অস্ত্র তৈরির বদলে বিশ্ববাসীকে শিক্ষাখাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ এবং পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, সমরাস্ত্রের জন্য কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যয় না করে তা শিক্ষা খাতে ব্যয় করুন।
বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘ মহাসচিবের শিক্ষাক্ষেত্রে বৈশ্বিক উদ্যোগের উচ্চপর্যায়ের এক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি ও অহিংসার সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে হবে। আমরা যে পৃথিবী চাই তা গড়তে হলে সমরাস্ত্র তৈরিতে যে শত কোটি টাকা ব্যয় করছি তা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষার জন্য ব্যয় করতে হবে।
তিনি বলেন, সবার জন্য শিক্ষা ও লিঙ্গ সমতা আনার ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য আমাদের সহায়তা করেছে। ২০১৫ সালের পর আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পাবে মানসম্মত শিক্ষা।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ১২ কোটি তরুণ ও কর্মঠ জনশক্তি তৈরি হবে। মেধার বিকাশ ঘটিয়ে তাদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। সে লক্ষ্য নিয়েই ২০১০ সালে বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মানসম্মত শিক্ষার জন্য মানসম্মত শিক্ষক প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে সরকার প্রায় ১০ লাখ শিক্ষককে মানসম্মত শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এসব শিক্ষকদের মূল্যায়ন করা হয়েছে তাদের কাজের মানের ভিত্তিতে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের মধ্যে ৬০ শতাংশ প্রশিক্ষিত নারী শিক্ষকদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী স্বল্প আয়ের দেশে মানসম্মত শিক্ষার জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যবই ও আধুনিক শিক্ষাক্রম নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেন, বাংলাদেশে শুধু ২০১৪ সালেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩১ কোটি ৮০ লাখ পুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। একটি নতুন শিক্ষা পাঠ্যক্রম এবং সৃজনশীল মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষায় মূলধারার বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করে আধুনিয়ান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে মাধ্যমিক থেকে স্নাতক পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই নারী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীশিক্ষা গুণগত শিক্ষার অন্যতম একটি স্তম্ভ। গুণগত শিক্ষার জন্য যথাযথ উপকরণ প্রয়োজন। চলতি বছরের বাজেটে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, গুণগত শিক্ষার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞানের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। সে কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে একটি প্রযুক্তি নির্ভর সমাজ গঠনে শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিগত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
মানসম্মত প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়ে বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে জন্য সরকার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছে। তাছাড়াও নবীন শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।