1. ccadminrafi@gmail.com : Writer Admin : Writer Admin
  2. 123junayedahmed@gmail.com : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর
  3. swadesh.tv24@gmail.com : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম
  4. swadeshnews24@gmail.com : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর: : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর:
  5. hamim_ovi@gmail.com : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  6. skhshadi@gmail.com : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান: : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান:
  7. srahmanbd@gmail.com : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  8. sumaiyaislamtisha19@gmail.com : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান
আমি কি মেয়ে, বিধবা নাকি শুধু মানুষ? - Swadeshnews24.com
শিরোনাম
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা সোনার দাম আরও কমল রাজধানীতে পানি, স্যালাইন ও শরবত বিতরণ বিএনপির জায়েদ খানের এফডিসিতে ফেরা হবে কিনা, জানালেন ডিপজল কক্সবাজার জেলায় কত রোহিঙ্গা ভোটার, তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট সিনেমা হলে দেওয়া হচ্ছে টিকিটের সঙ্গে ফ্রি বিরিয়ানি ঢাকায় বড় জমায়েত করতে চায় বিএনপি ১৫ বছর পর নতুন গানে জেনস সুমন যশোরে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জমি দখলের অভিযোগ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-ডিপজল প্যানেলের জয়লাভ গোবিন্দগঞ্জে অটোচালক দুলা হত্যার মূল আসামি আটক চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু পলাশবাড়ীতে উপজেলা নির্বাচনে অনলাইন মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেই বিএনপি বলে বিরোধীদল দমন’ এবার বুবলী-শাকিবের ‘কোয়ালিটি টাইম’ নিয়ে মুখ খুললেন অপু

আমি কি মেয়ে, বিধবা নাকি শুধু মানুষ?

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৪
  • ৩১৩ Time View

বিকাল থেকেই চারদিক কেমন অন্ধকার হয়ে আছে। মুষলধারায় বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে। অনেকদিন খরার পর বৃষ্টি হলে মাটির সোঁদা গন্ধ বের হয়। আজও মাটির ঘ্রাণ নেওয়ার জন্য লম্বা শ্বাস নেই। কিন্তু ঢাকা শহরে মাটির সেই গন্ধ কোথায়? একবার ভাবলাম রমনা পার্কে যাই। পরক্ষণেই পরিকল্পনাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম, এখন রমনা পার্কে হাজার হাজার লোক থাকবে। সেখানে ভিজতে যাওয়াটা উচিত হবে না। একবার কক্সজারের বিচে ভিজেছিলাম। সমুদ্রের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছি আর অঝর ধারায় বৃষ্টি। অপূর্ব অনুভূতি। তবে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ না শুনলে বোধহয় জীবনে খানিকটা অপূর্ণতা রয়েই যেত। ছোটবেলায় কত রাত চুপিচুপি বৃষ্টির টুপটাপ শব্দের সঙ্গে খেলা করেছি তার হিসাব নেই। আমাদের মফস্বলের বাড়িটা দুই বিঘার উপর। প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো বাড়ি। এমন কোনো ফুল-ফলের গাছ নেই যা আমাদের বাসায় ছিল না। সন্ধ্যা হলে কামিনী ফুলের গন্ধে সাপ আসে শুনে সবসময় গাছটিকে এড়িয়ে চলতাম। কিন্তু প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে অনেক দূর হেঁটে আব্বার সঙ্গে বকুলতলায় গিয়ে ফুল কুড়ানো আমার চাই-ই চাই। আমাদের বাসার পেছন দিকে মস্ত একটা তেঁতুল আর একটা শেওড়া গাছ। ‘ও’ দুটি গাছেই ভূত থাকে শুনেছি। ভূতের ভয়ে কখনো আমি রাতের বেলা ঘরের বাইরে বের হতে চাইতাম না। আমার পড়ার টেবিলের সামনে মস্ত একটা আম গাছ। প্রতিদিন সন্ধ্যায় একটা নিম পাখি গাছের ডালে বসে ডাকত নিম্ নিম্। আমার মনে হতো ও কোনো অশুভ সংকেত নিয়ে এসেছে। আমি ভয়ে চেয়ারে সেঁটে থাকতাম। আমাদের বাগানে অনেক ঝিঁ ঝিঁ পোকা থাকত। ওরা ডাকত ঝিঁ ঝিঁ। ঝিঁ ঝিঁ পোকা ধরে খেলাটা আমার খুব প্রিয় ছিল।

