ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার ও তার ফাঁসির দাবিতে উত্তাল সারা দেশ। গতকাল দিনভর বিক্ষোভ হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। ধর্মপ্রাণ মানুষের এসব বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তার গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি করা হয়েছে। ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার না করলে ২৬শে অক্টোবর সারা দেশে হরতালের ডাক দিয়েছে সম্মিলিত ইসলামী দল। গ্রেপ্তার না করলে ঈদের পর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ২০ দলীয় জোট। এদিকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশালে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে তার বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন আদালত। লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার দাবিতে আজ ঢাকায় এবং আগামীকাল সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে হেফাজতে ইসলাম। এদিকে মন্ত্রিসভা থেকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণের বিষয়ে ধূম্রজাল থাকলেও গতকাল তা পরিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মেক্সিকোতে মন্ত্রী হিসেবে তার একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা ছিল। তিনি এতে অংশ নেননি। এতে প্রমাণ হয় তার অব্যাহতি কার্যকর হয়েছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এদিকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর গ্রেপ্তার দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইসলামী দল। এসব সমাবেশ থেকে লতিফ সিদ্দিকীর গ্রেপ্তার ও ফাঁসি দাবি করা হয়। এদিকে দেশব্যাপী বিক্ষোভ আর প্রতিবাদ অব্যাহত থাকলেও লতিফ সিদ্দিকী বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন না। তিনি যা বলেছেন, একজন আধুনিক মানুষ হিসেবে জেনে বুঝেই বলেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী বললে তিনি তার সম্মানে বক্তব্য প্রত্যাহার করতে পারেন।
কোর্ট রিপোর্টার জানান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ঢাকা মেট্রোপলিটান আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এএমএম আবেদ রাজা এবং মো. বাদল মিয়া নামে পূর্ব ইসলামবাগের এক চামড়া ব্যবসায়ী গতকাল সকালে ঢাকার হাকিম আদালতে মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করেন। মামলা দু’টি আমলে নিয়ে লতিফ সিদ্দিকীকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আবেদ রাজার মামলার শুনানি হয় মহানগর হাকিম মিজানুর রহমানের আদালতে। তিনি মামলা আমলে নিয়ে ২৮শে অক্টোবর লতিফ সিদ্দিকীকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। বাদল মিয়ার মামলার শুনানি হয় মহানগর হাকিম রেজাউল করিমের আদালতে। তিনি ৩০শে অক্টোবর লতিফ সিদ্দিকীকে হাজির হতে সমন জারির নির্দেশ দেন।
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে জানান, আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ৪টি মামলা করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে মুখ্য মহানগর আদালতে পৃথকভাবে এসব মামলা করা হয়। এতে তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার বাদীরা হলেন আবদুস সাত্তার, ইফতেখার মহসিন চৌধুরী, কাউসার পারভীন হক ও মোহাম্মদ কাইয়ূম। তারা সবাই পেশায় আইনজীবী। এই সময় আদালতে হাকিম ছিলেন মশিউর রহমান ও আহম্মদ ছফা। আদালত সূত্র জানায়, আগের দিন লতিফ সিদ্দিকীর কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রাম সব বয়সী মানুষ ও ধর্মের লোকজনের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই সময় মন্ত্রিসভা থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হয়। গতকাল ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ৪ আইনজীবী আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে এসব মামলায় কবে তাকে হাজির হতে হবে সেই বিষয়ে কোন আদেশ দেননি বিচারকরা। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সাবেক স্পেশাল পিপি এডভোকেট কামরুল ইসলাম চৌধুরী সাজ্জাদ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আইনের ২৯৫ (এ) ধারায় মামলা হয়েছে বলে জানান। বিচারক ২৩শে অক্টোবর আদালতে হাজির হতে তার বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। মামলা করার বিষয়ে একটি মামলার আইনজীবী ইফতেখার মহসিন চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সুস্থ মানুষ নন। তিনি যে সব বক্তব্য দিয়েছেন তা যে কোন ধর্মের লোককে আঘাত করতে পারে। কেননা মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ হজকে তাদের শ্রেষ্ঠ কর্ম বলে মনে করেন। এই বিষয়ে তার এমন বক্তব্য সত্যিই কষ্টদায়ক। বিবেকের তাড়না থেকে তাই মামলা করতে বাধ্য হয়েছি। আরেকটি মামলার বাদী আবদুস সাত্তার বলেন, খবরটি শোনার পর আর স্থির থাকতে পারিনি। তার দেয়া বক্তব্য সংগ্রহ করে একাধিবার শোনার পর মনে হয়েছে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এই ধরনের বক্তব্য প্রকাশ্যে দেয়ার পর কোন ব্যক্তি তাকে ভাল বলবে কিনা সন্দেহ। আদালত চাইলে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড একসঙ্গে দিতে পারেন তাকে।
