তিনি শুধু একজন ফুটবলার নন, তার চেয়ে বেশি কিছু- দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা সম্পর্কে এমন রায় আর্জেন্টিনার সাবেক তারকা হোর্হে ভালদানোর। গতকাল ৫৪ বছরে পা রাখলেন আর্জেন্টিনার ফুটবল ঈশ্বর দিয়েগো ম্যারাডোনা। ৩০শে অক্টোবর দিয়েগো ম্যারাডোনার জন্মদিন। ফুটবলকে তিনি বিদায় বলেছেন দেড় যুগ আগে। তবে ম্যারাডোনাকে নিয়ে আগ্রহের ঘাটতি নেই ভক্তদের। বল পায়ে নান্দনিক কারিকুরি, অসম্ভব ক্ষিপ্রতা ও বাঁ পায়ের বুলেট শট নিয়ে দুই যুগের ক্যারিয়ারে ম্যারাডোনার শুধুই জয়জয়কার। নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে ম্যারাডোনা ফুটবল ক্যারিশমায় নিজে দেখেছেন যশ-প্রতিপত্তি আর বিশ্বজুড়ে মন্ত্রমুগ্ধ ক্রীড়াপ্রেমীরা দেখেছেন এ আর্জেন্টাইনের ফুটবল জাদু। ‘প্লেয়ার অব দ্য সেঞ্চুরি’ খেতাবপ্রাপ্ত দিয়েগো ম্যারাডোনা ক্যারিয়ারে গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড। বিশ্বকাপ খেলেছেন ১৯৮২, ১৯৮৬, ১৯৯০ ও ১৯৯৪, টানা চারবার। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়কের আর্মব্যান্ড দিয়েগো ম্যারাডোনার বাহুতে শোভা পেয়েছে ১৬ ম্যাচে। বিশ্বকাপে এটি রেকর্ড। ফুটবলে ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’ খেতাবেও ম্যারাডোনার নাম। ১৯৮৬’র বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বল পায়ে ক্ষিপ্র লম্বা দৌড়ে ৫ ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ম্যাচে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলটি আদায় করেন ম্যারাডোনা।
হ্যান্ড অব গড
১৯৮৬’র বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলছিল আর্জেন্টিনা। ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড যুদ্ধের ঘটনা তখন তাজা। ম্যাচের ৫১ মিনিটে হেডে গোল পান ম্যারাডোনা। তবে পরে দেখা যায় বলে হাত লাগিয়ে ম্যারাডোনা আদায় করেন গোলটি। ম্যাচ শেষে ম্যারাডোনা বলেন- ওটা ছিল ঈশ্বরের হাত। ওই ম্যাচে ২-১ গোলে জয় পায় আর্জেন্টিনা। আর ম্যাচে ম্যারাডোনা নিজের দ্বিতীয় গোলটি আদায় করেন গোলরক্ষক পিটার শিলটন ও ইংল্যান্ডের বিশ্বসেরা ডিফেন্স তারকা টেরি বুচার, গ্যারি স্টিভেন্স, গ্লেন হডলদের ফাঁকি দিয়ে।
পরে সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষেও জোড়া গোল পান ম্যারাডোনা। ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে নিজে গোল না পেলেও আর্জেন্টিনার ম্যাচজয়ী তৃতীয় গোলটি আসে ম্যারাডোনারই ডিফেন্স চেরা লম্বা এক পাস থেকে। ম্যারাডোনা বিশ্বকাপে পা রেখেছিলেন ১৯৭৮’র আসরেই। তবে অল্প বয়সের কারণে ম্যারাডোনাকে ম্যাচের বাইরে রাখেন কোচ সিজার মিনোত্তি। ১৯৮২’র স্পেন বিশ্বকাপে ২১ বছরের ম্যারাডোনাকে নিয়ে বাড়তি সজাগ ফুটবল দেখাচ্ছিলেন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা। ওই আসরের দ্বিতীয় রাউন্ডে ইতালির বিপক্ষে ম্যাচে ম্যারাডোনা ফাউলের শিকার হন ২৩ বার। বিশ্বকাপে এক ম্যাচে কোন একজন ফুটবলারের বিপক্ষে সর্বাধিক ফাউলের রেকর্ড এটি। ম্যারাডোনার নামে এমন অপর রেকর্ডটি ১৯৯০’র বিশ্বকাপে। ইতালিতে সেবারের বিশ্বকাপ আসরে ম্যারাডোনা ফাউলের শিকার হন সর্বাধিক ৫০ বার। বিশ্বকাপের এক আসরে কোন ফুটবলারকে এতবার ফাউলের শিকার হতে দেখা যায়নি কখনোই। ১৯৬০ সালের ৩০শে অক্টোবর বুয়েন্স আয়ার্সের লেনাসে এভিটা হাসপাতালে জন্ম ফুটবল গ্রেট দিয়েগো ম্যারাডোনার। পিতা সিনিয়র দিয়েগো ও মাতা দালমা সালভাতরার চতুর্থ সন্তান তিনি। বড় তিন বোন ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ম্যারাডোনা বেড়ে উঠেছেন বুয়েন্স আয়ার্সের শহরতলীর ঘিঞ্জি পরিবেশে। আট বছর বয়সে ম্যারাডোনার ফুটবলটা প্রথম চোখে পড়ে বোকা জুনিয়র্স ক্লাবের। ক্লাবের এক প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে ম্যারাডোনাকে আবিষ্কার করেন তারা।
খেয়ালি দিয়েগো
মাঠের বাইরে খেয়ালি ও উগ্র আচরণের কারণেও ম্যারাডোনা থাকছেন আলোচনায়। সর্বশেষ বান্ধবীকে পিটিয়ে ম্যারাডোনা খবরের শিরোনাম হন দু’দিন আগে। এর আগে সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের ঘটনা রয়েছে তার। শরীরে নিষিদ্ধ ড্রাগস নিয়ে ১৯৯৪’র বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কৃত হন ম্যারাডোনা। পরে নিজের মাদক গ্রহণের কথা খোলামেলা স্বীকার করে নেন নিজেই। ২০০০ ও ২০০৪ সালে হার্টের রোগে আক্রান্ত ম্যারাডোনা ফিরে আসেন মৃত্যুর মুখ থেকে। তার ফুটবল জীবনেও দেখা দেয় ইতিবাচক পরিবর্তন। ২০১০’র বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলের কোচের দায়িত্ব সামলান দিয়েগো ম্যারাডোনা।
ম্যারাডোনার ক্যারিয়ার
দল ম্যাচ গোল
আর্জেন্টিনা ৯১ ৩৪
বোকা জুনিয়র্স ৪০ ২৮
বার্সেলোনা ৫৮ ৩৮
নাপোলি ২৫৯ ১১৫
সেভিয়া ২৯ ৮
মোট ৫৮৮ ৩১২