স্বৈরাচার শব্দটির মানে বলতে আমরা বুঝি, যে শাসক তাঁর একক ইচ্ছায় পুরো দেশ শাসন করেন। যাঁর কাছে দেশের শাসনতন্ত্র মূখ্য নয়। যিনি মনে করেন ক্ষমতা এমন এক জিনিস, যেটা শুধু তাঁর কাছেই শোভা পায়। ‘জাতীয় পার্টি’র নেতা এইচ এম এরশাদ একজন স্বৈরাচার ছিলেন। ‘৯০’ এর জোটবদ্ধ তীব্র আন্দোলনের মূখে তাঁর পতন হয়। যে জোটবদ্ধ আন্দোলনের শীর্ষ দুই মূখ ছিলেন শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়া। সে সময় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে তাঁদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ-যুগল ছিল ‘গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্টা’। মানে যে গণতন্ত্র আমরা এখন ভোগ করছি। তাঁদের দেওয়া গণতন্ত্র আমাদের দিয়েছে অর্থনৈতিক মুক্তি এবং একটি সূখী সমাজ। যে সমাজে ধনী-গরীবের কোনো বৈষম্য নেই। যে সমাজের মানুষ হরতাল-অবরোধ না দেখতে দেখতে শব্দগুলোই ভূলতে বসেছে। যে সমাজের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঊদাহরণ বিশ্ব খোঁজে মেলা ভার। যে সমাজে হানাহানি, কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি প্রায় হয় না বললেই চলে। যে সমাজের রাজনীতিবিদগণ একেকজন মহাত্মা গান্ধী!
হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে আশাবাদী জাতিও আশা করেন না, যে তাঁদের রাজনীতিবিদরা সবাই মহাত্মা গান্ধী হয়ে যান। তবে তাঁরা এটাও আশা করেন না, তাঁদের রাজনীতিবিদরা সবাই গণতন্ত্রের অতন্ত্র সৈনিক হয়ে যান। দূর্ভাগা বাঙালি তো চায়ই না। গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্টায় ‘৮৩’ থেকে ‘৯১’ পর্যন্ত ৮০০’শয়ের বেশি মানুষ রাস্তায় জীবন দিয়েছিল। তাই গণতন্ত্রের কথা বললে এই বঙ্গে সবকিছুই জায়েয। গণতন্ত্রের জন্যই বেগম জিয়া ক্ষমতায় চিরস্থায়ী হতে চেয়েছিলেন। গণতন্ত্রের জন্যই শেখ হাসিনা জোর আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্টা করেছিলেন। এই গণতন্ত্রের জন্যই তিনি আবার সেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ককে গলা টিপে হত্যা করেছেন। এবং শুরুর দিন থেকে আজকে পর্যন্ত গণতন্ত্রের অপরিসীম স্বার্থে দুই নেত্রী ‘স্বৈরাচারী গণতন্ত্র’ প্রতিষ্টায় অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছেন।
এসব সইতে সইতে হয়তো বাঙালির আর তা নিয়ে দুঃখ নেই। কিন্তু সেদিন গণতন্ত্রের জন্য যাঁরা অকাতরে প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের একজন ছিলেন শহীদ নূর হোসেন। তিনি যাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন, আজ রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেই স্বৈরাচারের সাথে এক টেবিলে বসে খাওয়াদাওয়া করেন। জানতে খুব ইচ্ছা করে, এটাও কি গণতন্ত্রের জন্য?