টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের সোহাগপাড়া গ্রামে তিন মেয়েসহ মাকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার প্রধান আসামি জাহাঙ্গীরের মামা আবুল কালাম আজাদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
আজ মঙ্গলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শ্যামল কুমার দত্ত জানান, গত রোববার গভীর রাতে সখীপুর উপজেলার বড়চালা গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মামলার এজারহারভুক্ত চারজন আসামিসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। তবে মূল আসামি জাহাঙ্গীর এখনো পলাতক।
সকালে স্ত্রী, সন্তানহারা মজিবর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তিনি অসুস্থ। শুয়ে আছেন। তাঁর বাবা চাঁন মিয়া ফকিরও অসুস্থ। একতলার যে ঘরে তিন মেয়েসহ মাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে।
মূল আসামি জাহাঙ্গীর ধরাছোয়ার বাইরে:
বাবা চাঁন মিয়া ফকিরের ভাষ্য, বিদেশ থেকে ছেলে ফেরার পর তাঁরা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। ছেলের পাঠানো টাকা দিয়ে কোনোরকমে দিন কাটত। কিন্তু তিনি বিদেশ থেকে ফেরার পর এখন আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। বাড়ির একটি গরুর দুই কেজি দুধ বিক্রি করে কোনোরকমে সংসার চলছে।
বাবা চাঁন মিয়ার ভাষ্যমতে, বউমা আর নাতনিদের হারিয়ে তিনি এখন ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে ভয় পান। তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে ছেলের পাঠানো টাকায় কোনোরকমে একতলা একটি বিল্ডিং দিয়েছিলেন। এখন টাকার অভাব হলেও ছেলেকে আর হারাতে চান না। ছেলে দর্জির কাজ জানে। তা করেই তাঁদের সংসার চলে যাবে।
মা ও তিন মেয়ের ব্যবহৃত পোশাক বের করে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। নিহত হাসনা বেগমের মা আছিয়া বেগম বলেন, কাপড়গুলো দরিদ্রদের দিয়ে দেবেন তিনি।
৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয় সেখানকার মালয়েশিয়াপ্রবাসী মজিবর রহমানের স্ত্রী হাসনা বেগম (৩৫), তাঁর তিন মেয়ে উপজেলার গোড়াই উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিরা আক্তার (১৪), বাক প্রতিবন্ধী মীম আক্তার (১০) ও ব্র্যাক স্কুলের নার্সারি শ্রেণির শিক্ষার্থী মলি আক্তারকে (৭) । মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁদের হত্যা করা হয় বলে মামলার অভিযোগে বলা হয়। পরদিন মঙ্গলবার ওই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান করে ১০ জনকে আসামি করে মির্জাপুর থানায় মজিবর রহমানের শ্যালক মোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন।