ক্যারিবীয় সফরে প্রথম টেস্টে বড় হার দেখলেও বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসটি ছিল ভক্তদের কাছে আশাব্যঞ্জক। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের সেঞ্চুরিতে এতে ৩০০-ঊর্ধ্ব রান দেখায় বাংলাদেশ দল। সফরের শেষটায় বাংলাদেশ দলের ব্যাটে তেমন দৃঢ়তা ও বোলিংয়ে ধার দেখার আশা ভক্ত-সমর্থকদেরও। ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বাংলাদেশ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হচ্ছে আজ। সেন্ট লুসিয়ায় গ্রস আইলেটের মাঠে খেলা শুরু হবে রাত ৮টায়। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটি ক্যারিবীয় ক্রিকেটের জন্য আলাদা তাৎপর্যের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এতে মাঠে নামছে নিজেদের ৫০০তম টেস্টে। তবে বিশেষ ম্যাচটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে নেই ক্রিস গেইল। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ম্যাচের মাত্র একদিন আগে দল থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ক্যারিবীয় এ শীর্ষ ব্যাটসম্যান। আর এ ম্যাচ সামনে রেখে গেইলকে বাদ রেখে ১৩ জনের দল ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড (ডব্লিউআইসিবি)। বাংলাদেশের বিপক্ষে এ ম্যাচে গেইলের জায়গায় ক্যারিবীয় দলে ডাক পেয়েছেন লিয়ন জনসন। আজ বাংলাদেশ দলে দেখা যাবে না টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েসকে। অসুস্থতার কারণে এ ম্যাচ খেলতে পারছেন না ইমরুল। তার জায়গায় বাংলাদেশ দলে সুযোগ নিচ্ছেন এনামুল হক বিজয়। পেস তারকা আল-আমিনের বিরুদ্ধে আইসিসি’র সন্দেহযুক্ত বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগটাও টাটকা। সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্ট শেষে আল-আমিনকে অভিযুক্ত করেছে আইসিসি এবং আগামী ২১ দিনের মধ্যে আইসিসি’র ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় উপনীত হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের এ তরুণ পেসারকে। যদিও পরীক্ষার আগ পর্যন্ত আল-আমিনের খেলা চালিয়ে যাওয়ায় বাধা নেই আইসিসি’র। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে দারুণ অর্ধশতকে প্রতিশ্রুতি দেখান টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক। তবে দ্বিতীয় দফা ব্যাটিংয়ে তার সেই দৃঢ়তা ছিল উধাও। ওপেনার তামিম ইকবাল দ্বিতীয় ইনিংসে অর্ধশতক হাঁকান। তবে টেস্টে দলের ভাল করতে হলে ব্যক্তিগত আরও লম্বা ইনিংস দেখানো চাই তার। ওয়ান ডে সিরিজ শেষে বোলিং অ্যাকশনে অভিযোগ নিয়ে দেশে ফিরতে হয় অফ স্পিন তারকা সোহাগ গাজীকে। তবে সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্টে বাংলাদেশ দলে অভিষেকে পাঁচ উইকেট নিয়ে প্রতিশ্রুতি দেখাচ্ছেন বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাউন্সি পিচ নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং তারকাদের মাথা ঘামছিল এত দিন। তবে প্রথম টেস্টে ক্যারিবীয় স্পিন বিষেই কুপোকাত হতে দেখা গেছে টাইগারদের। প্রথম ইনিংসে ১৮২ রানে অল-আউট হয় বাংলাদেশ। ক্যারিবীয় বাঁ-হাতি স্পিনার সুলিমান বেন ও