সমপ্রতি ঢাকা ঘুরে গেলেন কলকাতার বিখ্যাত গায়ক-পরিচালক অঞ্জন দত্ত। উদ্দেশ্য ছবি নির্মাণ। উড়িষ্যার অশোকপতি জাজ মাল্টিমিডিয়ার একটি ছবি পরিচালনা করবেন। রাজীব বিশ্বাসরা নিয়মিত ঢাকা ঘুরছেন ছবি নির্মাণের জন্য। টালিগঞ্জের দেব, জিৎ, শ্রাবন্তী, মিমিদের আগমনের উড়ো খবরে চলচ্চিত্রের বাতাস ভারি। সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে সবাই ছুটছেন খবরের পেছনে। কলকাতার অংকুশ, হিরণরাও ঢাকার ছবিতে কাজ করছেন। বাংলাদেশে বিদেশী শিল্পী-পরিচালক কাজ করলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। হয়তো ছবি সংশ্লিষ্টরা অনুমতি নিচ্ছেন। কিন্তু যেখানে নতুন কোন একজনকে ছবি পরিচালনা করতে গেলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির অনুমোদন নিতে হয়, সাক্ষাৎকার, সদস্য ফি ইত্যাদি দিয়ে সহযোগী সদস্যপদ নিয়ে ছবি পরিচালনা করতে হয়, সেখানে অঞ্জন দত্ত-অশোকপতিরা আসছেন, ছবি নির্মাণের ঘোষণা দিচ্ছেন; কিন্তু কেউ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির অনুমোদন নিচ্ছেন না। এমন কি পরিচালক সমিতি বলে যে একটা সমিতি আছে সেটা জানারও প্রয়োজন বোধ করছেন না। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিও নির্বিকার। তাই তো অঞ্জন দত্ত-অশোকপতি-রাজীব বিশ্বাসদের বিষয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে। অথচ একটা সময় বিদেশী পরিচালকদের এ দেশে ছবি নির্মাণের সময় পরিচালক সমিতি থেকে সম্মানসূচক সদস্যপদ গ্রহণ করতে হতো। গৌতম ঘোষ যখন ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ছবিটি নির্মাণ করতে ঢাকায় আসেন তখন তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি থেকে সম্মানসূচক সদস্যপদ গ্রহণ করেছিলেন। এই সুযোগটা এখনও আছে। কিন্তু কেউ এর তোয়াক্কা করছেন না। এ নিয়ে পরিচালক সমিতিরও কোন মাথাব্যথা নেই? প্রশ্ন তুলতেই পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিজুর রহমান গুলজার বলেন, যে কোন দেশের পরিচালকই এ দেশে ছবি নির্মাণ করতে পারেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতিসাপেক্ষে। তথ্য মন্ত্রণালয় অনুমতি দেয়ার পর তাদের আসতে হবে পরিচালক সমিতিতে। পরিচালক সমিতির অনুমোদন ছাড়া ছবি সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাবে না। তিনি বলেন, অঞ্জন দত্ত যে ছবিটি পরিচালনা করবেন সেই ছবির নামে নতুন একজন এসেছিলেন পরিচালক সমিতির সদস্যপদ নিতে। আমরা প্রশ্ন তুললে তিনি জানান, অঞ্জন দত্ত কেবল ওই ছবিতে অভিনয় করবেন, পরিচালনা করবেন না। কথাটা আমাদের বিশ্বাস হয়নি বলে আমরা তাকে এখনও সদস্যপদ দেইনি। অশোকপতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অশোকপতি বাংলাদেশের ছবি করছেন এটা অফিসিয়ালি আমার জানা নেই। আমাদের না জানিয়ে যদি কেউ করে থাকেন তাহলে পরবর্তীতে এর দায়দায়িত্ব সেই প্রযোজককেই গ্রহণ করতে হবে। চলচ্চিত্র শিল্পের সংগঠনগুলোর মধ্যে পরিচালকদের এই সংগঠনটিই তুলনামূলকভাবে একটু বেশি সচল। তবে সাধারণ সদস্যরা এই সচলতায় সন্তুষ্ট নন। পরিচালক সমিতি সদস্যপদ বাতিল করার পরও একজন পরিচালক যখন বুক ফুলিয়ে ছবি পরিচালনা করেন এবং এ বিষয়ে সমিতি কার্যকর কোন ভূমিকা রাখতে পারে না, তখন সাধারণ সদস্যরা নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু নেতারা সাধারণ সদস্যদের সব অভিযোগ মানতে নারাজ। সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম খোকন অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য এখন আমেরিকায়। সহ-সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান ও মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজারের নেতৃত্বে সমিতি চলছে। তবে এদের কাজে সন্তুষ্ট নন সাধারণ সদস্যরা। বাংলাদেশে ভারতীয় ছবির প্রদর্শন, যৌথ প্রযোজনার নামে ভারতীয় ছবির প্রদর্শন, ভারতীয় পরিচালক, শিল্পীদের অবাধ আনাগোনার বিষয়ে সমিতির কোন প্রতিবাদ না থাকায় সাধারণ সদস্যরা দারুণ ক্ষুব্ধ। তাদের ভাষায়, পরিচালক সমিতি শুধুই অবসর কাটানোর জায়গায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে পুনরায় অশ্লীল ছবি নির্মাণ ও প্রদর্শনের জোয়ার চলছে। এর বিরুদ্ধে পরিচালক সমিতির কোন ভূমিকা নেই। অথচ এক সময় পরিচালক সমিতির কঠোর উদ্যোগেই অশ্লীল ছবি বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু এখন পরিচালক সমিতির কাজ কেবল নতুন ছবির নাম দেয়া আর পরিচালক হতে আগ্রহীদের সাক্ষাৎকার নেয়া। চলচ্চিত্রের সার্বিক উন্নয়নে সব সমিতির মতো এই সমিতিও প্রায় নিষ্ক্রিয়- এমন অভিযোগ সমিতির সিনিয়র সদস্যদের। উদ্যোগের অভাবে এক বছর বনভোজন হয়নি। ইফতার পার্টি করতে হয়েছে সমিতির সাধারণ সভায়। তবে কোন পরিচালক মারা গেলে তার মরদেহ এফডিসিতে আনা এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনার জন্য দোয়া মাহফিলের দায়িত্ব পরিচালক সমিতি নিয়মিতভাবে পালন করছে। এ নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। অভিযোগ এখন ভারতীয় ছবি আর পরিচালকদের নিয়ে। সমিতির মহাসচিব অভিযোগের জবাবে বললেন, আমরা বসে নেই। সময় হলেই আমাদের কার্যক্রম সবাই দেখতে পাবে। তিনি বলেন, পরিচালক সমিতির বর্তমান নেতৃবৃন্দ তাদের দায়িত্বের ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন। পরিচালক সমিতি পরিচালকদের সম্মানহানির মতো কোন কাজই বর্তমান নেতৃবৃন্দ করেনি, করবেও না। তিনি বলেন, একদল মানুষের কাজ হচ্ছে দোষ খোঁজা। তারা তাদের কাজ করবেই। আমরা আমাদের কাজ করে যেতে চাই।