সিলেট অফিস জানায়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এনে বক্তব্য দেয়ায় আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে সিলেটের আদালতে মামলা হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে সিলেট মহানগর মুখ্য হাকিম-১ এর আদালতে মামলা করেন জেলা বারের আইনজীবী মাসুদুর রহমান খান মুন্না। মামলার শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। মামলার পর আইনজীবী মাসুদুর রহমান খান মান্না সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানায় আমি সংক্ষুব্ধ হয়ে আদালতে এ মামলা করেছি। আদালত আমার জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন। এদিকে, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশকে তদন্তপূর্বক আগামী ২০শে অক্টোবরের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, বরিশালের হাকিম আদালতে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন সাইফুল আলম ফুয়াদ নামের এক আইনজীবী। সাইফুল আলম আদালতকে বলেন, মন্ত্রী লতিফ হজ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন। হাকিম নূসরাত জাহান তার জবানবন্দি শুনে বিষয়টি আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন।
প্রধানমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে অব্যাহতি দিয়েছেন: আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ। গতকাল ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ ধরনের বক্তব্যকে কখনও সমর্থন করে না। এই বক্তব্যের কারণে প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রিসভা থেকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, মেক্সিকোতে মন্ত্রী হিসেবে একটি পদক নেয়ার কথা ছিল লতিফ সিদ্দিকীর। তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দেয়ার কারণে সেই পুরস্কার প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গ্রহণ করেছেন। এতেই প্রমাণিত হয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হয়েছে। এদিকে গতকাল পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দেয়নি। তাকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি বলে তারা জানিয়েছেন।
দলীয় পদ থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে অব্যাহতি দেয়া হবে কিনা তা জানতে চাইলে হানিফ বলেন, দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর সব ধরনের সিদ্ধান্তের কথা আপনাদের জানানো হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বঙ্গবন্ধুও সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শত ব্যস্ততার মাঝেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। তিনি হজও পালন করেছেন। হানিফ বলেন, পবিত্র ধর্ম নিয়ে এর আগেও যারা মন্তব্য করেছেন তাদের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। লতিফ সিদ্দিকী ধর্ম নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে করা মন্তব্যের জবাবে হানিফ বলেন, তারেক রহমান তার পিতা জিয়াউর রহমানকে মহানায়কের আসনে বসাতে গিয়ে তাকে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, নষ্ট তারেক রহমান নষ্ট বক্তব্য দিয়ে দেশে নষ্ট পরিবেশ তৈরি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। কিন্তু দেশের মানুষ এখন আর তার কথা বিশ্বাস করে না। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
ফাঁসির দাবিতে প্রতিবাদমুখর সারাদেশ
আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে দেশের সব ইসলামী দল। রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ মানববন্ধন করেছে এসব দলের নেতাকর্মীরা। ২৬শে অক্টোবর হরতালের ঘোষণা দিয়েছে সম্মিলিত ইসলামী দল। বিমানবন্দরে লতিফ সিদ্দিকীকে ঘেরাও করার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। ফাঁসির দাবি জানিয়েছে জাতীয় পার্টি। প্রতিবাদমুখর হয়েছে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট। একই দাবি উঠেছে সরকার সমর্থক বিভিন্ন দল, ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকেও। এক কথায় পদচ্যুত এই মন্ত্রীর কঠোর শাস্তির দাবিতে সারা দেশের মানুষ দল-মত নির্বিশেষে একাট্টা। গতকাল সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্থান, ধানমন্ডি, বাড্ডা ও মিরপুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা মহানগর জামায়াত। সমাবেশে নেতারা বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। তাকে কেবল মন্ত্রী পরিষদ থেকে বাদ দিলেই চলবে না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় তৌহিদি জনতা রাজপথ থেকে ঘরে ফিরবে না। আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তির দাবিতে প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন করেছে মহানগর জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, মন্ত্রীকে বহিষ্কার করার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতে চান। জমিয়ত বোকার স্বর্গে বাস করে না। তাই কেবল অপসারণ নয় আমরা তার ফাঁসি চাই। নবী-রাসুল ও ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আইন প্রণয়নের দাবিতে ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলাম আজ বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এদিকে আগামী ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করা না হলে ২৬শে অক্টোবর দেশব্যাপী হরতাল দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। একই সঙ্গে আগামীকাল সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণাও দেয়া হয়। জাফরুল্লাহ খান বলেন, সরকার মন্ত্রিপরিষদ থেকে সিদ্দিকীকে অপসারণের বিষয়ে জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে। তাকে ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে ২৬শে অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল দেয়া হবে।