বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকার অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে সংসদীয় কমিটি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়েই প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতদের ইনসেনটিভ বোনাস দেয়া, ঠিকাদারের বিল থেকে আয়কর না নেয়া এবং সম্পূরক শুল্ক আদায় না করাসহ বিভিন্নভাবে সরকারের এ বিপুল পরিমাণ টাকা ক্ষতি হয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করায় বিটিসিএলকে তিরস্কার করেছে কমিটি। গতকাল সংসদ সচিবালয়ে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির ১২তম বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানানো হয়। কমিটির সদস্যরা বলেন, এসব কর্মকাণ্ডের জন্য বিটিসিএল আজ ধ্বংসের মুখে। এ জন্য তাদের তিরস্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি টাকা আদায়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। বৈঠকে বিটিসিএলের ২০০৮-২০০৯ এবং ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরের হিসাব সম্পর্কিত মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বার্ষিক অডিট রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হয়। অডিট আপত্তিতে এসব অনিয়ম উঠে আসে। সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া বিটিসিএলের কর্মকর্তা, কর্মচারীকে ইনসেনটিভ বোনাস বাবদ প্রায় দুই কোটি ৬৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়। কোম্পানির সংঘ স্মারকের আইনের আলোকে বোর্ড সভার অনুমোদন নিয়ে ইনসেনটিভ দেয়ার কাজটি সঠিক হয়েছে বলে সংসদীয় কমিটি মতামত দেয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা সার্কুলারে সরকারি কোম্পানির টাকা ব্যয়ের আগে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সম্মতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে বলে জানায়। এদিকে বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তির কাছে টেলিফোনের বকেয়া বিল বাবদ প্রায় দুই কোটি ৭০ লাখ ৭২ হাজার টাকা অনাদায়ী বলে অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এসব অনাদায়ী বিল আদায় না হলে সংযোগ বিচ্ছিন্নের সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। প্রয়োজনে গণদাবি আইন ১৯১৩ প্রয়োগ করারও সুপারিশ করে কমিটি। বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল দেয়ার সময় আয়কর কেটে না রাখায় সরকারের প্রায় ১৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে বৈদেশিক মালামাল ছাড়ের জন্য অগ্রিম সম্পূরক শুল্ক বা সিডি ভ্যাটের উদ্বৃত্ত প্রায় ৬ কোটি ২ লাখ ৮১ হাজার টাকা ফেরত আনা হয়নি। এ জন্য আগামী সাত দিনের মধ্যে অনাদায়ী টাকা আদায়ের সুপারিশ করেছে কমিটি। ওই সময়ের মধ্যে আরেকটি ঠিকাদারি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিল থেকে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায় না করায় ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়। এই টাকাও আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আদায়ের সুপারিশ করেছে কমিটি। বৈঠকে কমিটির সদস্য আবদুস শহীদ, মোহাম্মদ আমান উল্লাহ, আ ফ ম রুহুল হক, আফসারুল আমীন, শামসুল হক টুকু, একেএম মাঈদুল ইসলাম, রুস্তম আলী ফরাজী এবং বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খান অংশ নেন। এছাড়া বৈঠকে সিএন্ডএজি মাসুদ আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী, বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস উপস্থিত ছিলেন।