গাজীপুরের কাপাসিয়ায় শয়নকক্ষ থেকে তুলে নিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির এক মেধাবী ছাত্রীকে পৈশাচিক নির্যাতনের পর হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বাড়ি থেকে ৬’শ গজ দূরে ১৭ই অক্টোবর শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঝোপের ভেতর থেকে পুলিশ ওই ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত ছাত্রীর নাম পপি আক্তার(১১)। সে কাপাসিয়া উপজেলার কড়িহাতা ইউনিয়নের বিয়াই দুয়ার গ্রামের মৃত মোখলেসুর রহমানের কন্যা। পপি আড়াল জিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। মরদেহ উদ্ধারকালে দুই হাতের কব্জি মোচড়ানো-ভাঙা ছিল বলে জানায় কাপাসিয়া থানার ওসি। স্বজনদের অভিযোগ, দুর্বৃত্তরা পৈশাচিক নির্যাতনের পর দুই হাতের কব্জি থেকে ভেঙে দিয়ে শ্বাসরোধ করে পপিকে হত্যার পর লাশ ঝোপের ভেতর ফেলে গেছে।
এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে কাপাসিয়া থানা পুলিশ একই গ্রামের মৃত আতর আলীর পুত্র শরিফ হোসেনকে (২৮) রাত সাড়ে ১০ টায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
জানা গেছে, কাপাসিয়ার কড়িহাতা ইউনিয়নের বিয়াই দুয়ার গ্রামের মোখলেসুর রহমান ২০০৬ সালে মারা যান। তার দুই ছেলে লিমন (১৬), সুমন (১৪) ও একমাত্র কন্যা পপি আক্তার। সংসারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় ২০১১ সালে পপির মা লিপি বেগম গৃহকর্মীর চাকরি নিয়ে লেবানন চলে যান। এরপর থেকে তার দুই ছেলে ও একমাত্র কন্যার দায়িত্ব পড়ে লিপির মা শান্তি বেগমের উপর।
পপির নানি শান্তি বেগম জানান, তার কন্যা লিপি বেগম বিদেশে যাওয়ার পর থেকে তিনি নাতি-নাতনিদের সঙ্গেই রয়েছেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ি থেকে ৪’শ গজ দূরে খালার বাড়ি বেড়াতে যায় পপি। ১৬ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে খালাতো ভাই মাজাহারুল ইসলামকে (৯) সঙ্গে নিয়ে পাশের ঘরে ঘুমাতে যায় পপি।
শিশু মাজাহারুল ইসলাম জানায়, রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তার ঘুম ভাঙে। ঘুম ভেঙে দেখে বিছানায় বড় বোন পপি নেই। ওই সময় ঘরের দরজা খোলা ছিল। বাইরে গিয়েও পপিকে খুঁজে না পেয়ে সে চিৎকার করে উঠে। চিৎকার শুনে তার মা-বাবা ছুটে এসে খোঁজাখুঁজির পরও পপির কোন হদিস পায়নি।
পপির চাচা কাজল মিয়া জানান, শুক্রবার দিনভর পুরো গ্রামসহ আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ী খুঁজে পপির হদিস না পেয়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি নিজে বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। ফেরার পথে বাড়ী থেকে প্রায় ৬’শ গজ দূরে ঝোপের ভেতর পপির মরদেহ পড়ে থাকার খবর পান।
প্রতিবেশী আলাউদ্দিন জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে ঝোপের ভেতর লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ রাত ৯টার দিকে পপির মরদেহ উদ্ধার করে।
স্বজনরা জানায়, দুর্বৃত্তরা আগে থেকেই ঘরের পাশে ওঁত পেতে ছিল। রাতের কোন এক সময় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে বের হলে পপিকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের পর হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান উল্লাহ বলেন, উদ্ধারকালে মরদেহের দুই হাতের কব্জি থেকে মোচড়ানো-ভাঙা ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পপিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। খুনীদের শনাক্তসহ গ্রেপ্তারে জন্য পুলিশের সকল ধরণের তৎপরতা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।