নিজেদের দেশে খেলা বলে ছয়মাস আগ থেকেই ভারতে গিয়ে স্থানীয় কোচ শ্রীনিবাস রেড্ডির তত্ত্বাবধানে অনুশীলন করেন কোরিয়ার কাবাডি খেলোয়াড়রা। ভারতীয় কোচ দারুণ শিখিয়েছেন তাদের। বিশেষ করে বোনাস পয়েন্টে কিভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তাই যেন রপ্ত করেছে কোরিয়ান মেয়েরা। অবশ্য এতেও কাজ হয়নি। গুয়াংজুর নানশা জিমনেশিয়াম থেকে ইনচনের সংদো গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম। চার বছর পর ফের দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে পদক নিশ্চিতের উল্লাস মেতে ওঠেন শাহনাজ পারভীন মালেকারা। বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেটারদের পর ইনচনে লাল সবুজের পতাকা আরও একবার ওড়ানোর উপলক্ষ এনে দিতে যাচ্ছে মহিলা কাবাডি দল। গতকাল স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়াকে তিনটি লোনাসহ ৩০-১৮ পয়েন্টে হারিয়ে সেমিফাইনাল প্রায় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। গ্রুপের অপর ম্যাচে আজ দক্ষিণ কোরিয়া ভারতের কাছে হারলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ব্রোঞ্জ পদক নিশ্চিত হবে মহিলা কাবাডি দলের। সেমিতে ইরান বা থাইল্যান্ডকে পাবে বাংলাদেশ। সেখানেও জয়ের ব্যাপারে প্রত্যয়ী মেয়েরা। আর তাই রৌপ্যের স্বপ্ন তাদের চোখে। এদিকে পাকিস্তানের কাছেও লজ্জাজনক ভাবে হেরেছে পুরুষ কাবাডি দল। টিকে থাকার লড়াই বাংলাদেশ দল হেরেছে ১১-২৪ পয়েন্টে।
গতকাল ম্যাটে নামার পরই বেশ নার্ভাস মনে হচ্ছিলো বাংলাদেশ মহিলা কাবাডি দলের খেলোয়াড়দের। সুযোগটা ভালভাবেই কাজে লাগিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। ভারতীয় কোচের টেকনিকে শুরুর দশ মিনিটেই ৭টি বোনাস পয়েন্ট সংগ্রহ করে তারা। তবে মালেকা-পলিদের অভিজ্ঞতায় আস্তে আস্তে খেলার নিয়ন্ত্রণ চলে আসে বাংলাদেশের হাতে। এতেই স্বাগতিক সমর্থকদের উল্লাস মিইয়ে যেতে থাকে দ্রুত। প্রথমার্ধেই ১৪-১১ পয়েন্টে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধে আর ১৬ পয়েন্ট পায় মালেকারা। এই অর্ধে পাওয়া ১৬ পয়েন্টের মধ্যে দু’টি লোনায় চার এবং একটি টেকনিক্যাল পয়েন্ট রয়েছে। বাকিগুলো এসেছে ক্যাচ ও রেইডের মাধ্যমে। বড় ব্যবধানে ম্যাচটি জিতলেও বোনাস পয়েন্টের দুর্বলতা কোনভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছে না বাংলাদেশ। ভারতের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচেও বোনাস পয়েন্টের কারণেই বড় ব্যবধানে হারতে হয়েছে মালেকাদের। এ খেলায়ও নয়টি বোনাস পয়েন্ট সংগ্রহ করে নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। এদিক দিয়ে পিছিয়ে জুনি চাকমা, রুপালী আক্তাররা।
৩০ পয়েন্টের মধ্যে মাত্র একটি এসেছে টেকনিক্যাল থেকে। কেন এমনটা? তার উত্তরে ফাতেমা আক্তার পলি বলেন, ‘এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদক অক্ষুণ্ন রাখতে পেরে আমরা খুশি। কোরিয়ার মেয়েরা ভারতে গিয়ে ছয় মাস আবাসিক অনুশীলন করেছে। সেখানে তারা জিম করেছে। তাই তাদের হাত ও পায়ের মাংসপেশী অনেক শক্ত। তাই তারা বোনাস পয়েন্ট নিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে, যা আমরা পারি না। একটি জিম থাকলে খুব ভালো হতো। আমাদের শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে পারতাম।’
বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের শেফ দ্য মিশন শেখ বশির আহমেদ মামুন বলেন, ‘রুপার পর ব্রোঞ্জ নিশ্চিত হয়েছে। এরপর আমরা স্বর্ণপদকের জন্য পুরুষ ক্রিকেটারদের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। আশা করি সাকিবরা আমাদের হতাশ করবে না।’ মহিলা ক্রিকেটারদের প্রত্যেককে একশ’ ডলার দিয়েছেন শেফ দ্য মিশন। এবার কাবাডি খেলোয়াড়দের ওই সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন। আর টানা ব্যর্থতায় পুরুষ কাবাডি দলকে ঢেলে সাজানোর কথা বলেছেন শেখ বশির। গতকাল একই ভেন্যুতে পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ শেষে তিনি এই ঘোষণা দেন। যদিও পাকিস্তান-লজ্জায় নানা রকম যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন বাংলাদেশের কোচ আবদুল জলিল। তার দাবি ম্যাচের শুরু থেকেই রেফারি বাংলাদেশের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন। রেফারিজ কমিটির চেয়ারম্যান পাকিস্তানি হওয়াতেই রেফারিরা আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই বড় ব্যবধানে হার। তবে কোচের এসব কথা আমলে নিতে রাজি নন কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। এশিয়ান গেমসে বিচারক হয়ে আসা নজরুল বলেন, দু’-একটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গেলেও ম্যাচে আমরা খুব বাজে খেলেছি। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই নাকি এসব বলে বেড়াচ্ছেন জলিল। এদিকে সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হওয়া বাংলাদেশ দল আগামী বৃহস্পতিবার গ্রুপের শেষ ম্যাচে থাইল্যান্ডের মুখোমুখি হবে।