বাংশাদেশে শিশু মৃত্যুর ৪৩ শতাংশই পানিতে ডুবে ঘটে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বিশ্বব্যাপী পরিচালিত এক জরিপের ভিত্তিতে সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচও’র তথ্য মতে, পানিতে ডুবে মৃত্যু বর্তমানে বিশ্বের অনিচ্ছাকৃত মৃত্যুর ঘটনাগুলোর মাঝে তৃতীয় অবস্থানে আছে। সার্বিক হিসাবে এ পরিস্ংখ্যান দাঁড়ায় ৭ শতাংশ। সংস্থাটি জানায়, বছরে প্রায় ৩ লক্ষ ৭২ হাজার মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে।
এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিন্ম এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এই মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ। এমনকি তা কোনো কোনো দেশে ৯১ শতাংশ পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই অনিচ্ছাকৃত মৃত্যুর ঘটনা হার পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয় অঞ্চলে আশঙ্কাজনকভাবে উচ্চ। তবে আফ্রিকা অঞ্চলে এ হার সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাজ্য বা জার্মানির চেয়ে এ হার ১০ থেকে ১৩ গুণ বেশি।
ডব্লিউএইচও জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার ৪৫ শতাংশ, যা দেশটিকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ২শ’ ৭৩ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ হাজার ১শ’ ৮৪ কোটি টাকা প্রায়) ক্ষতির সম্মুখীন করে। অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডায় এ ক্ষতির পরিমাণ যথাক্রমে ৮৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার এবং ১শ’ ৭৩ মিলিয়ন ডলার।
সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, বিশ্বব্যাপী ১-৪ বছর বয়সী শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। এরপরই এ হার ৫-৯ বছরের মাঝে বেশি। তবে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৫-১৪ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ পানিতে ডুবে যাওয়া। ১-১৪ বছরের মাঝে অপমৃত্যুর প্রধান পাঁচটি কারণের মাঝে অন্যতম হলো পানিতে ডুবে যাওয়া বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই পরিসংখ্যান জরিপের আওতায় থাকা ৮৫টি দেশের মাঝে ৪৮টির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
সংস্থাটি বলে, বাংলাদেশে ১-৪ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর যতোগুলো কারণে আছে, তার মাঝে সবচেয়ে উপরে আছে পানিতে ডুবে মৃত্যু। এ হার এখানে ৪৩ শতাংশ, অর্থাৎ দেশে সামগ্রীক শিশু মৃত্যুর প্রায় অর্ধেকই এই কারণে।
সংস্থাটি আরো জানায়, বিশ্বব্যাপী পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা মেয়েদের তূলনায় ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রায় দ্বিগুণ ঘটে। এবং ২৫ বছরের নিচে এই ঘটনা বেশি ঘটে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনার প্রায় ৭৫ শতাংশই ঘটে বন্যার কারণে। এছাড়া অসতর্ক জলভ্রমণ, পানিতে মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়াও (যেমন- মাছ ধরা) এ মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রতিবেদনে সরকারীভাবে সাঁতার শেখায় উদ্বুদ্ধ করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরামর্শও দেওয়া হয়েছে দেশগুলোকে এই মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে।