রাজিব আহসানকে সভাপতি এবং মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ২০১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় নতুন কমিটির ১৫০ জনের আংশিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
এই কমিটি গঠনের জন্য সংগঠনটির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এবং সহছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু। কমিটি গঠন করতে গিয়ে তারা রীতিমতো আরব্য উপন্যাসকেও হার মানিয়েছেন!
এতোদিন ছাত্রদলে যাদের নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়েছে এ্যানি-টুকুর ম্যাজিক পলিটিক্সে তারাই রয়েছেন কমিটির শীর্ষ পদগুলোতে।
বেশ কয়েকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন করা হবে। সমালোচিত কয়েকজনকে দিয়ে সুপার ফাইভ চূড়ান্ত হয়েছে খবরটি চাউর হওয়ায় বিভক্ত ছাত্রদল নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে বেগম খালেদা জিয়ার আশ্বাসে তারা শান্ত হন।
তখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ছিল কমিটি নিয়ে এ্যানি-টুকু যে কোনো সময় ছাত্রদল নেতকর্মীদের রোষানলে পড়তে পারেন।
অবস্থা দৃশ্যে মনে হয় একঢিলে বহুপাখি শিকার করেছেন এ্যানি এবং টুকু। ১৫০ জনের কমিটিতে যারা ঠাঁই পেয়েছেন তাদের মুখে কুলুপ। অধিকাংশ নেতার মুঠোফোন বন্ধ। যাদের অন্যান্য মাধ্যমে পাওয়া গেছে তাদের অধিকাংশ এ নিয়ে অনুভূতিহীন।
টুকু-আলীম, জুয়েল-হাবিব এবং রাজিব-আকরাম- ৩টি কমিটিতেই সহ-সভাপতির পদ দেয়া হয় কামাল আনোয়ার আহমেদকে।
রাজনীতিতে নারীদের বহুমুখী প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তা মোকাবেলা করে যারা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরব থেকেছেন তাদের পদায়নে সংকীর্ণতা লক্ষ্য করা গেছে।
পুরনো কমিটির দপ্তর সম্পাদক নাজমুল হাসান এবার ৯ নম্বর সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘প্রিয় বন্ধুরা, শুভেচ্ছা জানানোর প্রয়োজন নেই। দলের জন্য এমনিতেই কাজ করবো।’
আগের কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বায়েজীদ আরেফিন নতুন কমিটির ৯ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক পদ পেয়ে তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ছাত্ররাজনীতি করতে এসে সারাদেশে অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে; অনেকের ভালবাসা পেয়েছি। এই মুহূর্তে আমার উপলব্ধি হচ্ছে এখন পর্যন্ত এটাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন। (অভিনন্দন না জানালে ভালো হয়।’
আগের কমিটির সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন নতুন কমিটিতে জায়গা পাননি। তিনি বলেন, ‘কে আমাকে পদ দিলো, কে আমাকে বাদ দিলো তা নিয়ে আমার কিছু যায় আসে না। আমি দেশ প্রেমের নমুনা হিসেবে রাজনীতি করি। আগে দলের সঙ্গে ছিলাম, কাজ করছি। এখন সমর্থক হিসেবে কাজ করবো। ব্যক্তিগতভাবে নতুন সভাপতির চেয়ে আমি বেশি কাজ করেছি। আমি যে সক্রিয় ছিলাম তা তিনি নিজেই জানেন।’
নতুন কমিটি ছাত্রদলের কফিনের শেষ পেরেক বলেও মন্তব্য করেন পদবঞ্চিত এই নেতা।
ছাত্রদলে এ্যানি-টুকু এবং সোহেল-বকুল এ দুটি বলয় এখন প্রভাবশালী। সূত্র মতে, ছাত্রদলের নতুন কমিটির ভাগ ইলিয়াস গ্রুপের সোহেল-বকুলকে দিতে হয়েছে সাধারণ সম্পাদকের পদ। আর এ্যানি-টুকু নিয়েছেন সভাপতি এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। সহ-সভাপতি পদটিও এ্যনির নিজস্ব। কমিটিতে বেশ কিছু পদে টুকুর ঘনিষ্ঠজনরা রয়েছেন। ভারসাম্য রক্ষার জন্য ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদটি দুই বলয়ের বাইরে রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবল বিরোধ সত্ত্বেও সমালোচিতদের নির্বাচিত করে এ্যানি-টুকু ম্যাজিক দেখিয়েছেন। অনেকে বলছেন, নতুন কমিটি ভারী করা হয়েছে, যাতে কেউ এর বিরুদ্ধে সরব হতে না পারে।
এদিকে, এ্যানি-টুকুর যুবদলের প্রার্থী হওয়ার প্রচারণা রয়েছে। যুবদলের সোহেল-বকুলদের কোনো প্রার্থী নেই। তারা যুবদলের দায়িত্ব পেলে ছাত্রদল-যুবদলের সম্মিলিত শক্তি দিয়ে তারা নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টা করবেন।
নতুন কমিটির পদ বাণিজ্যের আশঙ্কা জানিয়ে ছাত্রদলের সিনিয়র একজন নেতা বলেন, ‘সুবিধাবাদী জীব, ক্যাশরাম, শিবির, ছাত্রলীগ, থানার সোর্স, ক্যাশিয়ার প্রভৃতি ‘বিশেষণে’ চরম ঝুঁকিতে ফেলেছে নতুন কমিটিকে।’ পদ বাণিজ্যে কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ করেন তিনি