সদ্য প্রকাশিত বই নিয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, আমি খুব দুঃখ পেলাম। কারণ রিজভীকে আমি আমার ছোট ভাইয়ের মতো মনে করি। তার অনেক লেখা-পড়া আছে। সে যে মন্তব্য করেছে আমি এটা তার কাছ থেকে আশা করিনি। পুরো বই পড়লে সে অনুতপ্ত হবে। নিজের বাড়ি নিয়ে সমস্যা তৈরির অনেক আগেই এ বই লেখা হয়েছে বলেও দাবি করেন সাবেক এই আইন মন্ত্রী। সুপ্রিম কোর্ট এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। ওয়ান ইলাভেনের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থ ‘বাংলাদেশ: ইমারজেন্সি অ্যান্ড দ্য আফটারম্যাথ: ২০০৭-২০০৮’ নিয়ে এরইমধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সোমবারই এক সংবাদ সম্মেলনে এ বইয়ের জন্য মওদুদ আহমদের তীব্র সমালোচনা করেন। বাড়ি রক্ষা করতে সরকারকে সন্তুষ্ট করার জন্য মওদুদ আহমদ এ বই লিখেছেন কি-না সে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। রহুল কবির রিজভীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের আরও বলেন, বই লেখা এক জিনিস। এটা একটা কঠিন কাজ। বিশেষ করে সম-সাময়িক রাজনীতির ওপর কোনো বই লেখা খুবই কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। তিনি বলেন, আমি ভেবেছিলাম আমার দল বা দলের নেতা-কর্মীরা এপ্রিসিয়েট করবে এবং আমিতো ভেবেছিলাম রিজভী আমাকে অভিনন্দন জানাবে, ধন্যবাদ জানাবে এই ধরণের একটি বই লেখার জন্য। কারণ আমি যেটা ভয় করেছিলাম, বইটা বের হওয়ার পরে সরকার আমার উপর অসন্তুষ্ট হবে। হয়তো আমাকে আবার জেলখানায় যেতে হতে পারে। বইটি যদি পড়া হয় তাহলে দেখা যাবে ২০০৭-২০০৮ সালে মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার কিভাবে রাজনীতিবিদদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করেছে এবং মানবাধিকার লঙন করেছে। বিশেষ করে শেষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্য বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছে। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সহায়তার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তারই বিবরণ বইতে দেয়া আছে। এখন দেখছি ফল উল্টো। আমার দল সম্পর্কে বা আমার দলের যে ব্যর্থতা বা আমরা যে পরাজিত হলাম এর অনেকগুলো কারণ আমার বইতে দেয়া আছে। পত্রিকাগুলো তাদের পলিসি অনুযায়ী সংবাদ প্রকাশ করেছে। নির্বাচন যে হয়েছে ২০০৮ সালে সেখানে বলা আছে এটা কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। কিভাবে কারচুপি হয়েছে তা বলা আছে। এগুলোর বৃত্তান্ত দেয়া আছে। এটাই মুল প্রতিপাদ্য বিষয়। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এ বইতে আমার যে অভিব্যক্তি দল সম্পর্কে সেটা আমার ব্যক্তিগত। এটারসঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। যখন আমি বই লিখি তখন দলীয় ব্যক্তি হিসেবে বই লিখি না। আমি একজন রাষ্ট্র বিজ্ঞানী হিসেবে বই লিখি। সব বইতে বস্তুনিষ্ট ভাবে দেশের ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করি। আমাদের ব্যর্থতার যে সব কারণ গুলো চিহ্নিত হয়েছে সেগুলো যদি অনুসরণ করি এবং চেষ্টা করি সংশোধন করতে তাহলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আবার ক্ষমতায় আসবে। এটাই মুল বার্তা। তিনি বলেন, আমার বাড়ির ব্যাপারে বলবো। বইটা লিখেছি অনেক আগে। যেহেতু আমি রাজনীতি করি, আমি বিরোধী দলের নেতা এবং বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আজকে আমাকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করার জন্য সরকার একটা প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রক্রিয়া শুরু করেছে ২০১২ সালে। আর বইটা লেখা হয়েছে ৬/৭ বছর আগে। সুতরাং এটার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। বাড়ি বা সরকারকে সন্তুষ্ট করার প্রশ্নই উঠে না। আমার বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা আছে। বাড়ির মামলা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। বইয়ের কোনো মতামতের সম্পর্কে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই।