স্বয়ংক্রিয় গাড়ির প্রযুক্তি আগেই তৈরি করেছেন প্রকৌশলীরা। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি সুবিধা। একই ধরনের দুটি গাড়ির মধ্যে থাকবে পারস্পরিক স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ। এই বিশেষ প্রযুক্তি সম্পূর্ণ তারবিহীন। এটি ব্যবহারের ফলে প্রথম গাড়িটির নির্দেশনা অনুসরণ করে দ্বিতীয়টি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলবে। প্রকৌশলীরা দাবি করছেন, এতে জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি দুর্ঘটনা কমবে।
ধারণা করা হচ্ছে, গাড়ির স্বয়ংক্রিয় চলাফেরার ক্ষেত্রে এই নতুন প্রযুক্তি হাতের নাগালে চলে আসবে অনেকের প্রত্যাশার চেয়েও তাড়াতাড়ি। যু্ক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েটে অনুষ্ঠিত আইটিএস ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস সম্মেলনে এই প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক প্রদর্শনী হয়েছে সম্প্রতি।
স্বয়ংক্রিয় গাড়ির প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রকৌশলীরা তৈরি করেছেন গাড়িগুলোর পারস্পরিক যোগাযোগের ব্যবস্থা। গাড়ি নির্মাতা ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ওই দুটি প্রযুক্তি সংযুক্ত করে যানবাহনের নিরাপত্তা ও সুবিধা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল মোটর কোম্পানি, জাপানের হোন্ডা মোটর কোম্পানি এবং অন্যান্য গাড়ি নির্মাতা ট্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। প্রযুক্তিনির্মাতা প্রতিষ্ঠান গুগল এবং অ্যাপল তাদের সহায়তা করছে। গুগল ইতিমধ্যেই চালকবিহীন গাড়ির প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আর গাড়ির ভেতরে তথ্য সরবরাহ এবং অধিকতর শক্তিশালী যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা দিচ্ছে অ্যাপল। স্মার্ট-পার্কিং প্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান পার্ক মোবাইলের কর্মকর্তা লরেন্স একেলবুম বলেন, অ্যাপল, গুগল, গাড়ি নির্মাতা এবং তথ্য-উপাত্ত সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে বড় ধরনের পরিবর্তন শুরু হয়েছে। দুই বছর আগেও যা ছিল অকল্পনীয় প্রতিশ্রুতি, এখন সেটা বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।
গাড়িগুলো যখন তারবিহীন যোগাযোগপ্রযুক্তি এবং কম্পিউটারনিয়ন্ত্রিত থামার ব্যবস্থা বা ব্রেক ব্যবহার করবে, তখন মহাসড়কে সেগুলো দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলতে পারবে। এই প্রযুক্তি আগামী বছর থেকেই বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে গাড়িপ্রতি খরচ পড়বে প্রায় দুই হাজার মার্কিন ডলার। যু্ক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং স্বয়ংক্রিয় চালকপ্রযুক্তি সংযোজনের জন্য গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শত শত কোটি ডলার খরচ করতে হবে। স্বয়ংক্রিয় বা চালকবিহীন গাড়ি ২০২০ সালের মধ্যে রাস্তায় নামানোর ব্যাপারে আশা করা হচ্ছে।
তবে গাড়ির সঙ্গে গাড়ির ভার্চুয়াল যোগাযোগের নতুন এই প্রযুক্তির নির্ভরযোগ্যতা, তথ্যপ্রযুক্তিগত নিরাপত্তা (সাইবার সিকিউরিটি) এবং আইনি নিরাপত্তার ব্যাপারে কিছু ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ইনসিউরেন্স পলিসি অ্যান্ড রিসার্চ বলছে, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি যদি দুর্ঘটনায় পড়ে, তখন কী হবে? ক্ষয়ক্ষতির দায় নেবে কে? দূর থেকে নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি নাকি গাড়িটির নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান? এসব প্রশ্নের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাই চালকবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে দেওয়ার আগে নিরাপত্তা ও আইনি বিষয়ের একটি দীর্ঘ তালিকার মুখোমুখি হতে হবে কর্তৃপক্ষকে।
নতুন প্রযুক্তির গাড়ির দামের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। স্বয়ংক্রিয় ও পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়িগুলোর দাম সাধারণ গাড়ির চেয়ে অন্তত দুই থেকে তিন গুণ বেশি পড়তে পারে। আর স্বয়ংক্রিয় গাড়ির প্রযুক্তি ব্যবহৃত হতে শুরু করলেই যে চালকদের কাজ ফুরিয়ে যাবে, তা নয়। স্মার্ট ক্রুইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র জিম কেইন বলেন, ‘আমরা স্বয়ংক্রিয় গাড়ি চালনার বৈশিষ্ট্য নিয়ে কথা বলছি, স্বাধীন গাড়ি চালনা নিয়ে নয়। নতুন যে প্রযুক্তিই আসুক না কেন, আমরা চালকদের সার্বক্ষণিক সতর্ক এবং ব্যস্ত রাখার কৌশলগুলো অবশ্যই কার্যকর রাখব।’
রয়টার্স।