বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. একেএম নুর-উন-নবী বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে উধাও হয়ে গেছেন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলেছে। পদোন্নতিবঞ্চিত শিক্ষকরা বিভিন্ন দাবিতে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ শিক্ষক বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ফলে কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। অবস্থা বেগতিক দেখে ভিসি ডিসেম্বরে অনার্স ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং রাতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এ জন্য তিনি লিখিতভাবে ভিসির দায়িত্ব দেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোর্শেদুল ইসলাম রনিকে। তিনি সহধর্মিণীসহ ঢাকা যাওয়ার জন্য মাইক্রো ভাড়া করেন। রোববার রাত সাড়ে ১০টায় গাড়িতে তিনি মালপত্র তুলে দেন এবং যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠবেন- এমন সময় ক্যাম্পাসে জানাজানি হয় ভিসি ঢাকায় চলে যাচ্ছেন আর আসবেন না। এমন খবরে শিক্ষক ড. মাসুম পাটোয়ারীর নেতৃত্বে ৪২ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ইউনিয়নের নেতা আতিকুজ্জামান সুমনের নেতৃত্বে ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদি হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী ভিসির গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। এতে করে চালক গাড়ি চালাতে পারছিলেন না। অবশেষে ভিসি গাড়ি থেকে নেমে সবার সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষক, কর্মকর্তা- কর্মচারীরা আশ্বাস দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে। এর প্রেক্ষিতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে ঢাকা যাবেন বলে উপস্থিত সবাইকে জানান এবং ঢাকা থেকে আবার ফিরে আসবেন। এরপর চালককে খোঁজাখুঁজি করে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। সবাই খোঁজাখুঁজি করে চালক হেদায়েতকে খুঁজে আনলেও চালক জানান গাড়ির চাবি তার কাছে নেই। চাবি কে বা কারা নিয়ে গেছে। এতে করে বেকায়দায় পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। সূত্রটি জানায়, পদত্যাগকারীদের একটি চক্র চালকের কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে গেছে। একটি চক্র ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে নানা ধরনের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এব্যাপারে কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা আতিকুজ্জামান সুমন জানান, ভিসি স্যারের চলে যাবার কথা শুনে আমরা ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে সেখানে যাই। এরপর স্যারের ভাড়া করা গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ি। আমরা স্যারকে আশ্বস্ত করি আন্দোলনকারীরা আপনাকে সহযোগিতা করবে এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে। ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদি হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান জানান, আমরা স্যারের ভাড়া গাড়ির সামনে প্রায় দেড়শ’ শিক্ষার্থী শুয়ে পড়ি। যাতে স্যার ঢাকায় যেতে না পারে ভাড়া গাড়িতে করে। এদিকে ড্রাইভারের কাছে চাবি না থাকার কারণে ড্রাইভার হেদায়েতকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নেই। তিনি অন্যত্র চলে গেছেন। এতে করে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শাহ্ তানজিউল ইসলাম জানান, স্যার অভিমান করে চলে গেছেন। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা অনিশ্চয়তার মুখে পড়লো। ওদিকে ভিসিবিরোধী একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য ভিসিপন্থি শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দলীয় লোকজন নিয়ে নাটক করে গেছেন। ভিসির উচিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধান করা। কিন্তু তা না করে সমস্যার মধ্যে ফেলে গেছেন। পদত্যাগকারী ও আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. সাইদুল হক বলেন, ভিসির একগুঁয়েমির কারণে গভীর সঙ্কটে পড়লো সদ্য প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে ভাড়া করা গাড়িতে ভিসি চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি ভিসির পাজেরো ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-০০৪৭ গাড়িটি গেলো কোথায়?