মেহেরপুর শহরে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে এলাকাবাসী প্রগতি ক্লিনিক নামের একটি ক্লিনিক ভাংচুর করে সেটিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও করেছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে ইমরান হোসেন (২৬) নামের ওই রোগীর মৃত্যু হয়।
ইমরান হোসেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভারসিটির বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র। তাঁর বাড়ি শহরের ১ নং ওয়ার্ডের নতুনপাড়ায়।ইমরানের বাবা খায়রুল আলম জানান, হাইড্রোসিলের (অন্ডকোষ স্ফীত হয়ে যাওয়া এক ধরণের রোগ) ব্যথা শুরু হলে বেলা তিনটার দিকে ইমরান হোসেনকে প্রগতি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিক মালিক হাফিজুর রহমান জরুির ভিত্তিতে অপারেশনের পরামর্শ দেন। ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে ছেলেকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ এসএম নুরউদ্দিন রুমি এবং মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক তাপস কুমার সরকার অস্ত্রোপচার কক্ষে প্রবেশ করেন। ঘণ্টাখানেক পর অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে রোগীকে বেডে নেওয়ার পরই রোগীর মৃত্যু হয়। খায়রুল আলম আরও বলেন ,নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেবিকা তাঁকে জানিয়েছেন, অপারেশনের সময়ে ভুলক্রমে পুরুষাঙ্গের একটি শিরা কেটে ফেলায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দুই চিকিৎসক দ্রুত ক্লিনিক ত্যাগ করেন।
এদিকে ইমরানের মৃত্যুর খবরে ক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী ক্লিনিকে হামলা চালায়। তারা ক্লিনিক ভাঙচুর করে। বিক্ষুব্ধ লোকজন ক্লিনিকের সামনের সড়কে অগ্নিসংযোগসহ মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়ক অবরোধ করেন। ক্লিনিক মালিক হাফিজুর রহমানকে ধরে মারধোরের এক পর্যায়ে তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সুপার হামিদুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে হাফিজুর রহমানের মোবাইলে যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে অস্ত্রোপচার কক্ষে থাকা দুই চিকিৎসক এস এম নুর উদ্দীন রুমি ও তাপস কুমার সরকারের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের করুণ মৃত্যু ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। চিকিৎসকের ভুল অপারশনের কারণে ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে কিনা পুলিশ তা তদন্ত করে দেখবে। চিকিৎসক অপরাধী হলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে রোগীর পরিবার মামলা করলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, প্রগতি ক্লিনিকটি অনুমতি ছাড়াই গত ১২ বছর ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত একাধিকবার জরিমানা করলেও ক্লিনিকটি বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জেলায় এ রকম অবৈধ প্রায় ৪২টি ক্লিনিক আছে। যেগুলো সিভিল সার্জনের কাছে শুধু একটি দরখাস্ত দিয়েই পরিচালিত হয়ে আসছে। অবৈধ এই ক্লিনিকের সঙ্গে একশ্রেনীর চিকিৎসকদের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। তাই কেউ এতদিনেও অবৈধ ক্লিনিকগুলো বন্ধে পদক্ষেপ নেয়নি।