য একটু কঠিনই থাকে পিচের কন্ডিশন। সেই হিসেবে অধিনায়ক মুশফিকের পরিকল্পনাটি কোন ভাবেই কাজে আসেনি। ফলে টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয় তুলে নিয়েছে ১০ উইকেটের। টসে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে রীতিমতো রানের বোঝা নিজেদের মাথায় চাপিয়েছে অধিনায়কের ফিল্ডিং সিদ্ধান্ত। অনভিজ্ঞ বোলিং শক্তি নিয়ে এই সিদ্ধান্তটা কার্যকর যে হবে না তা সহজেই অনুমেয়। কারণ দলের তিন মূল বোলারের মধ্যে শুভাগত ও তাইজুল ইসলামের অভিষেক ম্যাচ। অন্যদিকে পেস বোলার আল আমিন হোসেনের মাত্র চতুর্থ টেস্ট। তাইওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে এমন বোলিং শক্তিতে টেস্টে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া কি কৌশলে ভুল নয়? তার ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্তটি ক্রিকেটবোদ্ধা থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রিকেট দর্শকদেরও বিস্মিত করেছে। আর তাই সেঞ্চুরি করেও এমন পরাজয়ের কাঠগড়াতেই উঠতে হচ্ছে অধিনায়ককে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাট করতে নেমে প্রথম দুই দিনে হারায় মাত্র ৩টি উইকেট। তবে ততোক্ষণে স্কোর বোর্ডে যোগ হয়েছে ২৬১ রান। আর বাকি চারটি উইকেটের পতন ঘটে তৃতীয় দিন এসে। ব্রাথওয়েট আর চন্দরপলের জুটি ততোক্ষণে রানের পাহাড় গড়ছে। ব্রাথওয়েট ২১২ রান করে আউট হলে চন্দর পল ৮৫ রানে অপরাজিত থাকেন। স্কোর বোর্ডে ৪৮৪ রান যোগ হতেই ৭ উইকেটের পতন। আর তখনই ইনিংস ঘোষণা করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক। বিশেষ করে তৃতীয় দিন আসতেই বোলাররাই সুবিধা নিতে শুরু করে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে দেশে ফিরে আসা দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট নিয়ে বলেছেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট যেমন ভাবা হতো তা এখন তেমন নেই। উইকেটগুলো এখন আমাদের দেশের মতোই। স্লো আর স্পিনাররাতো সেখানে ভাল বল করছে। সেই সঙ্গে ব্যাটিংয়ের জন্যও ভাল।’ মুশফিকুর রহীমও বিষয়টা জানতেন। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট দলকে যেন রক্ষা করতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফিল্ডিংয়ের। কারণ তামিম ইকবাল, নাসির হোসেন ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের মতো সিনিয়র ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা ফর্মের বাইরে। এছাড়াও ইমরুল কায়েস ও শামসুর রহমান শুভ ওয়ানডে সিরিজে ছিলেন ব্যর্থ। তার ওপর অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমেছেন দু’জন ক্রিকেটার। এমন অবস্থায় দলের ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখতে পারেনি হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট।
বাংলাদেশ জবাব দিতে নেমে সেই চিত্র ফুটে উঠেছে। মুমিনুল হক সৌরভের ফিফটির পর একমাত্র ব্যাটসম্যান মুশফিকই ছিলেন অপরাজিত। তবে অলআউট হয়েছে ১৮২ রানে। এই বাজে পারফরমেন্সের কারণ হিসেবে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম বলেছেন- দীর্ঘ ছয় মাস পর টেস্ট খেলতে নামাটাই আসল সমস্যা। তবে এই উইকেট বেশ ভাল ছিল ব্যাট করার জন্য। আসলে আমাদের ব্যাটসম্যানদের মাঠে তাদের কৌশলগুলো ঠিক মতো প্রয়োগই করতে পারেনি।’