ডিজিটাল বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তুলনায় ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে এসব ব্যাংকের অগ্রগতিতে কচ্ছপ গতি ভর করেছে। শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকই নয় রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর অবস্থাও একই রকম।
সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের দেশব্যাপী শাখা রয়েছে ১২০৪টি। এর মধ্যে কম্পিউটারাইজড ব্যাংকিং সার্ভিস চালু হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। জনতা ব্যাংকের ৮৯৬টি শাখার মধ্যে ১৭ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকের ৯০৪টি শাখার মধ্যে ২২ শতাংশ। আর রূপালী ব্যাংকের ৫৩২টি শাখার একটিতেও চালু হয়নি কম্পিউটারাইজড ব্যাংকিং সার্ভিস।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুরোধ নির্দেশ মনে করে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। আর নির্দেশ পেলে দিশাহারা হয়ে যায়। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ও রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো অনুরোধ-নির্দেশ কোনটাই কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে সাড়া দেয় না। অবশ্য এর কারণ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের এ ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রণে যেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একক ক্ষমতা নেই। সেহেতু রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খুব বেশি কিছু করারও থাকে না। তবুও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফে চিঠি-সার্কুলারের মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, বিশেষায়িত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক একটি শাখায়ও ইন্টারনেট কার্যক্রম চালু করতে পারেনি। তাছাড়া, ইন্টারনেট কার্যক্রমে তাদের তেমন আগ্রহও দেখা যাচ্ছে না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ১০৫০টি শাখার মধ্যে ইন্টারনেট কার্যক্রম চালু করেছে মাত্র ৪ শতাংশ শাখায়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পাওয়ার কিছু দিনের মধ্যে সবগুলো শাখাতেই কম্পিউটারাইজড সেবা চালু করেছে বিশেষায়িত খাতের একমাত্র বেসিক ব্যাংক লিমিটেড।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৫ থেকে ২২ শতাংশ শাখায় এ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সবগুলো ব্যাংকের ইন্টারনেট কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়ে চিঠি দিলে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছে এ সব ব্যাংক। দীর্ঘ সময় চাওয়ার বিষয়ে গত ২১শে জুলাই একটি প্রতিবেদন তৈরি করে গভর্নরকে অবহিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সময় চাওয়ায় গভর্নর চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২০১৬ সাল অনেক দূর। এত লম্বা সময় দেয়া যাবে না। সময় কমিয়ে আরও আগেই কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন তিনি।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, সরকার মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো চেষ্টা করছে তাদের শাখাগুলো কম্পিউটারাইজড করতে। দেরি হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বারবার তাগিদ দিচ্ছে। তবে দ্রুতই সকল শাখা ইন্টারনেট কার্যক্রমের আওতায় আসবে।
সূত্রমতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নির্দেশনা থাকার পরও ইন্টারনেট সেবা বাড়াচ্ছে না রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো। তারা এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিপত্র জারির পর কম্পিউটারাইজড ব্যাংক সার্ভিস চালু করেছে ব্যাংকগুলোর হাতেগোনা কয়েকটি শাখায়।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ইন্টারনেট ব্যাংকিং সার্ভিস চালু করতে না পারায় গ্রামীণ অর্থনীতি ব্যাহত হচ্ছে। রাজধানীর বাইরের শাখার গ্রাহকরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। কখনও বিটিসিএলের সংযোগ ব্যস্ত আবার কখনও মোবাইল নম্বরটি বন্ধ দেখায়। এ কারণে ব্যবসায়ী বা আত্মীয়স্বজনের কাছে টেলিফোন ট্রান্সফার (টিটি) করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।