প্রথমেই গতানুগতিক প্রশ্ন দিয়েই শুরু করি। ঢাকা এসে কেমন লাগছে?
হুম, আমি কিন্তু গতানুগতিক উত্তর দিতে পারছি না হা. হা.. হা…। কারণ বাংলাদেশ আমার পিতৃভূমি। তাই বলতে পারেন, আমি বাংলাদেশের মেয়ে, থাকি কলকাতায়। এখানে নাড়ির টানে আমাকে আসতেই হবে। ফরিদপুরে আমার পিতামহী ও পিতার বাড়ি। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের আগেই তারা কলকাতা চলে যান। কিন্তু আমাদের শেকড় তো এখানেই প্রথিত। তাই অন্য ১০ জন পূর্ব বাংলার মানুষের মতো আমিও নিজের দেশ নিয়ে নস্টালজিক টান অনুভব করি। আর নিজের দেশে আসতে পারলে কার না ভালো লাগে বলুন! বলতে পারেন ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছা থাকলেও সব সময় আসতে পারি না। তবে আসার সুযোগ পেলে কি যে ভালো লাগে তা হয়তো বুঝিয়ে বলতে পারব না। প্রথমবার সম্ভবত ২০১০ সালে এসেছিলাম। দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত গৌতম ঘোষের ‘মনের মানুষ’ ছবির শুটিংয়ে অংশ নিতে। এরপর গত বছর একটি ফ্যাশন হাউসের দ্বার উন্মোচনে এসেছিলাম। আর এবার এলাম পুরোপুরি এ দেশের ছবি ‘সত্তা’য় অভিনয় করতে। তাই আবারও আসার সুযোগ পেয়ে আমি খুবই উচ্ছ্বসিত। মনে হচ্ছে, কলকাতার মতোই নিজের বাড়িতে বসে শুটিং করছি।
ফরিদপুরে কখনো যাওয়া হয়েছে?
না, সেই সুযোগ হয়ে ওঠেনি। কারণ তিনবারই মহা ব্যস্ততা নিয়ে এসেছি। অাঁটসাঁটো শিডিউল থাকায় ডানে-বাঁয়ে ঘুরে তাকাতে পারিনি। এবারও যেতে পারছি না। কারণ শুক্রবার দেশে ফিরতে হবে। ওখানেও ম্যালা কাজ আছে। তবে ডিসেম্বরে ‘সত্তা’র শুটিংয়ে অংশ নিতে আবার আসছি। তখন একা নয়, মাকেও নিয়ে আসব। ফরিদপুরে পিতৃভূমিতে যাব। পূর্বপুরুষের বাস্তু-ভিটায় গিয়ে প্রাণভরে শ্বাস নেব। বলতে পারেন নিজেকে রিচার্জ করে নেব। আমি বিশ্বাস করি, পূর্বপুরুষের ভিটায় গিয়ে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিলে নিজের আত্দার মধ্যে একটা মরা নদী আবার কলকলিয়ে বইতে শুরু করবে। কারণ ওখানকার রক্ত আমার শিরায় শিরায় বইছে।
ঢাকার ছবি ‘সত্তা’য় কাজের অনুভূতি কেমন?
চমৎকার। এ ছবির নির্মাতা হাসিবুর রেজা কল্লোল মেধাবী নির্মাতা। কাজ করতে গিয়ে তার এই গুণের ব্যাপারটি টের পেয়েছি। তবে প্রায় এক বছর আগে যখন আমাকে তিনি এ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন, গল্প শোনান তখনই টের পেয়েছিলাম, ভালো একটি ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছি। আর এখন দেখছি সেই ধারণার হিসাবটি দুয়ে দুয়ে পাঁচ নয়, চারই হয়েছে।
আর কো-আর্টিস্ট শাকিব খান?
আগেই তার সম্পর্কে অনেক শুনেছি। ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক তিনি এ কথাও জেনেছি। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি আসলেই একজন গুণী অভিনেতা তিনি। অভিনয়ের সংজ্ঞা তার করায়ত্তে। সহযোগিতার ক্ষেত্রটিও ম্যাচিউরড। সব মিলিয়ে গর্ব করার মতো একজন অভিনেতা তিনি। তার সঙ্গে কাজ করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।
কলকাতায় গত সপ্তাহে ‘পারাপার’ মুক্তি পেল, ওই ছবিতে এ দেশের আরেক অভিনেতা আহমেদ রুবেলের সঙ্গে কাজ করেছেন। তার কাজ কেমন লেগেছে?
অসাধারণ কাজ করেছেন তিনি। তাকেও শক্তিমান অভিনেতা বলতে হবে। কারণ কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি একজন জাত অভিনেতা তিনি। ‘সত্তা’ ছবিতে আবার দুজন একসঙ্গে কাজ করছি। ‘পারাপার’-এ আমরা ছিলাম প্রেমিক-প্রেমিকা। আর এ ছবিতে বাবা-মেয়ে। আবারও তার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে সত্যি খুব ভালো লাগছে।
ঢাকার ছবিতে নিয়মিত হবেন?
একেবারে নিয়মিত হয়তো হতে পারব না। কারণ বলিউড এবং টালিগঞ্জের ছবিতেও কাজ করছি। তবে এখানে বেশি সময় দেওয়ার ইচ্ছে আছে। আর ইচ্ছে থাকাটাই স্বভাবিক। কারণ একে তো নিজের দেশ, তার ওপর আবার এখানকার মানুষ এবং শিল্পীরা অনেক ভালো। তাদের মনটা সত্যিই খুব উদার। তারা আমাকে ভীষণভাবে টানে। ঢাকার রাস্তায় বিলবোর্ডে একটা লিখা পড়েছি, ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’। ‘মনের মানুষ’ চলচ্চিত্রের শুটিং থেকে এ পর্যন্ত যতবার এখানে এসেছি ততবারই এখানকার মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা পেয়ে ধন্য হয়েছি। এত ভালোবাসা আর আন্তরিকতা কোথাও খুঁজে পাইনি। তাই মন খুলে আকাশে বাতাসে ঝড় তুলে অজস্রবার বলতে পারি- ‘আমার হৃদয়জুড়ে শুধুই বাংলাদেশ’