দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, উচ্চ শিক্ষার সুযোগ প্রসারিত করার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবদান রাখছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধূ আন্তর্জাতিক কনভেশন সেন্টারে গত ১৬ নভেম্বর রোববার সকালে আয়েজিত এ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অর্ধশাতিক বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে পাঠদান করছে। ইউল্যাব নিজেদের ক্যাম্পাসে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং আরো বৃহৎ ক্যাম্পাস গড়ছে এমন খবর খুবই উৎসাহজনক।
মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সহজ করতে দেশের বাস্তবতা ও শিক্ষাথীদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ সীমাবদ্ধ রাখলে আরো বেশি শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার পরিবেশ ও গুণগত মান বাড়ানোর জন্য আরো প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বর্তমান সরকার একটি আধুনিক ও স্বশিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ সমাজ গঠন করতে চায়। এজন্য শিক্ষাখাতের অগ্রগতিতে সরকার সব পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল হামিদের প্রতিনিধিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক । স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউল্যাবের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ইমরান রহমান। বক্তব্য রাখেন ইউল্যাবের বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. কাজি আনিস।
সমাবর্তন বক্তা সৈয়দ শামসুল হক বলেন, বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও প্রকৃতি জ্ঞানের আধার। তাই, পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষার বাইরেও যে শিক্ষা আছে সে দিকে নজর দিতে হবে। পরবর্তী জীবন সংগ্রামের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। জ্ঞানের আলোয় সমাজ ও দেশকে আলোকিত করতে হবে। অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, ‘একটা ডিগ্রি অর্জন করা মানে বাস্তব জীবনে পা দেয়া। আর এই নতুন জীবনে পা দেয়া শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাই। আমাদের লক্ষ্য হলো আগামী ১০ বছরের মধ্যে ইউল্যাবকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাতে করে এ বিশ্ববিদ্যায়টি দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হতে পারে।
ড. কাজি আনিস বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা যাবতীয় খরচ নির্ধারণ করার জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে যা আমাদের কাছে উচ্চ শিক্ষার বিকাশে সহায়ক বলে মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা বুঝি, বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য শিক্ষাকে সবার সীমার মধ্যে রাখা এবং প্রতি বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্য রোধ করা। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমলাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি ও বেতন নিধারণ মূলত ইউল্যাবের মত প্রকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সমাবর্তনের শুরুতেই গ্রাজুয়েটরা শোভাযাত্রা সহকারের মিলনায়তনে প্রবেশ করেন। এর পর পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ফ্যাকাল্টি মেম্বার, ডিন ও ভাইস চ্যান্সেলকে নিয়ে শোভাযাত্রা সহকারে প্রবেশ করেন চ্যান্সেলরের মনোনীতি প্রতিনিধি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তারপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ শেষে শিক্ষামন্ত্রী সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
১ হাজার ৮০ জন গ্রাজুয়েট তৃতীয় সমাবর্তনে অংশ নেন। তাদের মধ্য থেকে গোল্ড মেডেল বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস, গ্রাজুয়েশন সনদ প্রাপ্তি ঘিরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেশন সেন্টার মুখর হয়ে উঠে। পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা আর জীবনের স্মরণীয় মুহুর্তটি উজ্জ্বল করে রাখতে শিক্ষার্থীরা সেলফি, গ্রুপ ফটো সেশন আর আনন্দ আড্ডায় কাটিয়েছেন পুরো দিন। গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য ২০০৪ সালে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে গড়ে ওঠে ইউল্যাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তন হয়েছিল ২০১২ সালে। সে সময় ৭০৪ জন গ্রাজুয়েট তাদের সনদ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের দ্রুত এগিয়ে চলা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা নিজেদের সম্পৃক্ত করছে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, ‘ আমরা গুণগত মান সম্পন্ন শিক্ষার মাধ্যমে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের অংশীদার হবার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
মার্কিন সমাজ সংস্কার ফ্রেডরিক ডগলাস’র আলোচিত ভাবনা ‘এডুকেশন মিনস লাইট অ্যান্ড লিবার্টি’র আলোকে এবারের সমাবর্তনের মূল বিষয় ছিল ‘লাইট অ্যান্ড লিবার্টি’। যার মূল কথা- শিক্ষার আলোয় আত্মার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে।
শিক্ষার মাধ্যমে অজ্ঞতা থেকে মুক্তি ও ভবিষ্যত নির্ধারিত হয়। অজ্ঞতা থেকে মুক্তির মাধ্যমেই অভাব, বেকারত্ব, দারিদ্র্যসহ বিভিন্ন সঙ্কট থেকে উত্তরণ সম্ভব।