রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪- ২০১৫ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ বি.এসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করতে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে রুয়েটের আবাসিক হলসমূহ ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী শূণ্যে ক্যাম্পাসে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে আসা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা।
রুয়েট সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব ঘোষিত ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে শারদীয় দূর্গা পুজা ও পবিত্র ঈদ-উল-আজ্হার ছুটি শেষে গত মঙ্গলবার থেকে রুয়েটের প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হলেও বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির আবাসিক হল এবং একাডেমিক কার্যক্রম। একাডেমিক কার্যক্রম এবং হল বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসেনি। ফলে আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য ১ম ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা ভার্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে কোথায়, কিভাবে থাকবে তা নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। প্রতিবছর ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও পার্শ্ববতী বিনোদপুর, কাজলা ও মেহেরচন্ডী এলাকার মেসগুলোতে অবস্থানকারী রুয়েট শিক্ষার্থীদের কাছে থাকলেও শিক্ষার্থী শূণ্যে ক্যাম্পাস হওয়ায় এবার সেসব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভর্তিচ্ছুরা। ফলে শিক্ষার্থীদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে থাকতে হচ্ছে।
এতে সব থেকে সমস্যায় পড়ছেন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা। আর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের অনেকেই শহরের হোটেল গুলোতে উঠতে না পেরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ ও রুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং ক্যাম্পাসের পার্শ্ববতী মসজিদ গুলোতে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন।
এছাড়াও প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিক্ষার্থীদের জন্য দিক নির্দেশনা মূলক জেলা সমিতির পক্ষ থেকে ‘বুথ’ বসানো হলেও এবার ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী না থাকায় কোন বুথ বসানো হচ্ছে না। ‘বুথ’ না থাকার কারণে পরীক্ষার হল, ভবন, সিটপ্ল¬ানসহ নানা ধরনের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের।
গতকাল বুধবার দিনাজপুর থেকে আসা ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থী জানান, “বৃহস্পতিবার ভর্তি পরীক্ষা। কিন্তু রুয়েটের হল বন্ধ থাকায় থাকার মতো তেমন কোন জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে শহরের একটি উঠেছি। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় থাকায় পরীক্ষার হল এবং ভবন চিনতে নানা সমস্যায় পড়তে হবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে রুয়েট শিবির সভাপতি হাসান আহমদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পরীক্ষা দিতে আসে। তাঁরা এসে যদি এখানে থাকা-খাওয়া নিয়ে ভোগান্তির মধ্যে থাকে তাহলে এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে। এতে তারা শিক্ষার আসল পরিবেশ পাবে না।
রুয়েট শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রাইসুল ইসলাম রোজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের নির্দেশেই সকল আবাসিক হল সমূহ বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিবে আমারা সেটাকেই সাধুবাদ জানাই। তবে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ভতিচ্ছুরা থাকা-খাওয়া নিয়ে এক প্রকার সমস্যায় পড়বে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতির কারণে তাদের মেনে নিতে হবে।
এ বিষয়ে রুয়েটের ছাত্র কল্যান পরিচালক কামরুজ্জামান রিপনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ৬৯ তম জরুরী সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ আগামী ১৭ অক্টোবর সকাল আটটায় খোলা হবে এবং ক্লাসসমূহ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৮ অক্টোবর থেকে শুরু হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার সার্থে হল গুলো বন্ধ রেখে আমরা ভর্তি পরীক্ষা নিবো। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা যেন কোন ধরনের ভোগান্তির শিকার না হয় সেদিকেও প্রশাসন দৃষ্টি রাখবে বলে জানান তিনি।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর জামায়াতের ডাকা হরতালকে কেন্দ্র করে রুয়েটে শিবির-ছাত্রলীগ এবং পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই দিন আবাসিক হলে ব্যাপক তল¬াশি চালিয়ে পুলিশ রুয়েট শিবিরের সেক্রেটারি আহমেদ ইয়াসিরসহ ১১ দলীয় কর্মীকে আটক করলে ক্যা¤পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে বড় ধরণের সংঘর্ষ এড়াতে ওই দিন রাত ৯টার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়।