বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জালিয়াতিতে ছাত্রলীগের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত এমন কয়েকজন শিক্ষার্থী এ তথ্য জানিয়েছে। জালিয়াতির অভিযোগে গতকালও ১৭ জন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।
গতকাল বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘ক’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে আটক করা হয় জায়েদ হাসানকে। প্রক্টর অফিসে তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নাহিদুল ও জায়েদের বাড়ি গোপালগঞ্জ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদুলের সঙ্গে একই এলাকার সূত্রে পরিচয়। পরীক্ষায় চান্স পাইয়ে দেয়ার শর্তে তিন লাখ টাকায় চুক্তি হয় তাদের মধ্যে। জায়েদ জানায়, নাহিদুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পরীক্ষা শুরুর দিন সকালে নাহিদুল জায়েদকে আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে আসতে বলে। সে আসলে নাহিদুল তাকে একটা মোবাইল সিম দিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে চলে যেতে বলে। জায়েদ কেন্দ্রের পরিদর্শকদের কথা বলে ভয় পাচ্ছে জানালে নাহিদুল বলে, কোন ভয় নেই। স্যাররা কিছু বলবে না। টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে আটক করা হয় বদিউজ্জামানকে। সে বলে, ব্যবসায়ী রুমমেট ইমদাদুল হক খোকনের মাধ্যমে তার পরিচয় ঘটে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিন সবুজের সঙ্গে। পরে সবুজের সঙ্গে ঢাবি ভর্তিতে সহযোগিতা করবে বলে তিন লাখ টাকার চুক্তি হয়। এর আগে ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে সবুজের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় মামলাও করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মামলায় অন্য আসামিরা ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রী হ্যাপী এবং ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী মামুন, শান্ত ও ইমরান। খোকনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে জালিয়াতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। আটককৃত শিক্ষার্থী আলমগীর কবির প্রক্টর অফিসে বলেন, জনি ভাইয়া আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছেন। তার মাধ্যমে আমি চক্রের সদস্যদের সঙ্গে তিন লাখ টাকায় চুক্তি করেছি। পরে তার মোবাইলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। জানা যায়, আসাদুজ্জামান জনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক। পরে জনি আলমগীরকে ছাড়িয়ে নিতে প্রক্টর অফিসে এলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি দাবি করে বলেন, আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লার সঙ্গে ছিলাম। এর আগে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন পত্রিকার জনির নাম আসে। জনিকে কেন আটক করা হয়নি জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক এএম আমজাদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই আটক করা হয়নি। এদিকে বিষয় পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ব্যবসায় অনুষদের পাঁচ হাজারের মধ্যে চান্স পাওয়া এক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে চার লাখ টাকা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে। তবে তিনি শর্ত জুড়ে দেন সার্টিফিকেট বাতিল হলে তাকে দায়ী করা যাবে না। এ ছাড়া গত বছর জালিয়াতির ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের এক শীর্ষ নেতার নাম উঠে এসেছিল। আটক করা হয়েছিল কয়েকজন কর্মীকে। এর আগে গত ৫ই সেপ্টেম্বর ব্যবসায় অনুষদ ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর প্রায় ১০ মিনিট পর এক ছাত্রনেতার নেতৃত্বে পাঁচটি মোটরবাইকে করে ১০ জন রাজধানীর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রে যান। ওই ছাত্রনেতা নিজের পরিচয় দিয়ে পরীক্ষার প্রশ্ন কেন্দ্র থেকে বের করে নিয়ে আসেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এরপর অন্য সদস্যরা তা সমাধানের জন্য নিয়ে যান নির্ধারিত স্থানে। পরে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষার্থীদের কাছে সমাধান পাঠানো হয়। ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষায়ও টিচার্স টেনিং কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, ইডেন কলেজ ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষা শুরুর আগে থেকেই কাঁধে ব্যাগ নিয়ে কিছু ছেলেকে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোতে ঢুঁ মারতে দেখা যায়। তাদের কেউ বাধা দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কেন্দ্রগুলোতে প্রবেশের সময় কোন পরীক্ষার্থীকেও তল্লাশি করা হয়নি। এ বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন ছাড় দেয়া হবে না।
ওসি’র ছেলেসহ আটক ১৭
এদিকে গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-২০১৫ সেশনের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় এক ওসি’র ছেলেসহ ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এএম আমজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে ওসি এবং তার ছেলের নাম জানাতে পারেননি তিনি। আটককৃত পরীক্ষার্থীদের কাছে ডিজিটাল ঘড়ি, কানের দুল, মোবাইল ও ডিভাইস পাওয়া যায়। আটককৃতদের মধ্যে- অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জায়েদ হাসান, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে প্রিয়ম সরকার, কার্জন হলের ফিশারিজ বিভাগ থেকে সাদমান আহমেদ সৈকত, নীলক্ষেত হাইস্কুল থেকে মো. বদিউজ্জামান জুয়েল, নটর ডেম কলেজ থেকে তরিকুল ইসলাম রাব্বী, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সৈয়দ আলমগীর কবির, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি বয়েজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে রাইসুল ইসলাম, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি গার্লস স্কুল থেকে ফারহা ফারজানা নিশাত, কেএম রেজওয়ানুল এহসান ও ইফরাতুল কাওছার, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ থেকে রুহুল আমিন সেতু ও মো. ফুয়াদ হাসান এবং কর্মচারী মো. রহিমকে আটক করা হয়েছে। জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইমদাদুল হক খোকন নামে অপর একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে কলা ভবন কেন্দ্র থেকে আটক শিলাজিৎ দত্ত অর্ণব নামে একজনকে ছেড়ে দেয় প্রশাসন। লালবাগ থানায় আটক দু’জনের নাম পাওয়া যায়নি। ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এএম আমজাদ বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। ওসি’র ছেলে পরিচয়দানকারী শিক্ষার্থী সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা এখনও জানতে পারিনি ওই ছেলে কোন থানার ওসি’র ছেলে। তবে অপরাধী যেই হোক আমরা কাউকেই ছাড় দেবো না। গত ৫ই সেপ্টেম্বর ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘গ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে আটজনকে আটক করে পুলিশে দেয়া হয়।