প্রশ্ন করার আগেই মাইক্রোফোন হাতে তুলে নিলেন নাভিদ আলম। সুদূর ইনচনে এসে কোরিয়ানদের যে সমর্থন পেলেন, তাতে আবেগাপ্লুত কোচ। বাংলাদেশ দলকে সমর্থন জানানোয় ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে ধন্যবাদ দিলেন কোরিয়ান সমর্থকদের।
বাংলাদেশ দল কী, সারাক্ষণ তো ‘মিমো মিমো’ বলেই চিৎকার করে গেল খেলা দেখতে আসা স্থানীয় একটি স্কুলের ছাত্রীরা! কেউ কেউ ‘মিমো, আই লাভ ইউ’ বলতেও ছাড়ল না। তা ইনচনে এসে কীভাবে এত জনপ্রিয়তা পেয়ে গেলেন বাংলাদেশের হকি খেলোয়াড় পুষ্কর খীসা মিমো!
মিমোর প্রতি স্কুলছাত্রীদের এ আগ্রহ আসলে কাল সেনহাক হকি স্টেডিয়ামে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচে তাঁর খেলা দেখে। বারবার অতর্কিত হামলা চালিয়ে মিমো ছত্রখান করে দিচ্ছিলেন সিঙ্গাপুরের রক্ষণভাগ। তবে এমন নয় যে, তিনি একাই তা করছিলেন। প্রথম কোয়ার্টারের শুরুর মিনিট পাঁচেক বাদ দিলে পুরো ম্যাচই ছিল বাংলাদেশ দলের নিয়ন্ত্রণে! যেটির অবধারিত ফল—দ্বিতীয় কোয়ার্টারে বাংলাদেশের দুই গোলে এগিয়ে যাওয়া। ২২ মিনিটের সময় মাইনুল ইসলাম কৌশিকের কাছ থেকে বল পেয়ে তা মিমোর দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন কৃষ্ণ। কিছুটা ফাঁকায় বল পেয়ে সহজেই গোল করেন মিমো। এর মিনিট তিনেক পর পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে দলের পক্ষে দ্বিতীয় গোলটি করেন খোরশেদ। শেষ কোয়ার্টারে সিঙ্গাপুর একটা গোল পরিশোধ করে দেওয়ার পর অবশ্য কিছুটা এলোমেলো লাগছিল বাংলাদেশকে। তবে কোনো অঘটন ঘটার আগেই শেষ হয়ে যায় ম্যাচ। অবশ্য বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা একের পর এক গোল মিসের মহড়া না দিলে জয়ের ব্যবধান আরও বড়ও হতে পারত।
গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে জাপানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল কেমন খেলেছিল, সেটা স্কোর লাইন দেখলেই বোঝা যায়—জাপান ৮, বাংলাদেশ ০। পরের ম্যাচে মালয়েশিয়ার কাছে ৫-১-এ হারলেও অবশ্য খুব একটা খারাপ খেলেনি বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের খেলায় ধারাবাহিক উন্নতি দেখা গেল কাল সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচে। ম্যাচটা জেতায় অন্তত এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত যে, এবারের ফলাফল গত এশিয়াডের চেয়ে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা নেই। শেষ ম্যাচে শক্তিশালী কোরিয়ার বিপক্ষে হার অবধারিত ধরে নিলেও স্থান নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত হবে সপ্তম বা অষ্টম। গুয়াংজুর গত আসর থেকে অষ্টম হয়েই ফিরেছিল বাংলাদেশ হকি দল।
কাল বাংলাদেশ যে সিঙ্গাপুরকে ছয়-সাত গোলের ব্যবধানে হারাতে পারল না, সেটা একটা বিস্ময়ই। কোচ নাভিদ আলমের হিসাবে তো অন্তত সাতটা গোল হওয়া উচিত ছিল। কোচের দৃষ্টিতে সেটা না হওয়ার কারণ, ‘ধৈর্য না ধরে ওরা গোলের জন্য তাড়াহুড়া করছিল।’ তবে একটা কথা ভেবে ন্যূনতম ব্যবধানে জেতাতেই বরং খুশি তিনি। ‘৫-৬ গোলে জিতে গেলে দেখা যেত পরের ম্যাচে ওরা গা ছেড়ে দিয়েছে। ফলাফলটা ২-১ হওয়ায় বরং পরের ম্যাচে ওরা সতর্ক থাকবে’—হাসতে হাসতে বলছিলেন নাভিদ আলম।
পাশে বসে হাসছিলেন মিমোও। তাঁর হাসির একটা কারণ, ইনচনের কিশোরীদের মনোযোগ কাড়া নিয়েও যে প্রশ্ন হলো! লাজুক হেসে কোনোরকমে সেসব প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও মিমো স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশ দলের হয়ে পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে বিদেশের মাটিতে আগে কখনো এ রকম সমর্থন পাননি। মিমোর সঙ্গে কোরিয়ানদের চেহারায় মিলও হয়তো এর একটা কারণ।
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচে গোল ব্যবধানের প্রসঙ্গ উঠতেই অবশ্য হাসি মিলিয়ে গেল মিমোর। কণ্ঠে তখন আশাভঙ্গের বেদনা, ‘সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে আমাদের ৫-৬ গোলের ব্যবধানে জেতার আশা ছিল। কিন্তু আমরা অনেক গোল মিস করেছি।’ ২৭ সেপ্টেম্বর স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে গ্রুপপর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। দুদলের শক্তির পার্থক্যটা এতই বেশি যে, মিমোর কণ্ঠে বাস্তবতা মেনে নেওয়ার সুর, ‘আমাদের লক্ষ্য থাকবে পরাজয়ের ব্যবধান যতটা সম্ভব কমানো।’ এ ছাড়া আর কিই বা করার আছে! দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ, সেদিন যে মিমোভক্ত স্কুলছাত্রীরাও থাকবে না বাংলাদেশের পাশে!