বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব বাংলাদেশ ২০১৪-এর মঞ্চ প্রস্তুত। শাস্ত্রীয় অঙ্গের সুর-তালের এই মহোৎসবের পর্দা উঠবে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা ৩০ মিনিটে।
উৎসবে কণ্ঠ ও যন্ত্রে ধ্রুপদ, খেয়াল, তারানা, ঠুমরি, ভজন, চৈতি, দাদরাসহ অন্যান্য শাস্ত্রীয় পরিবেশনার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীরা জাহির করবেন নিজেদের রাগদারী ও তবিয়তদারী। থাকবে ভরতনাট্যম ও কত্থক নাচের মুদ্রার খেলা।
রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে পাঁচ দিনের এই উৎসবের উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতির উদ্দেশে।
আঙ্গিক ও আয়োজনের দিক থেকে তৃতীয় বছরের এই উৎসব হবে কিছুটা ভিন্নমাত্রার। এবারের উৎসবে যোগ দিচ্ছেন জয়পুর ঘরানার পুরোভাগের খেয়াল গাইয়ে বিদুষী কিশোরী আমনকর এবং উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সরোদিয়া গোয়ালিয়র ঘরানার ওস্তাদ আমজাদ আলী খান। প্রথমবারের মতো আরও দেখা যাবে কর্ণাটক সংগীতের মৃদঙ্গমের জাদুকর গুরু কারাইকুড়ি মানি, দাগর পরিবারের ধ্রপদের প্রতিনিধি পণ্ডিত উমাকান্ত ও রমাকান্ত গুন্দেচ্চা (গুন্দেচ্চা ব্রাদার্স), জয়পুর ঘরানার অশ্বিনী বিড়ে দেশপাণ্ডেসহ আরও কয়েকজনকে। এ ছাড়া নিয়মিত শিল্পীদের মধ্যে থাকবেন পণ্ডিত শিব কুমার শর্মা (সন্তুর), পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া (বাঁশি), পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী (কণ্ঠ), পণ্ডিত রাজন-সাজন মিশ্র (কণ্ঠ), পণ্ডিত উলহাস কশলকর (কণ্ঠ), বিদুষী অরুণা সাইরাম (কণ্ঠ), উদয় ভাওয়ালকর (কণ্ঠ), শহীদ পারভেজ (সেতার), কৌশিকী চক্রবর্তী (কণ্ঠ) প্রমুখ। সব মিলিয়ে এবারের আয়োজনে অংশ নেবেন ১৬০ জনের মতো শিল্পী।
এবারের উৎসবে জার্মানি থেকে আনা হয়েছে উন্নতমানের শব্দযন্ত্র ডিঅ্যান্ডবি অ্যামপ্লিফায়ার ও স্পিকার। ব্যয়বহুল এই শব্দযন্ত্র বাংলাদেশে আগে কখনো ব্যবহার করা হয়নি। ২০ থেকে ২০ হাজার হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সির ২৪টি মূল স্পিকার ও ১২টি সাব-স্পিকার ৭০ হাজার ওয়াটের বেশি শব্দ ছড়িয়ে দেবে মাঠজুড়ে। ফলে শ্রোতারা মাঠজুড়ে পাবেন পরিমিত শ্রুতিমধুর শব্দ।
উৎসবের কাজে ভারত থেকে এসেছেন শব্দ প্রকৌশলী শুভায়ন গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আগের দুবার পেছনের সারির শ্রোতারা শাস্ত্রীয় সংগীতের রস আস্বাদনে কিছুটা বঞ্চিত ছিলেন। কারণ যন্ত্র পেছনে যে শব্দ সরবরাহ করেছে তা স্পষ্ট ছিল না। কিন্তু এবার সামনে-পেছনের শ্রোতারা সমানভাবে শুনতে পাবেন। ওপরে ও নিচের ফ্রিকোয়েন্সি যথেষ্ট ভারসাম্যপূর্ণ হওয়ায় এবার কণ্ঠ ও বাদনের শব্দ শ্রোতাদের কাছে শ্রুতিমধুর হয়ে ধরা দেবে।
স্কয়ার নিবেদিত এবারের উৎসবের শিল্পী নির্বাচন এবং মঞ্চ, মাঠসজ্জাসহ আয়োজনের সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাজ করছে ব্লুজ। ব্লুজের কর্ণধার ফরহাদুল ইসলাম জানান, প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এবারের আয়োজনে মাঠের গ্যালারির অংশ বাদে মোট ১৫ হাজার দর্শকের জন্য আসন পাতা হয়েছে।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের প্রথম আলোকে বলেন, বেঙ্গলের এই আয়োজন বর্তমানে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় মাপের সংগীত উৎসবে পরিণত হয়েছে। ভারতের সবচেয়ে বড় উৎসব পুনের সওয়াই গন্ধর্ব ভীমসেন মহোৎসব। এর আয়োজন করে আর্যসংগীত প্রসারক মণ্ডল। বেঙ্গলের আয়োজন দেখতে গন্ধর্ব উৎসবের কর্মকর্তা এবার ঢাকায় আসবেন।
বাংলাদেশে উচ্চাঙ্গসংগীত চর্চা অব্যাহত রাখা ও প্রচার-প্রসারের জন্য বেঙ্গল ফাউন্ডেশন চার দিনব্যাপী উচ্চাঙ্গসংগীতের এ উৎসব শুরু করে ২০১২ সাল থেকে। তবে এবার থেকে উৎসব হবে পাঁচ দিনের।
আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ সরন, স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। পরের চার দিনের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন যথাক্রমে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ফজলে হাসান আবেদ।
উৎসবের সম্প্রচার সহযোগী মাছরাঙা টেলিভিশন, সার্বিক সহযোগিতায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার, সহযোগিতায় ব্র্যাক ব্যাংক, রেডিও অংশীদার এবিসি, মিডিয়া অংশীদার চারবেলা চারদিকে, মেডিকেল অংশীদার স্কয়ার হাসপাতাল ও সহযোগিতায় বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়।
post by usman gony
swadeshnews24.com