আজ থেকে আবারও স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে গাজার শিশুরা। ভোরবেলায় স্কুলগামী বাচ্চাদের কলরবে মুখর হয়ে ওঠে গাজার রাস্তাঘাট। রংবেরংয়ের নানা ইউনিফর্ম পরে নতুন উদ্যমে স্কুলের পথে রওনা দেয় তারা। কেউবা বাবা-মা’র সঙ্গে কেউবা ভাইবোনকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যায়। বিদ্যালয় ভবনের কোথাও দেয়াল আংশিক ভাঙা। কোথাও হয়তো ছাদের একাংশ নেই। এভাবেই শুরু হলো গাজার শিশুদের জ্ঞান আহরণের সংগ্রাম। অনেকের মধ্যে সেই আগের মতো উদ্যম নেই। অনেক শিশুর মনে বাসা বেধেছে গভীর বিষাদ। একরাশ হতাশা নিয়ে ১১ বছরের তামার তৌতাহ বললো, এখন আর আগের মতো স্কুলে আসার জন্য আনন্দ অনুভব করি না। মনে হয় কিছু একটা নেই। কয়েকজন সহপাঠীর কথা জানতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তাদের কেউবা মারা গেছে নয়তো আহত হয়েছে। আল জাইতুন বয়েজ এলিমেন্টারি স্কুলে ছাত্ররা যুদ্ধে নিহত সহপাঠীদের নামের স্টিকার লাগিয়েছে স্কুলে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জিয়াদ থাবেত জানালেন, বাচ্চাদের মন থেকে যুদ্ধের প্রভাব কাটিয়ে ধীরে ধীরে শিক্ষায় মনোনিবেশের বিষয়টা প্রাধান্য দেয়া হবে। সরকারি স্কুলগুলোতে প্রথম সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের সাইকোলোজিকাল কাউন্সিলিং দেয়া হবে। এছাড়া বাচ্চাদের জন্য ব্যবস্থা করা করে বিভিন্ন বিনোদনমূলক কর্মকা-। আর একাজ করার জন্য ১১হাজার শিক্ষক, ৩হাজার প্রিন্সিপ্যাল ও ব্যবস্থামনা কর্মীদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। ইসরাইলের সঙ্গে ৫০ দিনের ভয়াবহ যুদ্ধের পর নতুন করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনার অন্যরকম এক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে গাজাবাসী। ওই দুঃসহ ৫০ দিন কেড়ে নিয়েছে ২১০০ ফিলিস্তিনির প্রাণ। ইসরাইলি বর্বরতায় ধ্বংস হয়েছে শত শত বিদ্যালয় ভবন। সাম্প্রতিক যুদ্ধে পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে ২৬টি স্কুল। আরও ২৩২টি স্কুলে আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, আজ থেকে স্কুল খুলেছে। সরকারি স্কুলগুলোতে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে ২ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী ও জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে ২ লাখ ছাত্রছাত্রী শিক্ষারত। এছাড়াও হাজার হাজার শিক্ষার্থী বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। তাদেরও কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত বিদ্যালয় ভবনগুলোর মেরামত কাজ ও যুদ্ধের ফলে গৃহহীন হয়ে পড়া হাজার হাজার মানুষের অস্থায়ী আবাস হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় কারণে দুই সপ্তাহ পর স্কুলগুলো খুললো। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, জাতিসংঘ পরিচালিত বিভিন্ন বিদ্যালয় ভবনে এখনও ৫০ হাজার মানুষ রয়েছে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, তারা সরকারি স্কুলগুলোর জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার স্কুলব্যাগ ও অন্যান্য শিক্ষার সরঞ্জাম সহায়তা দিচ্ছে।