সাইমুর: নারায়নগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রশি ও বস্তা বিক্রয়কারী দুই দোকানি। যারা খুনের ঘটনায় লাশ গুম করার জন্য ব্যবহূত বস্তা ও রশি র্যাব-১১ সদস্যদের কাছে বিক্রি করেছিলেন। দেকানিরা হলেন— হাজি আব্দুল মতিন ও শাহজাহান হোসেন সাজু। দুজনই আদমজী সোনামিয়া মার্কেটের দোকানদার। বুধবার দুপুরে নারায়নগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম শফিকুল ইসলামের আদালতে তারা সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি দিয়েছেন। এ নিয়ে সাত খুনের ঘটনায় ১২ জন সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর দিকে কলকাতায় গ্রেফতার হওয়া নূর হোসেনের সহযোগী খান সুমন আজ দমদম কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
সাত খুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ জেলা ডিবি ওসি মামুনুর রশিদ মন্ডল বলেন, সাত খুনের পর লাশ ইট দিয়ে বেঁধে নদীতে ফেলতে ব্যবহূত রশি ও বস্তা ঘটনার দিন রাতে র্যাব সদস্যরা কিনোছিলেন বলে দোকানদার হাজী আব্দুল মতিন ও শাহজাহান সাজু স্বীকার করেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনার দিন গত ২৭ এপ্রিল রাতে র্যাব-১১-এর পেশাকধারী র্যাব সদস্যরা হাজী আব্দুল মতিনের কাছ থেকে ১৬টি বস্তা ও সাত কেজি ( ৫ কেজি মোটা ও ২ কেজি চিকন) রশি কেনেন। তারা ১৬টি বস্তা ৩২০টাকা ও ৭ কেজি রশির মূল্য রাখেন ৩৫০ টাকা।
সাত খুন মামলার তদন্ত সূত্র জানায়, সাত খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন র্যাব-১১-এর সাবেক ১০ সদস্যসহ ২৩ জন। এদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন র্যাবের ১০ সদস্যসহ ১২ জন। অপর দিকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন ১২ জন। যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন, তারা হলেন-র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার এম এম রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, হিরা মিয়া, সিপাহী আবু তৈয়ব আলী, আরিফ হোসেন, কনস্টেবল শিহাবউদ্দিন ও এস আই পূর্ণেন্দু বালা। এদের মধ্যে ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন (৪৭) গত ৫ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে ব্লেড দিয়ে নিজের গলা ও পেট কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এ ছাড়া, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের দুই সহযোগী আলী মোহাম্মদ ও চার্চিল। অপর দিকে, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন র্যাব-১১-এর সাবেক ৯ সদস্যসহ ১২ জন।
নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমারসহ সাত জন অপহূত হন গত ২৭ এপ্রিল। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে ৬ জনের এবং ১ মে আরেকজনের লাশ ভেসে ওঠে। এ ঘটনায় নূর হোসেনসহ ৬ জনকে আসামি করে ফতুল্লা থানায় মামলা করেন নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম।
ঘটনার পরই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কলকাতায় পালিয়ে যায় নূর হোসেন। গত ১৪ জুন রাতে নেতাজি সুভাস চন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বাগুইহাটি এলাকার একটি বাড়ি থেকে পশ্চিমবঙ্গের স্পেশাল টাস্কফোর্সে গ্রেফতার করে নূর হোসেনকে তার দুই সহযোগী খান সুমন এবং ওহিদুজ্জামান শামীমকে। তাদের বিরুদ্ধে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স আইনে মামলা করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রথম দয়ায় খান সুমন ও ওহিদুজ্জামানে পক্ষে পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত বিভাগীয় হাকিমের আদালতে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা না মঞ্জুর করে। পরে তারা পৃথক ভাবে বারাসাত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। গত ১৮ আগষ্ট জেলা ও দায়রা জজ খান সুমনের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। বুধবার বিকালে কলকাতার দমদম কারাগার থেকে মুক্তিপান খান সুমন।