সক্রিয় সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিষ্ক্রিয় ও মানসিক চাপে রাখতেই গুম-খুনে মেতে উঠেছে সরকার। গুম-খুনের মাধ্যমে অবৈধ সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। রাষ্ট্র পরিকল্পিতভাবে এসব করছে কেবল রাজনৈতিক কারণে। এর সঙ্গে জড়িতরা অদৃশ্য নয়, সবাই দৃশ্যমান। তাদের বিচার একদিন হবেই। এর বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে মানুষ ঘরে থাকলে খুন হচ্ছে, বাইরে গেলে গুম হচ্ছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক আলোচনা সভায় রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এমন অভিযোগ করেন। ‘গুম রাজ্যে প্রত্যাবর্তন-গণতন্ত্রের শবযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে স্বাধীনতা প্রজন্ম বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় সংসদ। আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, গুম-খুনের সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের বিচার হবেই। এই প্রতিজ্ঞা করলাম। সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, এখন ক্ষমতায় টিকিয়ে থাকতে এ ধরনের কাজ করছে। তিনি বলেন, অবৈধ সরকার নিজেদের স্বার্থে আইন করছে বেআইনিভাবে সংসদে বসে। তারা কোনভাবেই আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাখে না। ইতিহাস সাক্ষী জনগণের আন্দোলনের কাছে সবকিছুই পরাজিত হয়। পুলিশের বন্দুক, টিয়ারশেল, কোন কিছুই নিরস্ত্র জনগণের দুর্বার আন্দোলনের কাছে পরাজিত হয়। সেই জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশের এই গুম-খুন সব সরকারের আমলেই হয়েছে। এটা বিএনপি অস্বীকার করতে পারবে না। গণতন্ত্র শবযাত্রা কথাটি সম্পূর্ণ ঠিক না হলেও দেশ আজ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। হঠাৎ করে একজন নিখোঁজ হয়ে গেলো আর সে মানুষটি জীবিত না মৃত সেটা তার স্বজনরা জানতে পারছে না। তার চেয়ে ভয়াবহতা আর কি হতে পারে। তিনি বলেন, গুম-খুন হওয়া স্বজনদের কথাগুলোকে একটি ভিডিও সিডি তৈরি করে সারা দেশের মানুষের কাছে প্রচার করা প্রয়োজন। গুম-খুন হওয়া স্বজনদের ব্যথা বেদনার কথা শুনে সারাদেশের মানুষ কাঁদুক। মান্না বলেন, ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন হয়নি, ভণ্ডামি করেছে। তাই এই সরকারকে আমি নির্বাচিত সরকার বলতে পারি না। অনির্বাচিত এ সরকার জনগণের দিকে না তাকিয়ে তারা এখন ব্যস্ত সারা বিশ্বে প্রমাণ করতে যে, তারা দেশ খুব ভালো চালাচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দল আরেকটি রাজনৈতিক দলকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। বিচারপতিদের দাস বানিয়ে ফেলা হলো কিন্তু রাজনৈতিক দলে ঐক্যবদ্ধ হতে পারলো না। এটা খুবই দুঃখজনক। বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেন, সরকার যেসব অন্যায় কাজ করছে তার বিরুদ্ধে আপনারা (বিএনপি) প্রতিবাদ করুন কিন্তু হঠকারিতায় যাবেন না। হঠকারিতার ফলাফল ভালো হয় না। হঠকারিতায় জাসদ শেষ হয়ে গেছে। গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, গুম-খুন গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। প্রথম দিকে যেসব গুম-খুনের ঘটনা ঘটেছে আমরা সেগুলোর প্রতিবাদ জানালেও পরে তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যায়নি। বিএনপির মধ্যে আগে গণতান্ত্রিকতা আনতে হবে তাহলে আন্দোলন বেগবান হবে। না হয় আন্দোলন প্রেক্ষাপট তৈরি করা যাবে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করতে হলে বিভিন্ন সম্মানিত ব্যক্তিদের নিয়ে একদফা আন্দোলনের ডাক দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সুকুমার বড়ুয়া বলেন, সঠিক রোড ম্যাপের কারণে বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে না। আগে আন্দোলনের সঠিক রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে তারপর আন্দোলন। সংগঠনের সভাপতি এস এম সায়মন কামালীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার প্রমুখ।