বিপণিবিতানের
সামনে পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে
ছিলেন ঘণ্টা দুয়েক।
বাইরে এসে দেখলেন
গাড়ি হাওয়া। পড়ে গেলেন
মহাবিপদে।
গাড়িতে থাকা প্রযুক্তির
মাধ্যমে দেখলেন গাড়ি কোথায়।
কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি।
গাড়ি চলে গেছে অনেক দূরে।
থানা-পুলিশ করেও লাভ হলো না।
শখের গাড়ি এভাবে চলে যাবে?
হাপিত্যেশ ছাড়া আর কিছুই করার
নেই। এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
এ তো গেল আস্ত গাড়ি চুরির ঘটনা।
ছোটখাটো চুরি, গাড়ির পার্টস
খুলে নিয়ে যাওয়া, তো নিত্য
ব্যাপারে দাঁড়িয়েছে।
এমনকি বাসার
নিচে পার্কিংয়ে থাকা গাড়ি থ
পার্টস চুরি হচ্ছে।
এসব চোর ধরার উপায় কী? সেই
সমাধান দিচ্ছেন তরুণ
প্রকৌশলী আশরাফ শাফি। শুনে একটু
নড়েচড়ে বসলেন তো?
কিংবা মনে হচ্ছে, কত কিছুই
না হলো, চোর তো প্রযুক্তি ভেদ
করেই চলেছে। তবে এবার
হয়তো আশার আলো দেখাচ্ছেন
শাফি। কীভাবে সেই চোর ধরা?
শুনুন শাফির মুখেই,
‘পুরো ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রিত
হবে ছোট একটি ডিভাইসের
মাধ্যমে। যেটি গাড়ির ভেতরেই
থাকবে। ডিভাইসের
সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত
হবে মুঠোফোনের মাধ্যমে। যেমন
পার্কিংয়ে গাড়ি রাখার পর
মালিক চলে গেলেন তাঁর মতো। এর
মধ্যে চুরির উদ্দেশ্যে গাড়ির
দরজা খোলার চেষ্টা করছে কেউ।
সে কাজ শুরু করার পাঁচ সেকেন্ডের
মধ্যে গাড়ি থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাব
মুঠোফোনে কল চলে যাবে।
তিনি জানতে পারলেন
গাড়িতে কিছু একটা হচ্ছে।
সঙ্গে সঙ্গে পার্কিংয়ে এসেই
হাতেনাতে চোর ধরতে পারবেন।
কিংবা আসতে আসতেই হয়তো চোর
গাড়ির দরজা খুলে স্টার্ট
দিয়ে দিল। তাহলে গাড়ির
যে মুঠোফোন নম্বরটি থেকে কল এল
সেটাতে পুনরায় কল
করে পাসওয়ার্ড
দিয়ে ঢুকে মালিক বন্ধ
করে দিতে পারবেন গাড়ির
স্টার্ট। চোর সেখানেই
আটকে যাবে। কারণ, হাজার
চেষ্টা করেও চোর আর
গাড়ি স্টার্ট করতে পারবে না।
এভাবেই ধরা পড়ে যাবে চোর। এ
ছাড়া কেউ
চাইলে মুঠোফোনে খুদে বার্তার
মাধ্যমেও গাড়ির অবস্থান
জানতে পারবেন যখন দরকার হয়।’
একটানা বলে কিছুটা দম নিলেন
শাফি। এবার আবার প্রশ্ন,
চুরি ঠেকাতে বাজারে অনেক
প্রযুক্তিই তো আছে, এর বিশেষত্ব
কী? বললেন, ‘বাজারে যেসব
প্রযুক্তি রয়েছে এসবের মাধ্যমেও
চোর ধরা সম্ভব হয়, কিন্তু খুব কম।
কারণ,
প্রযুক্তিগুলো সঙ্গে সঙ্গে কোনো স
পাঠাতে পারে না। পরে গাড়ির
মালিক ট্র্যাকিং করতে পারেন।
ট্র্যাকিং করা হলেও অনেক
ক্ষেত্রে চোর ধরা সম্ভব হয় না। এই
প্রযুক্তিতে চোর গাড়িতে হাত
দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মালিক
সংকেত পাবেন।
তা ছাড়া অন্যান্য প্রযুক্তির
চেয়ে এর খরচ কম। মাত্র ১১ হাজার
টাকায় প্রযুক্তিটি স্থাপন
করা যাবে।
তা ছাড়া পরবর্তী সময়ে মাসিক
কোনো চার্জ নেই।
এটি মোটরসাইকেলেও স্থাপন
করা যাবে।’
এবার শুরুর কাহিনি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন
বোর্ডের চট্টগ্রামের মদুনাঘাট
উপকেন্দ্রের উপবিভাগীয়
প্রকৌশলী শাফি নিজের
প্রয়োজনেই উদ্ভাবন করেন
প্রযুক্তিটি। নিজের গাড়ি সুরক্ষিত
রাখতেই কোনো কিছু
করা থেকে এই উদ্ভাবন।
তিনি জানান,
প্রযুক্তিটি উদ্ভাবনের
কথা জেনে অনেকে যোগাযোগ
করছেন। বেশ
ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
যা তাঁকে অনুপ্রাণিত করছে। তাঁর
স্বপ্ন, এই প্রযুক্তি সবার
মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক।
শাফি বলেন, ‘আমি একজন
চাকরিজীবী। আমার
পক্ষে এটি পুরোপুরিভাবে বিপণন
করা সম্ভব হবে না। সবার জন্য এই
প্রযুক্তি সহজলভ্য
করতে কোনো একটি কোম্পানির
সহযোগিতা প্রয়োজন।’ শাফি চান
শখের গাড়িটি যেন আর দুশ্চিন্তার
কারণ না হয়। প্রযুক্তি নিশ্চিত
করবে গাড়ির নিরাপত্তা।