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নেতারা বলেছেন, মহানবী (সা.), হজ ও তাবলীগ সম্পর্কে লতিফ সিদ্দিকীর বল্গাহীন, ঔদ্ধত্যপূর্ণ, ব্যঙ্গাত্মক, অবমাননাকর ও অশোভন উক্তি তার ইসলামবিরোধী বিশ্বাস, চেতনা ও উপলব্ধি প্রতিবিম্বিত হয়েছে। তাছাড়া এর মাধ্যমে তিনি তার মোনাফেকি জীবনবোধের প্রতিচ্ছবি এবং মুসলিম জনতার ধর্মীয় বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিরোধিতার প্রতীক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তারা বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে শুধু মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণ করলে চলবে না, তাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তির দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তবে কোথাও শান্তিপূর্ণ আবার কোথাও পুলিশের বাধার মধ্যে বিক্ষোভ মিছিল হয় বলে দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এসময় কুড়িগ্রামে ছাত্রলীগের হামলায় ইশা ছাত্র আন্দোলনের ৩ জন কর্মী মারাত্মক আহত হন এবং ৪ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। যশোরে মিছিলে পুলিশের হামলা হয়। ফরিদপুরে মিছিল থেকে ৫ জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব সমাবেশে নেতারা বলেন, মুরতাদ লতিফ যে অন্যায় করেছেন তাকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতেই হবে। অন্যথায় ঈদের পর লাগাতার হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হবে। খেলাফত যুব আন্দোলনের সভাপতি মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেছেন, লতিফ সিদ্দিকী একজন অখ্যাত ব্যক্তি। ধর্ম বিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে তিনি এখন কুখ্যাত হয়েছেন। বিশ্বের দেড় শ’ কোটি মুসলমানের অন্তরে আঘাত দিয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেয়া না হলে দেশে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়বে। সরকার যদি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারবে। দেশে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টি হবে, যা শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিতে পারে।
ফাঁসির দাবিতে ঘাটাইলে বিক্ষোভ
ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, আবদুুল লতিফ সিদ্দিকী শাস্তির দাবিতে ঘাটাইল উপজেলা ইমাম পরিষদের উদ্যোগে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা হয়। উপজেলার বিভিন্ন মসজিদ থেকে শ’ শ’ মুসল্লি এতে সমবেত হন। ইমাম পরিষদের সভাপতি হাফেজ মো. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন মাওলানা মো. শফিকুল ইসলাম, মাওলানা মো. এনামুল হক, হাফেজ মাওলানা মো. জোবায়ের মাহমুদসহ বিভিন্ন ইসলামী ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বক্তারা লতিফ সিদ্দকীকে নাস্তিক, মুরতাদ ও কাফের ঘোষণা দিয়ে অবিলম্বে তার গ্রেপ্তার ও ফাঁসি দাবি করেন। এর আগে দুপুরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা লতিফ সিদ্দিকীর ফাঁসির দাবিতে শহরে মোটরসাইকেল মিছিল করে।
ফাঁসির দাবি টাঙ্গাইলেও
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল থেকে জানান, লতিফ সিদ্দিকীকে টাঙ্গাইলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন মুসল্লিরা। জেলা কওমি ওলামা পরিষদের উদ্যোগে লতিফ সিদ্দিকীর ফাঁসির দাবিতে গতকাল শহরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে স্থানীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, টাঙ্গাইলের মাটিতে লতিফ সিদ্দিকীর জায়গা হবে না। আমরা তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। তিনি হজ নিয়ে যে উক্তি করেছেন তাতে তিনি কাফের হয়ে গেছেন। ভালভাবে জীবনযাপন করতে চাইলে তাকে আবার নতুন করে মুসলমান হতে হবে। বক্তারা বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে শুধু মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণ এবং দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করলেই চলবে না তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলাতে হবে। তিনি যে অন্যায় করেছেন মৃত্যুর পর কোন মুসলমান তার জানাজা পড়তে পারবেন না। টাঙ্গাইলের প্রধান জামে মসজিদের ইমাম মওলানা শামসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন, মওলানা আবদুল জলিল, মওলানা মোহাম্মদ আলী, মুফতি মাহমুদুল হক, মুফতি মোহাম্মদ এরশাদ, মাওলানা রেজাউল করিম প্রমুখ। সমাবেশ শেষে শহরের নিরালার মোড়ে মুসল্লিরা লতিফ সিদ্দিকীর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
দিরাই (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, দিরাইয়ে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মুসল্লিরা। দিরাই বাজার জামে মসজিদের সামনে থেকে শুরু করে বিক্ষোভ মিছিল পৌর সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে থানা পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা নাজিম উদ্দিনের সভাপতিত্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন মাওলানা মাহবুবুল হক, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা আবদুল বাছির সরদার, মাওলানা মুখতার হোসেন চৌধুরী, মাওলানা হেলাল আহমদ প্রমুখ।