বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক যেন পৌরাণিক ফিনিক্স পাখি। পাখিটি যতবার আগুনে ঝাঁপ দেয়, ততবারই নতুন করে বেঁচে ওঠে। তেমনি ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তৈরি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ হওয়ার পর আবার দারুণভাবে ফিরে এসেছে।
বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিককে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কমিউনিটি ক্লিনিক-হেলথ রেভল্যুশন ইন বাংলাদেশ নামের বইটিতে। গতকাল বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
বইটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবদ্দশায় বারবার মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। তিনি বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন। তাঁর মনে হয়, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশে একটি নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। শঙ্কার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন করে তা হলো অদূর ভবিষ্যতে যদি সরকার পরিবর্তন হয়, তাহলে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।’
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কোথাও কোথাও স্থানীয় লোকজন ক্লিনিকগুলো টিকিয়ে রেখেছিল, কোথাও আবার বেসরকারি সংস্থা সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করেছে। পরে ২০১০ সালে নতুন একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে সরকার। সহযোগিতা দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সাধারণ মানুষ ক্লিনিকগুলো তৈরিতে নিজেদের জমি দিয়েছে। দুই কামরার ঘর তুলে সেখানেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেন স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা।
বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম বলেন, ১৩ হাজারের ওপরে ক্লিনিকে মোট ৩৭ কোটিবার সেবা নিয়েছে মানুষ। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করা মানে প্রসূতি মায়ের ওপর আঘাত করা। অন্যায়, পাপ।’
সরকার পরিবর্তন হলে কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা কোথায় যাবেন—একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের এ প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হবে।
বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি এন পারানিথারান বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক গোটা বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুন এক ধারণা। প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের এই অনবদ্য ধারণার জনক বাংলাদেশ। ৩০ ধরনের ওষুধ দিয়ে গর্ভবতী ও প্রসূতি মা, শিশুদের চিকিৎসা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, জ্বর, ডায়রিয়ার চিকিৎসা দিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়েছিল। এলাকার লোকজনের উদ্যোগে নিরাপদ প্রসব হচ্ছে ২০০টির মতো ক্লিনিকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দীন মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেছেন, চোখের সাধারণ অসুখগুলো যেন কমিউনিটি ক্লিনিকেই নির্ণয় করা যায়, সে জন্য ক্লিনিকের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের পরিচালক মাখদুমা নার্গিস বলেন, সংখ্যার দিক থেকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা গেছে। সর্বোচ্চ গুণগত মান নিশ্চিতে কাজ চলছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় ট্যাব দেওয়া হয়েছে। অনলাইনে নিয়মিত প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে সপ্তাহে অন্তত একদিন চিকিৎসকদের কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে সেবা দিতে হবে।
post by usman gony
swadeshnews24.com