কালের আবর্তে কোথায় হারিয়ে গেছে বকুলতলার বকুলগাছ, কামিনী ফুল, নিম্ পাখি আর ঝিঁ ঝিঁ পোকা। তবে ভূতের ভয় আমার এখনো আছে। চারতলার বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছি। দেখছি বলাটা ঠিক হবে না, উপভোগ করছি। বৃষ্টির ঝাপটা আমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। আমার বড় ভালো লাগছে। ঢাকা শহরে বৃষ্টির এ স্পর্শটুকু পাওয়ার জন্য নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। সুখী মনে হচ্ছে। একটা দামি ডায়মন্ড পরে কি মানুষ এত সুখ পায়? আমি জানি না। বেরসিকের মতো আমার টেলিফোনটা বেজে উঠল। আমার বান্ধবীর ফোন। ‘ও’ হাসছে। হাসতে হাসতে বলল কি ভাবছ? আমি বললাম, ভাবছি আমার সঙ্গের লোকটার কথা। ‘ও’ বলল ভেবো না, হুর-পরীদের সঙ্গে আছে। আমি বললাম, তোমারটার খবর কি? ‘ও’ আরও জোরে হাসতে লাগল। বলল, ‘আমারটা পৃথিবীর হুর-পরীদের সঙ্গে আছে।’ আমরা দুজনেই হাসতে লাগলাম। শব্দ করে জোরে জোরে। হাসতে হাসতে আমরা দুজনেই কাঁদতে থাকলাম টেলিফোনে দুজনে দু’প্রান্ত থেকে। বৃষ্টি বোধহয় এমনি। কোনো কিছু লুকানো যায় না।

ছোটবেলায় ইচ্ছা ছিল ডাংগুলি খেলব। মা কখনো খেলতে দেননি। বলেছেন এটা ছেলেদের খেলা। মেয়ে আর মানুষ_ এ দুটি শব্দের সঙ্গে কখনো লড়েছি কখনো সমঝোতা করেছি। নতুন করে আমার জীবনে যুক্ত হয়েছে আরও একটি শব্দ। ‘বিধবা’। আমার স্বামীর মৃত্যুতে আমার গোটা পরিবার হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে। শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। আমার মা আর ভাইয়েরা আমার জন্য অনেক কষ্ট পাচ্ছেন। আর আমি সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছি।

আমার দাদি বিধবা হয়েছিল আজ থেকে ৮৫ বছর আগে। ২২ বছর বয়সে। আমার বড় খালা এক সন্তান নিয়ে বিধবা হয়েছিল প্রায় ৭৮ বছর আগে মাত্র ১৮ বছর বয়সে। আমার শাশুড়ি বিধবা হয়েছিল আজ থেকে ৪৫ বছর আগে ছয় সন্তানসহ ৩৫ বছর বয়সে। তাদের তিনজনকেই আমি কখনো সাদা শাড়ি ছাড়া অন্য কোনো রং পরতে দেখিনি। এত ছোট বয়সে তারা বিধবা হয়েছিল, তাদের কি কোনো রং পরার ইচ্ছা জাগেনি? কখনো? নাকি পরিবার আর সমাজের নিষ্পেষণে সব ইচ্ছাকে জলাঞ্জলি দিতে হয়েছিল।