অফ-ব্রেক বোলার জারমেইন ব্ল্যাকউড নেন এর ৭ উইকেট। টেস্ট ক্রিকেট প্রথমবার মাঠে গড়ায় ১৩৭ বছর আগে। এতে ৫০০ টেস্ট ম্যাচের কৃতিত্বটা ছিল কেবল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার। তৃতীয় দল হিসেবে এতে নাম উঠছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সর্বাধিক ৯৫২ টেস্ট খেলার রেকর্ড ইংল্যান্ডের। এ পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বাধিক ৭৬৭ টেস্ট খেলে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের নামের পাশে ৪৯৮ টেস্ট নিয়ে এবারের সিরিজে বাংলাদেশকে মোকাবিলা করছিল ক্যারিবীয়রা। এতে নিজেদের ৪৯৯তম ম্যাচে ১০ উইকেটের জয় নিয়ে নিশ্চয় তারা রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। তবে ৫০০তম ম্যাচে নামার আগে ক্যারিবীয় দলে রহস্য। শীর্ষ ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল খেলছেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য তাৎপর্যময় এ টেস্টে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড জানিয়েছে, কারণটা গেইলের ব্যক্তিগত। গায়ানার ২৭ বছরের লিয়ন জনসন এর আগে তিনটি ওয়ানডে খেললেও টেস্ট দলে এবারই প্রথমবার ডাক পেলেন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ৫০ ম্যাচে দু’টি সেঞ্চুরি নিয়ে জনসনের রানের গড় ৩৩.১৮। সেন্ট ভিনসেন্টে প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের হার নিয়ে সিরিজে ১-০-তে পিছিয়ে রয়েছে সফরকারী বাংলাদেশ। ম্যাচে দুই ইনিংসে ক্যারিবীয় ওপেনার ক্রিস গেইল করেন ৬৪ ও ৯ রান। আর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বল হাতে ১৭ ওভারে ৫০ রানে এক উইকেট পান গেইল। দ্বিতীয় টেস্টে ১৩ জনের ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে রয়েছেন শেন শিলিংফোর্ড ও জেসন হোল্ডার। সিরিজের প্রথম টেস্টে এ দুই স্পিন ও পেস বোলিং তারকা ক্যারিবীয় একাদশের বাইরে ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের হয়ে ক্যারিয়ারে ১০২ টেস্টে ৪২.০১ গড়ে ৭১৪১ রান ও ৭২ উইকেট ক্রিস গেইলের।
বাংলাদেশ দল: মুশফিকুর রহীম (অধিনায়ক, উইকেটরক্ষক), তামিম ইকবাল, শামসুর রহমান, এনামুল হক, মুমিনুল হক, মাহমুদুল্লাহ, নাসির হোসেন, শুভাগত হোম, তাইজুল ইসলাম, রুবেল হোসেন, আল আমিন হোসেন/রবিউল ইসলাম।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল: দিনেশ রামদিন (অধিনায়ক, উইকেটরক্ষক), সুলিমান বেন, জার্মেইন ব্ল্যাকউড, ক্রেইগ ব্রাথওয়েট, ড্যারেন ব্রাভো, শিবনারায়ণ চন্দরপল, কার্ক এডওয়ার্ডস, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, জেসন হোল্ডার, লিয়ন জনসন, কেমার রোচ, শেন শিলিংফোর্ড ও জেরম টেইলর।
টেস্ট ম্যাচের রেকর্ড
ম্যাচ দল হারজিৎ অভিষেক
৯৫২ ইংল্যান্ড ৩৫.৬০ ১৫ মার্চ ১৮৭৭
৭৬৭ অস্ট্রেলিয়া ৪৭.০৭ ১৫ই মার্চ ১৮৭৭
৪৯৯ ও.ইন্ডিজ ৩২.৩২ ২৩শে জুন ১৯২৮
৪৮৩ ভারত ২৫.৪২ ২৫শে জুন ১৯৩২
৩৯৪ নিউজিল্যান্ড ১৯.১৮ ১০ই জানু: ১৯৩০
৩৮৭ দ.আফ্রিকা ৩৬.৪৬ ১২ই মার্চ ১৮৮৯
৩৮২ পাকিস্তান ৩১.০৫ ১৬ই অক্টো: ১৯৫২
২৩৩ শ্রীলঙ্কা ২৯.৯৬ ১৭ই ফেব্রু: ১৯৮২
৯৪ জিম্বাবুয়ে ১১.৮২ ১৮ই অক্টো: ১৯৯২
৮৪ বাংলাদেশ ৪.৮২ ১০ই নভে: ২০০০