রাজধানীর মিরপুর সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে ৭ ডিসেম্বর। শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম। এর মধ্যেই স্কুলমাঠে এখনো চলছে স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার বস্ত্রমেলা। স্কুলের ক্লাসে চলছে পরীক্ষা, মাঠে চলছে মেলা। এমন পরিস্থিতিতে ওই স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ এখন কেমন, তা সহজেই অনুমেয়।
পরীক্ষার সময় মেলা বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার কথা গত সপ্তাহে প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন ঢাকা-১৪ (পল্লবী) আসনের এই সাংসদ। কিন্তু সে কথা রাখা হয়নি।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে ইলিয়াস মোল্লার সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এমনকি খুদেবার্তা পাঠানোর পরও তিনি কথা বলেননি।
২ ডিসেম্বর ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘মেলা হবে জানতাম, তবে পরীক্ষার সময় যে হবে, এটি জানতাম না। পরীক্ষার সময় মেলা বন্ধ থাকবে, আমি নির্দেশ দিয়ে দিচ্ছি।’
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ওই স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, দুই ভাগে প্রতিদিন শিশুশ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীর পরীক্ষা চলছে মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের এই স্কুলে। সকাল আটটায় শুরু হয়ে প্রথম ভাগের পরীক্ষা শেষ হয় ১০টার দিকে। আধঘণ্টা বিরতির পর দ্বিতীয় ভাগে শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টায়। স্কুলটির নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে স্কুলের কার্যক্রম চলে বিকেল তিনটা পর্যন্ত। এর মধ্যেই সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় মেলা, শেষ হয় রাত ১১টার দিকে।
২০ নভেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই বস্ত্রমেলার উদ্বোধন করেন ইলিয়াস মোল্লা। মেলা চলবে ডিসেম্বর মাসজুড়ে। তবে বছরের বেশির ভাগ সময় সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে স্বাধীনতা দিবস, পয়লা বৈশাখ, ঈদ সামনে রেখে তাঁত-বস্ত্রমেলার আয়োজন করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁরা সবাই ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার ঘনিষ্ঠ লোক। এঁদের মধ্যে স্কুলটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ইসমাইল মাতবরও রয়েছেন।
জানা গেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত ইসমাইল মাতবরের ছেলে জিন্নাত আলী মাতবর মেলার তত্ত্বাবধানকারীদের অন্যতম।
অবশ্য জিন্নাত মাতবর মেলার সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার মাধ্যমে আয়োজিত এই মেলার অনুমতি আছে বলে তিনি দাবি করেন।
জিন্নাত মাতবর বলেন, ‘দলের চেইন মেইনটেইন করার জন্য উদ্বোধনের সময় এমপির সঙ্গে ছিলাম। আর এমপির অধীনেই তো এই এলাকার সব স্কুল।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও মেলা বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
তবে বিজয় দিবস উপলক্ষ বানিয়ে এবারই প্রথম সেনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ ধরনের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রায় ২১ বিঘা আয়তনের এই স্কুলের প্রায় ২০ বিঘা আয়তনের মাঠ রয়েছে। এই মাঠেই ছোট-বড় ৪১টি স্টল ভাড়া দিয়ে মেলা কর্তৃপক্ষ আয় করে নিয়েছে ২৫ লাখ টাকা। অথচ মেলার আয়োজনে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে মেলা কর্তৃপক্ষ কোনো অনুমতি কখনোই নেয় না বলে জানা গেছে।
অনুমতি না নিলেও স্কুলের সংযোগ থেকে পানি-বিদ্যুৎ মেলার মাঠে ব্যবহার করা হয়। এবার শুধু পানি ব্যবহার করা হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ বাইরে থেকে অবৈধভাবে নেওয়া হয়েছে।
স্কুলসূত্রে জানা গেছে, মেলা শুরু হওয়ার আগে তারা থানা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে এ ব্যাপারে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল।
থানার শিক্ষা কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বানু প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্কুলের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো চিঠি পাইনি। তবে মেলার ব্যাপারে আমাদের মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল। ভবিষ্যতে এ ধরনের মেলা আয়োজন করতে দেব না।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিরীন আক্তার এর আগে জানান, ২০১২ সালে মেলাটি বন্ধ করা হয়েছিল। পরের বছর তাঁদের না জানিয়ে আয়োজকেরা মেলা করেছিল। তবে এবার বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের এ ব্যাপারে কিছু বলেনি। তা ছাড়া কয়েকদিন মন্ত্রীর অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তাই কিছু করা যায়নি।’
post by Usman gony