নিজেকে আবারও একবার বড় ভাগ্যবতী মনে হয়। আমার জন্ম যদি আড়াইশ কিংবা তিনশ বছর আগে হতো। সে সময় বিধবাদের অভিশপ্ত মনে করা হতো। সামাজিক কিংবা আনন্দের কোনো অনুষ্ঠানে তাদের প্রবেশাধিকার ছিল না। কারণ তারা অভিশপ্ত। সমাজ-সংসার তাকে ঘৃণার চোখে দেখত। অনুকম্পার চোখে দেখত। এমনকি ১৭৭৪ থেকে ১৭৮১ পর্যন্ত বিধবা হওয়ার শাস্তিস্বরূপ শাড়ির নিচে ব্লাউজ এবং ছায়া পরার অধিকারও তাদের ছিল না। যত শীতে কাঁপুক, বৃষ্টিতে ভিজুক একটার পরিবর্তে দুটি কাপড় তাদের পরতে দেওয়া হতো না, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে সারাদিন উপোস কাটাতে হতো। আরও আগে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার অধিকার তাদের ছিল না। কারণ তারা হতভাগিনী, অপয়া। তাদের নিজেদের পাপে তাদের স্বামীদের মৃত্যু হয়েছে! শ্বশুরবাড়ির লোকের কাছে ছিল তারা প্রচণ্ড ঘৃণা আর অবহেলার শিকার। কোনো পুরুষের সামনে যাওয়াটা ছিল তখন মহাপাপ। স্বামীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই তার চুল ন্যাড়া করে দেওয়া হতো। যেন তাকে কুৎসিত আর কদাকার দেখায়। কিন্তু তারপরও অনেক অল্প বয়সী বিধবাকে স্বামীর পরিবারের পুরুষদের লাম্পট্যের শিকার হতে হতো। আরও আগে এ ঝামেলাই ছিল না। স্বামীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে (হিন্দু ধর্মে) স্ত্রীকে একই চিতায় জীবন্ত জ্বালিয়ে মারা হতো। সেটি যত অসম বিয়েই হোক না কেন। মেয়েটি হয়তো বিয়ের মানেই ঠিকমতো বুঝেনি, কারণ বাল্যবিবাহ। তবুও স্বামীর চিতায় জ্বলতে হতো ঠিকই। কত নৃশংস আর অমানবিক। আমি অবাক হয়ে ভাবি, এসব প্রথা কি সময়ের বিবর্তনে আপনা থেকেই প্রচলিত হয়েছিল, নাকি স্বার্থান্বেষীরা বিধবা নারীদের করতলে রাখার জন্য প্রচলন করেছিল। বিধবা নারীর সাদা শাড়িতে আর তার উপোস থাকাতেই যদি স্বামীর প্রতি তার শ্রদ্ধা ভালোবাসা প্রকাশ পায় তাহলে অন্যদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম নয় কেন? আমার শাশুড়ি আমাকে বলেছেন, ‘সবসময় নিচু গলায় কথা বলবে, তোমার এখন পায়ে পায়ে বিপদ’। আমি আরও একবার শুনি আমার শাশুড়ির নিঃশব্দ ক্রন্দন তার কষ্টের ইতিহাস। দাদি মারা গেছেন প্রায় ১০০ বছর বয়সে। দাদার মুখটি কি তার তখনো মনে ছিল! আমার বড় খালা খানিকটা খিটখিটে মেজাজের ছিলেন। খালা এবং দাদির মুখে কখনো আমি খালু আর দাদার কথা শুনিনি। হয়তো আমি ছোট ছিলাম বলে আমার সঙ্গে তারা শেয়ার করতে চাইত না। কিন্তু আমার শাশুড়ির মুখে শ্বশুরের কথা শুনেছি বহুবার। আমার শাশুড়ি বলতেন ‘বউ, বুকের ঠিক মাঝখানটায় কষ্ট লাগে।’ আমারও কি ৮০ বছর বয়সে বুকের মাঝখানে এমন কষ্ট হবে? আমি মনে মনে ভাবি।

আমার দাদা-খালু, শ্বশুরের পরিবর্তে যদি আমার দাদি-খালা, শাশুড়ি মারা যেত তাহলে কি একই অবস্থা বরণ করতে হতো তাদের? আমাদের এই সমাজ, সংসার কি একই চোখে দেখত তাদের? নাকি তারা পুরুষ বলে তাদের অবস্থান খানিকটা ভিন্ন হতো। আমি অঙ্কে সবসময় নব্বইয়ের ঘরে নম্বর পেয়েছি কিন্তু মাঝ বয়সে এসে জীবনের এসব অঙ্ক আমি মেলাতে পারি না কখনো। জন্ম মুহূর্ত থেকে একটা মেয়ে অবচেতন মনে বুঝতে শুরু করে সে মেয়ে মানুষ। সে অপরের অধীন। পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে বাঁচার অধিকার তার নেই। জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে হয়তো বাবা-ভাই, স্বামী নয়তো ছেলে। এ পরাধীনতার অন্তরালে থাকতে থাকতে একসময় নিজের বিবেকের স্বাধীনতাটুকুও সে হারিয়ে ফেলে। আর সে মেয়েটি যদি বিধবা হয় তাহলে তো কোনো কথাই নেই। জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা। একজন বিধবা মহিলার কি এতটুকু সাহস আছে! সে প্রতিবাদী হবে, নিজের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হবে? আমাদের সমাজ, সংসার কি এটা হতে দেবে? আমাদের দেশে বাবা-মা ষোল বছর বয়স থেকেই একটি মেয়ের বিয়ের কথা চিন্তা করতে থাকে। সুন্দরী হলে তো কথাই নেই। মান-সম্মান রক্ষার্থে যত তাড়াতাড়ি পারে বিয়ে দিয়ে দেয়। কারণ আমাদের সমাজে সব দোষ মেয়েদের। জীবন চলার পথে ‘ও’ যদি একা হয়ে যায় কখনো, তখন কি করবে? আমাদের দেশে অসহায় বিধবা মহিলাদের জন্য কোনো ভাতা নেই। চাকরিতে কোনো কোঠা ব্যবস্থা নেই। যে স্বামী-সংসারের জন্য নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়, সেখানেও তার জন্য প্রাপ্য আইন অনুযায়ী অনেক কম। বাবার সংসারে সে একজন ভাইয়ের দুই ভাগের এক ভাগ আর স্বামীর সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগের অংশীদার। এসব করে নাকি মহিলাদের সম্মানিত করা হয়েছে। আমি ভাবি, কিভাবে?

