প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। মালয় প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের আমন্ত্রণে তিন দিনের এই সরকারি সফর। প্রত্যাশিত এই সফরে সেখানকার শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। জনশক্তি বিষয়ে একটিসহ স্বাক্ষর হবে চার সমঝোতা স্মারক। তবে গতানুগতিক বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বাইরে এই সফরে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে ‘বিনিয়োগ’। সফরে একাধিক কর্মসূচিতে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে তাদের প্রস্তাবগুলো শেখ হাসিনার কাছে জানাবেন। এর আগে ২০০০ ও ২০১০ সালে শেখ হাসিনা মালয়েশিয়া সফর করেছিলেন।
সফরসঙ্গী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ নাজিব বিন তুন হাজি আবদুল রাজাক গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরের সময়ই শেখ হাসিনাকে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে যান। সেই ফিরতি সফর হিসেবে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। তার সঙ্গে থাকছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সফরসঙ্গী মন্ত্রীরা বিভিন্ন চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন। আগামীকাল বুধবার মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় অবস্থিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আনুষ্ঠানিক আলোচনার এজেন্ডায় আছে জনশক্তি রপ্তানি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংস্কৃতি, পর্যটন, উচ্চশিক্ষা ও পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি। বৈঠক শেষে মালয়েশিয়ার সারাওয়াক প্রদেশে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের ওপর একটি প্রটোকল, পর্যটন সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে একটি সমঝোতা স্মারক, কূটনৈতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টে ভিসা অব্যাহতিবিষয়ক চুক্তি এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মালয়েশিয়ায় আনুমানিক ৪ লাক ৫০ হাজার বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কর্মরত আছেন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স অন্যান্য দেশের তালিকায় পঞ্চম। এই বিবেচনায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের কর্মক্ষেত্রের প্রসার এবং কর্মী নিয়োগের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে এ সফরে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবেন। বাংলাদেশে সম্ভাব্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরার পর বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্পর্কে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের প্রস্তাব শুনবেন। মন্ত্রী জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রকৌশল ও সার্ভিস সেক্টরসহ ১০৩টি প্রকল্পে মালয়েশিয়া প্রায় ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এসব প্রকল্পে প্রায় ১৭ হাজার বাংলাদেশি কর্মী আছেন। এ সংখ্যাকেই আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।আলোচনায় জিটুজির গতি : বেসরকারি খাতের একশ্রেণির রিক্রুটিং এজেন্সির মাত্রাতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় নেওয়ায় এবং প্রতারণার কারণে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করেছিল মালয়েশিয়া। সরকারের ঐকান্তিক চেষ্টায় ২০১২ সালে জিটুজি চুক্তির মাধ্যমে সরকারি পর্যায়ে কর্মী পাঠানো শুরু হয়। ২০০৯ সালে শ্রমবাজারটি বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কয়েক লাখ টাকায় যে কর্মী পাঠিয়েছে, সেখানে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় জিটুজি পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। এতে কম অভিবাসন ব্যয়ে বেশি বেতন পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন কর্মীরা। পাশাপাশি চাকরি পাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়েই মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করতে পারছেন তারা। কিন্তু অধিক মুনাফা লাভে গুটিকয় জনশক্তি রপ্তানি ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতায় হুমকিতে পড়েছে জিটুজি পদ্ধতি। আর এ কারণেই চুক্তি সই হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচ হাজার কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো সম্ভব হয়েছে। যদিও ২০১২ সালের নভেম্বরে চুক্তি সই হওয়ার সময় বলা হয়েছিল, কয়েক মাসেই কমপক্ষে ১০ হাজার কর্মী পাঠানো হবে। এই গতি নিয়ে উঠেছে সমালোচনা। বলা হচ্ছে, ট্রলারে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার অন্যতম কারণ জিটুজির ধীরগতি। তাই এই গতিকে বাড়িয়ে বছরে কমপক্ষে ৫০-৬০ হাজার শ্রমিক পাঠানো যায় কি না, তা নিয়েই মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করবে বাংলাদেশ। সারওয়াকে ১২ হাজার কর্মী পাঠাতে প্রটোকল : সরকারি মাধ্যম জিটুজি পদ্ধতিতে কর্মী প্রেরণের জন্য ২০১২ সালে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকে কিছুটা সংশোধনী এনে প্রটোকল স্বাক্ষর করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মালয়েশিয়ার মূল ভূখণ্ডের বাইরে থাকা সারওয়াক প্রদেশেও কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার অন্যান্য স্থানের তুলনায় সারওয়াকে শ্রমমূল্য কিছুটা কম হওয়ায় এখানেও কিছু সংশোধন আনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কর্মীরা যেখানে জিটুজির আওতায় সাধারণভাবে মাসে ৯০০ রিঙ্গিত (২১ হাজার টাকা) বেতন পান সেখানে সারওয়াক প্রদেশে মাসিক বেতন হবে ৮০০ রিঙ্গিত (১৯ হাজার টাকা)।

posted by ashiqur rahman swadeshnews24.com