মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল হক, আবদুল লতিফ তালুকদার ও খান মো. আকরাম হোসেনের বিচার শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। গতকাল বুধবার তাঁদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই বিচার শুরু হলো।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল এই অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। আগামী ২ ডিসেম্বর এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।
অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য থাকায় গতকাল শেখ সিরাজুল, আবদুল লতিফ ও খান মো. আকরামকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আসামির কাঠগড়ায় এই তিনজনের উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনের আদেশ পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনাল। পরে ট্রাইব্যুনাল আসামিদের কাছে জানতে চান, তাঁরা দোষী না নির্দোষ? জবাবে তিনজনই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন।
অভিযোগ গঠনের আদেশ অনুসারে, মুক্তিযুদ্ধকালে সিরাজ মাস্টার নামে পরিচিত সিরাজুল হক ছিলেন তৎকালীন বাগেরহাট মহকুমা রাজাকার বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার এবং লতিফ ও আকরাম ছিলেন সদস্য।
সাত অভিযোগ: প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ মে সিরাজুল হকের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী বেলা দুইটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বাগেরহাটের রণজিৎপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি লুট ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় ৪০-৫০ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার জন্য বাগেরহাটের রামপাল থানার ডাকরা গ্রামের কালীমন্দিরে দু-তিন হাজার হিন্দু জড়ো হয়েছিলেন। একাত্তরের ২১ মে বেলা তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে সিরাজুল হকের নেতৃত্বে রাজাকাররা ওই হিন্দুদের ওপর হামলা চালালে ৬০০-৭০০ জন গণহত্যার শিকার হন।
তৃতীয় অভিযোগ, একাত্তরের ১৮ জুন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিরাজুল হকের নেতৃত্বে রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা বাগেরহাট সদর উপজেলার বেসরগাতী, কান্দাপাড়া ও কান্দাপাড়া বাজার এলাকার ২০ জনকে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতন করে। পরে তাঁদের মধ্যে ১৯ জনকে হত্যা করা হয় এবং একজন ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান।
চতুর্থ অভিযোগ, একাত্তরের ১৪ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত বাগেরহাট সদর উপজেলার চুলকাঠি, চুলকাঠি বাজার ও ঘনশ্যামপুর এলাকায় হামলা চালিয়ে ৫০টি ঘর লুট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় সিরাজুল হকের নেতৃত্বে রাজাকাররা সাতজনকে হত্যা করে।
পঞ্চম অভিযোগ, একাত্তরের ৫ নভেম্বর বেলা তিনটার দিকে সিরাজুল হক, লতিফ ও আকরামের নেতৃত্বে রাজাকাররা বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার শাঁখারিকাঠিতে হামলা চালিয়ে ৪২ জনকে আটক করে। পরে আটক করা ব্যক্তিদের নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। অনেক বাড়ির মালামাল লুট করে ঘরে আগুন দেওয়া হয়।
ষষ্ঠ অভিযোগ, একাত্তরের ২২ অক্টোবর সকালে সিরাজসহ তিনজনের নেতৃত্বে রাজাকাররা কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে নিরস্ত্র পাঁচজনকে আটকের পর নির্যাতন ও হত্যা করে। সপ্তম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাতটার দিকে লতিফ তালুকদার ও খান মো. আকরামের নেতৃত্বে রাজাকাররা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেলিগাতীতে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান শিকদারকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা করে।