একবার ঢাকা ক্লাবে এক সুন্দরী মহিলার সঙ্গে দেখা হলো। বয়স ত্রিশের কোঠায়। আমি আলাপের এক পর্যায়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনার স্বামী কিভাবে মারা গেছে?’ মহিলা হকচকিয়ে গেল। খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে ইতঃস্তত স্বরে বলল, ‘আপনি কিভাবে জানেন?’ এবার আমার অবাক হওয়ার পালা। আমি বললাম, ‘কেন? কি হয়েছে?’ মহিলা বলল, ‘আমি ঠিক বিধবাদের মতো থাকি না তো তাই।’ আমি বললাম, ‘বিধবাদের কিভাবে থাকতে হয়? সবসময় সাদা কাপড় পরে মন খারাপ করে থাকতে হয়? নিজেকে অসহায় আর ছোট মনে করতে হয়? নিজেকে অপরাধী মনে করতে হয়? নাকি দাম্ভিক পুরুষের পৌরুষের জন্য নিজেকে আড়াল করে রাখতে হয়? যদি আপনি মরে যেতেন, আপনার স্বামীর ক্ষেত্রেও কি এমনটাই হতো?’ সমাজ সবসময় নারীদের কাছ থেকেই বলিদান আশা করে, ত্যাগী মনোভাব আশা করে। নাকি পুরুষদের অলিখিত ডিসিশন নারীদের উপর চাপিয়ে দেয়, মৃত্যুর পরও নারীদের পুরুষের অধিকারে রাখার জন্য। আমার মা বলে তুমি একা বাসায় কি করে থাকবে। আমি বলি আমি মধ্যবয়সী। আমার মা বলে তাতে কি, মেয়ে মানুষ। মাকে অভয় দেওয়ার জন্য বলি, ভেবো না আমার সঙ্গে আমার আপারা আছেন, আমার ভাইয়েরা আছেন, তারা সবসময় আমার পাশে থাকবেন। মনে মনে বলি সব বিধবার তো আর আমার মতো আপা এবং ভাই নেই। তাদের কি অবস্থা! আমার দাদি, খালা, শাশুড়িরও তো আপা এবং ভাই ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ছিল না, মেম্বারশিপ ছিল না, কোনো পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না, মুক্তভাবে মতপ্রকাশের কোনো অধিকার ছিল না। প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধ করার কোনো প্রয়াসও ছিল না। তারা পরিবারের আর সমাজের দাসত্বকে জীবন মনে করত। জীবনের জন্য, জীবিকার জন্য অন্যের অনুগ্রহের ওপর নির্ভর করতে হতো।

ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা শুধু আমাদের শোষণই করেনি, কিছু ভালো কাজও করেছিল। রাজা রামমোহনের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৮২৯ সালে তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম ব্যান্টিং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রুলে সতীদাহ প্রথা রহিত করেন। আজ থেকে ১৯৩ বছর আগে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ প্রচলন করেন ২৬ জুলাই, ১৮৫৬ সালে। ১৬৫ বছর আগে। কিন্তু বিধবাদের যে সর্বত্যাগী বৈরাগ্য মূর্তি আমাদের মানসপটে অাঁকা আছে, এত বছর পরও তা আমাদের মানসিকতা থেকে মুছে ফেলতে পারছি না কিছুতেই। সতীদাহ প্রথা রোধে শরীরটা হয়তো জীবিত আছে কিন্তু মনটা এখনো দাহিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কখনো নিজের ইচ্ছায়, কখনো পরিবারের চাপে, কখনো সমাজের নিষ্পেষণে। বিধবাদের যেন কোনো কাজ নেই, কোনো দায়িত্ব নেই, সুখী হওয়া বা আনন্দ পাওয়ার কোনো অধিকার নেই। বেঁচে থাকতে হবে, না বাঁচার মতো সবার চোখের অন্তরালে, শব্দ করে হাসা বা কথা বলা যাবে না, গায়ে রঙিন কাপড় জড়ানো যাবে না, পাছে কোনো পুরুষ শিহরিত হয়, এই ভয়ে। অবিবাহিত বা বিবাহিত মহিলাদের কোনো দোষ নেই কারণ তারা কোনো না কোনো পুরুষের অধীন। হয় বাবা নয়তো স্বামী। আমাদের সমাজ পুরুষবিহীন মহিলাদের আধিপত্য মেনে নেবে কেন? হোক আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতা মহিলা এবং বিধবা। কিন্তু তারা তো বাবা এবং স্বামীরই প্রতিনিধিত্ব করছে। তা না হলে আমাদের সমাজে নারীরা এত নির্যাতিত-নিপীড়িত হচ্ছে কেন? প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই দেখতে হচ্ছে_ খুন, রেপ, ইভ টিজিং। যৌতুকের জন্য নির্যাতন ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বেশির ভাগই সমাজের নিচুতলার কাহিনী। সমাজের উঁচুতলায় এসব ঘটনা ঘটে না তা ঠিক নয়। ঘটে। তাদের অবস্থা আরও ভয়াবহ, আরও করুণ। বলতেও পারে না সইতেও পারে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লোকলজ্জার ভয়ে মুখে প্লাস্টিক হাসি লাগিয়ে বাস্তবতার সঙ্গে আপস করতে হয়। তাদের কষ্টগুলো চার দেয়ালের মাঝে গুমড়ে গুমড়ে কেঁদে ফিরে। মহিলাদের ক্ষমতাশালী করার জন্য সংসদে যে গুটিকয়েক কোঠা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে তা মহিলাদের সম্মানকে আরও বেশি খর্ব করেছে। অনুপযুক্ত মহিলা সংসদ সদস্যদের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য এবং আচরণ দেশের সাধারণ মানুষকে বিস্মিত করছে, নিরুৎসাহিত করছে।

আমি আবার বিধবা থেকে নারীতে ফিরে গেছি। বলেছিলাম না, এ মুহূর্তে আমি আত্দপরিচয় সংকটে ভুগছি। আমি মেয়ে মানুষ, বিধবা মানুষ, নাকি শুধু মানুষ? বুঝতে পারছি না ঠিক কোনটা হবে। আমি খুব অল্প কিছুদিন আগে বিধবা হয়েছি। আমি কি এখন শোকে বিহ্বল হয়ে বিলাপ করব! আমার পরিবার, আমার সমাজ কি আমাকে শোকবিহ্বল দেখতে চায়? সারাক্ষণ? তাহলে আমার ছোট বাচ্চা দুটোকে কে দেখবে? তাদের খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা? আমার বৃদ্ধ মা? আমার বৃদ্ধ শাশুড়ি? পুরো পরিবারের প্রতি যে দায়িত্ব তার কি হবে? দেশ, সমাজ, সমাজের মানুষ তাদের প্রতি কি কোনো কর্তব্য নেই আমার? দায়বদ্ধতা নেই? নাকি আমি মানুষ নই! শুধুই বিধবা! যাই হোক আমি অনেক ভাগ্যবতী। সতী (হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী) প্রমাণিত হওয়ার জন্য স্বামীর সঙ্গে সঙ্গে আমাকেও আত্দাহুতি দিতে হয়নি। এ পর্যন্ত কেউ আমাকে অপয়া আখ্যা দেয়নি। হোক না সবাই যে যেভাবে পারছে আমাকে ঠকানোর চেষ্টা করছে। আমার স্বামীর সব সম্পত্তি বেদখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। সবচেয়ে কাছের মানুষ যারা আমাকে সাহায্য করার কথা ছিল, দুঃসময়ে আমার পাশে থাকার কথা ছিল, আমার বাচ্চাদের মাথায় ভরসা আর নির্ভরতার হাত রাখার কথা ছিল, স্বার্থের টানাপড়েনে তারা নিজেদের রং বদলিয়ে অনেক দূরে চলে গেছে। তারপরও আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করছি। আমি সুস্থ আছি, এখনো বেঁচে আছি। এ জীবনে আমার পাওয়া অনেক। এই যে এত মানুষের ভালোবাসা, কষ্টের সময় পাশে থাকা, কজনের ভাগ্যে জোটে। তাই পৃথিবীর কাছে আমার কোনো অনুযোগ নেই, আক্ষেপ নেই। প্রকৃতির নিজস্ব কিছু নিয়ম আছে। এ নিয়মের আবর্তেই হয়তো কাছের মানুষ দূরে চলে যায় আর দূরের মানুষ কাছে। আমি একা একা বসে আছি। এখন অনেক রাত। বৃষ্টি খানিকটা ধরে এসেছে, শুধু ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি। তাহলে চুপিসারে আকাশটাও কি কাঁদছে আমার সঙ্গে, নাকি আমি আকাশের সঙ্গে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 SwadeshNews24
Site Customized By NewsTech.Com