দিনক্ষণ ঠিক করে নয়, ‘সময়মতোই’ আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, আন্দোলনের সময় আসছে। তবে দিনক্ষণ দিয়ে আন্দোলন হয় না। সময়মতোই আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। এই সরকারকে অবশ্যই বিদায় করতে হবে। 
ঈদের দিন গত সোমবার দুপুরে কূটনীতিক ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান হয়। 
খালেদা জিয়া দেশবাসী ও নেতাকর্মীদের ঈদের শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়ে বলেন, দেশের মানুষের মনে কোনো আনন্দ নেই। এবার তারা দুর্ভোগ-ভোগান্তি-দুশ্চিন্তার মধ্যে ঈদ উদযাপন করছে। 
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। ঈদে ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। ট্রেন, বাস, লঞ্চ সব পথেই মানুষজন চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হয়েছে। রাস্তা-ঘাটের বেহাল অবস্থার কারণে হাইওয়ে ছিল ব্যাপক যানজট। দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, গ্যাস সরবরাহে অপ্রাপ্যতা ইত্যাদি সব মিলিয়ে দেখা গেছে, এসব দেখার কেউ নেই। 
পোশাক শিল্পের দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিজেএমইএ’র প্রতিনিধিরা কিছুক্ষণ আগে এখানে এসেছিলেন। তারা বলেছেন, বিদ্যুৎ নেই, গ্যাস নেই। মালামাল সঠিক সময় দিতে পারছেন না। মহাসড়কের বেহাল অবস্থার জন্য পোশাক শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 
বর্তমান সরকারের আমলে নতুন কোনো শিল্প-কারাখানা হয়নি অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, অনেক পোশাকশিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে বেকারত্ব বাড়ছে। বিদেশি বিনিয়োগ নেই। ব্যাংকসমূহে অলস টাকা পড়ে আছে। কেউ বিনিয়োগ করতে চায় না। অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। এভাবে চললে দেশ সামনের দিকে এগুবে কিভাবে? 
তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের দুরবস্থা হলেও ছাত্রলীগ-যুবলীগ দলীয় চাঁদাবাজি চলছেই। মনে হচ্ছে, দেশ দেখার কেউ নেই। কারণ এই সরকার অবৈধ। জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। নিজেরাই কিভাবে লুটপাট করে টাকা বানাবে, সেই কাজেই তারা ব্যস্ত থাকে। 
দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান ভালো নেই দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ব্যাংকগুলোর কি অবস্থা। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তাদের ব্যর্থতার কারণে ব্যাংকের অবস্থা ভালো নেই। তিনি আর যাই হোক একটা ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন। তাই সরকারকে বলবেন, এখনো সময় আছে, অবিলম্বে পদত্যাগ করে দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। 
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাসের হার বাড়িয়ে সরকার গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ষোড়শ সংশোধনের মাধ্যমে বিচার বিভাগ এবং জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা করে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের সমালোচনা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সরকার সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে আছে। তাদের জনভিত্তি নেই। অবৈধ এই সরকার একটা ভেজাল সরকার। ভেজাল ছাড়া দেশে খাঁটি কিছুই নেই। গুম-খুন করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। 
কোরবানির পশুর বাজারে মোটাতাজাকরণ পশু বাছাইয়ে সরকারের উদ্যোগের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ফরমালিনমুক্ত ফল কিংবা মোটাতাজাকরণ বিষয়টি সরকারের ৬/৭ মাস আগে থেকেই ঘোষণা দেয়া উচিত ছিল। তারা ঈদের ৬ দিন আগে এই কাজ করার কথা ঘোষণা করেছে। এখন ঈদের পশুর হাটে পশু মোটাতাজাকরণের নামে যা হয়েছে, তা দুর্নীতি। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা গরুর দাম পায়নি। 
সরকার হটানোর আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, দুর্নীতিবাজ অবৈধ এই সরকার দেশের জন্য ভালো কিছুই করতে পারবে না। এদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। মানুষজন নতুন কিছু আশা করছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া তার বড় ছেলে তারেক রহমানের অবস্থা জানাতে গিয়ে বলেন, চিকিৎসা শেষ না করে দেশে ফিরছেন না তারেক। ওর শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তবে এখনো পুরোপুরি ভালো নয়। চিকিৎসা চলছে। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শের মধ্যেই তাকে থাকতে হচ্ছে। সেখানে সেটাই নিয়ম। চিকিৎসা শেষ না হলে সে দেশে আসতে পারবে না। ডাক্তাররা সম্পূর্ণ সুস্থ বলে ঘোষণা দিলেই সে দেশে আসতে পারবে। 
ঈদ শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে কূটনীতিক কোরের ডিন শাহের মোহাম্মদ, পাকিস্তানের হাইকমিশনার আফরাসিয়াব হাশেমী মেহেদী কোরেশী, ভারতের হাইকমিশনার পংকজ শরণ, ঢাকায় অবস্থানরত সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও তাদের প্রতিনিধিসহ ৪২টি দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময়ে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল কাইয়ুম, রাশেদ আহমেদ চৌধুরী, হারুন অর রশীদ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের সম্মানে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া বাজারে মধ্যাহ্ন ভোজ দেয়া হয়।
ঈদের শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে মঞ্চে খালেদা জিয়ার পাশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি, মাহবুবুর রহমান, এমকে আনোয়ার, আসম হান্নান শাহ, জমির উদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান প্র্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, জয়নুল আবদিন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, নুরী আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম আলিম, হাফেজ এমএ মালেক, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা ছিলেন।
রাজনীতিবিদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক মজিবুর রহমান, তাসনীম আলম, রিদওয়ান উল্লাহ শাহিদী, বাংলাদেশ বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান, লেবার পার্টির মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, মো. ফরিদউদ্দিন, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম প্রমুখ বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
ঈদ শুভেচ্ছার এই অনুষ্ঠানে গণমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক মবিন খান, কবি আবু সালেহ, মাহমুদ শফিক, গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার প্রমুখ খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
বিজেএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম, সহ-সভাপতি এসএম মান্নান কচি, আবদুস সালাম মুশের্দী, এসএম ফজলুল হক, মোহাম্মদ আলীসহ একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলও বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদ, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনহ আখতার হোসেন, সাবেক সচিব ওমর ফারুক, ইসমাইল জবিউল্লাহসহ অবরসপ্রাপ্ত সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ঈদের শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে গুম হয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের পরিবার-পরিজন তাদের নিখোঁজ স্বজনদের ছবি নিয়ে খালেদা জিয়া সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় নেত্রী তাদের সান্ত্বনা জানান।

জিয়ার কবর জিয়ারত
ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষ করে খালেদা জিয়া তার স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। তিনি ফাতেহা পাঠ ও আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। এ সময়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। – See more at: http://www.jjdin.com/?view=details&type=single&pub_no=975&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=1&archiev=yes&arch_date=09-10-2014#sthash.wVW3OSMd.dpuf