রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলনকে (৩৯) নৃশংস ভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার বিকেলে বাসায় ফেরার পথে নগরীর বিহাস এলাকায় সন্ত্রাসীদের কবলে পড়েন ওই শিক্ষক। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভার্তি করে। পরে বিকেল ৩.৪৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। অখতার হোসেনের ছেলে নিহত শফিউলের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে।
রামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মমতাজ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ওই শিক্ষকের মাথা, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য ওপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পর তিনি মারা যান।
এদিকে বিভাগীয় শিক্ষক নিহত হওয়ার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে জড়ো রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় রাস্তার দুই পাশে কয়েক শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। এছাড়াও এ নির্মম হত্যার প্রতিবাদে রোববার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষনা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা তানভীর আহমেদ জানান, বিকেল ৩টার দিকে প্রফেসর শফিউল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোটরসাইকেলে করে তার নিজ বাসা চৌদ্দপায় এলাকায় ফিরছিলেন। পথে বিহাসের কাছাকাছি এলে ৫/৬ জন দুর্বৃত্ত তার পথ রোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা মুমূর্ষূ অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে রামেক হাসপাতালের ৮নং ওয়ার্ডে ভর্তি করে। পরে বিকেল ৩.৪৫ মিনিটে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন জানান, গুরুতর জখম অবস্থায় প্রফেসর শফিউল ইসলামকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তখনই তাঁকে অস্ত্রোপচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। বিকেলে অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
সন্ধ্যার দিকে নিহত শফিউল ইসলামের প্রতিবেশীরা জানান, বেশ কিছু টাকা নিয়ে তিনি ক্যাম্পাস থেকে তার নিজ বাসায় ফিরছিলেন। এসময় পথের মধ্যে কয়েকজন স্থানীয় ছিনতাইকারী তার পথ রোধ করে তাকে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক প্রতিবেশী জানান, তার পারিবারিক অনেক সমস্যা ছিল। নারী ঘটিত বিষয়েও স্থানীয় প্রভাব শালী সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করতে পারে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর নীলুফার সুলতানা বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষকরা সবসময় একা চলাফেরা করে। এভাবে শিক্ষকদের উপর এভাবে হামলা করে হত্যা করা হলে আমাদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা কোথায়? তিনি এ ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করেন।
নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, আমি সেখানে গিয়েছিলাম, কে বা করা এঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে আমরা প্রফেসরের উপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।
প্রতিবাদে বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধ
এদিকে বিভাগীয় শিক্ষক নিহত হওয়ার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হতে থাকে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাবেশ করতে থাকে। বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা সমাবেশে বক্তব্য দেয়। ঘটনার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত তারা রাস্তা অবরোধ করে রাখবে বলে সমাবেশ থেকে ঘোষনা দেওয়া হয়।
এদিকে রাস্তা অবরোধের ফলে রাস্তার দুই পাশে বাস, ট্রাকসহ প্রায় কয়েক শতাধিক যানবহন আটকরা পড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর ড. তারিকুল হাসান, শুনেছি শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেছে। আমি বিষয় গুলো খুব দ্রুত দেখছি বলে জানান তিনি।
শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন
প্রফেসর ড. এ কে এম শফিউল ইসলামকে হত্যার প্রতিবাদে রোববার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচী ঘোষনা করেছেন শিক্ষকেরা। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর প্রনব কুমার পা-ে এ কর্মসূচি ঘোষনা করেন।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা একজন শিক্ষককে দিনে-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করবে এটা মেনে নেয়া যায়না। আমরা শিক্ষক হিসেবে কোনভাবেই এটা মেনে নিতে পারছিনা। শিক্ষকেরা প্রফেসর শফিউল ইসলামের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে আপাতত রোববার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচী পালন করবে। ওইদিন পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে বলে তিনি জানান।
দাফন
এদিকে নিহত শিক্ষকের সহকর্মী সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্যারের একমাত্র ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় গনযোগাযোগের ছাত্র জেভিন ও পরিবারের ইচ্ছা মাফিক তাকে বগুড়া জেলার সেনাতলা উপজেলায় নিজ হায়াতপুর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে।(ছবি সংযুক্ত)
রাবিতে শিবিরের বিক্ষোভ: ছাত্রলীগের মহড়া
রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। শনিবার সকাল ৯টার দিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এ বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। পরে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়কে মহড়া দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে চাঁপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গত ২৯ অক্টোবর চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে শিবিরের মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত শিবির নেতা তোহুরুল ইসলামের হত্যাকারীদের বিচার ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবির নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় বাসস্ট্যান্ড থেকে শতাধিক শিবির নেতাকর্মী একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় টুকিটাকি চত্বরে এসে শেষ। মিছিলে রাবি শিবিরের অফিস স¤পাদক লাবিব আব্দুল্লাহ, অর্থ স¤পাদক সাকিব হাসান, প্রচার স¤পাদক ফরহাদ রেজা, তথ্য স¤পাদক ইবনে সিনা প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। শিবিরের মিছিলের পরপরই ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লবের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বর থেকে মহড়া দিতে দেখা গেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। পরে ক্যম্পাস প্রদক্ষিন শেষে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দলীয় টেন্টে এসে জড়ো হয়। সেখানে নিহত রাবি ছাত্রলীগের এসএম হল সভাপতি খলিলুর রহমানের জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। ক্যাম্পাসে শিবির ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে শিক্ষাক্ষীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, আমি শুনেছি শিবির কর্মীরা ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে। তবে ছাত্রলীগের বিষয়টি আমি বলতে পারবো না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপার বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর ড. তারিকুল হাসানের সাথে মুঠো ফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।