দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগে ইউনিয়নের (আইটিইউ) কাউন্সিলর নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো ১১৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। ১৩ সদস্য দেশের মধ্যে ৭ম অবস্থান জিতেছে বাংলাদেশ। আগামী ২০১৫-১৮ সেশনের জন্য কাউন্সিল নির্বাচিত হওয়ায় এর এ তথ্য বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল ১১টায় ফেসবুকে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এর আগে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রচারণার নেতৃত্বে দিতে এশিয়া এবং ওশেনিয়া অঞ্চলের ১৩টি পদের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে ১৮টি দেশ।
সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। বাংলাদেশ সময় তখন ভোর রাত। ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৬৭ দেশ ভোট দেয়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশের নিকটতম চার প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এ ছাড়া চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়ার মতো পরাশক্তিও অংশ নেয় এই লড়াইয়ে। মুসলিম দেশ বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কুয়েত, লেবানন, সৌদি আরব, আরব আমিরাত এবং ফিলিপাইন এবার এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলো।
এর আগে গত শনিবার অনুষ্ঠিত আইটিইউর মহাসচিব ও উপমহাসচিব পদের নির্বাচন হয়েছে। দুটি পদের জন্য ভোট পড়ে ১৫৬ ও ১৬৮টি। মহাসচিব পদে নির্বাচিত হয়েছেন চীনের হাউলিন ঝো। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও নির্বাচন হয়েছে। আগের দু’বারের উপ-মহাসচিব ছিলেন তিনি। বর্তমান মহাসচিব হামাদুন তুরে দু’মেয়াদে দায়িত্ব পালন করায় গঠনতন্ত্র অনুসারে তার নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ ছিল না। আগামী ১ জানুয়ারি দায়িত্ব নেবেন ঝো। ওই সময় আইটিইউর ১৫০তম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানও হবে।
সূত্র জানিয়েছে, ভোটের লড়াইয়ে জয়ী হতে একের পর এক নেটওয়ার্কিং বৈঠক করেছেন প্রতিমন্ত্রী পলক, বিটিআরসি চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোসসহ প্রতিনিধিরা। গত শনিবার এবং রোববার দু’দিনে ব্যস্ত সময় পার করেছেন তারা। এরই মধ্যে চলছে নির্বাচনী প্রচারণা। বাংলাদেশ বর্তমানে কাউন্সিল সদস্য দেশ। এ কারণে পদটি ধরে রাখা এক রকম মর্যাদার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর সে লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার সব চেষ্টা চালাচ্ছেন সফররত প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
টেলিযোগাযোগ দুনিয়ার এ সর্বোচ্চ আয়োজনে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। কি কি কাজ করতে চায়, দেশ হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে কি কি অর্জন করতে চায় এসব তুলে ধরেছেন প্রতিমন্ত্রী। এর আগে বাংলাদেশের পজেশন পেপার, নির্বাচনী ইশতেহার এবং বিভিন্ন উপহার সামগ্রীও বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রচারণা অংশ হিসাবে দেওয়া হয়েছে। গত ৮ সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সিটিও সম্মেলনেও ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। সব মিলে ভালোই সাড়া মিলেছে বলে দাবি করছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন সূত্র।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো আইটিইউর কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ। তারও আগে ১৯৭৩ সালে পায় সাধারণ সদস্যপদ। গত নির্বাচনে এশীয় অঞ্চলের ১৩টি পদের জন্য ১৭টি দেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এর মধ্যে ১২৩ ভোট পেয়ে ষষ্ঠ স্থান লাভ করে বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ভারতের হায়দ্রাবাদে ডব্লিউটিডিসি-২০১০ সম্মেলনে তৎকালীন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর নেতৃত্বে ১১ সদস্যর প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছিল। এই সম্মেলনে আইটিইউ সদস্য ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৩০টির ৫০ জন মন্ত্রী এবং প্রায় ১৫০০ জন সরকারি প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন।