সিলেটে ডাক্তার মহিউদ্দিন আলমগীর ওরফে এমএ খানের অপচিকিত্সায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত শিশুর বাবা সিলেটের গোলাপগঞ্জের নিমাদল উত্তরপাড়ার নূরুল আফছার গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করে অভিযুক্ত ডাক্তার এমএ খানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নূরুল আফছার জানান, তার শিশু কন্যা তাহরীন আফসার ‘অ্যাকিট লিউকোমিয়া’ নামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ভারতের কলকাতার রবীন্দ্রনাথ কার্ডিয়াক ইন্সটিটিউটে (দেবীশেঠি হাসপাতাল) চিকিত্সা করানোর পর সুস্থ হয়। ভারতের চিকিত্সকরা তাকে দেশে ফিরে মাঝে মধ্যে চেকআপ করানোর কথা বলেন। দেশে ফিরে তাহরীন সুস্থ হয়ে উঠে এবং স্থানীয় সদানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীতে তাকে ভর্তি করা হয়। বছরখানেক পর নূরুল আফছার তার মেয়ে তাহরীনকে চেকআপ করাতে ডাঃ এম এ খানের চেম্বার সিলেট মহানগরীর দরগা গেইটস্থ ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান। ডাঃ এমএ খান চেকআপ করে তাহরীনের শরীরে কোন রোগ না থাকা সত্ত্বেও হাতের শিরায় প্রতি তিন মাস পরপর ‘ভিনক্রিস্টিন-১ এমজি’ ইনজেকশন পুশ করতে থাকেন। আফছার জানান, সর্বশেষ গত বছরের ৩০ আগস্ট তাহরীনকে ডা. এমএ খানের কাছে নিয়ে যাই। ডাঃ এমএ খান ‘ভিনক্রিস্টিন-১ এমজি’ ইনজেকশনের সঙ্গে ‘ভিনক্রিস্টিন আইটি এবং ইএমটি এক্স-পিএফ নামক আরো দুটি ইনজেকশন মিশিয়ে মোট ৩টি ইনজেকশন হাতের রগের পরিবর্তে তাহরীনের মেরুদণ্ডে পুশ করেন। ওই সময় তাহরীন অস্বাভাবিক আচরণ ও খিচুনি দিতে শুরু করলে নূরুল আফছার হাতের রগের পরিবর্তে মেরুদণ্ডে ইনজেকশন দিলেন কেন প্রশ্ন করলে ডাঃ এমএ খান বলেন, ভুল হয়ে গেছে এবং তিনি মেরুদণ্ড থেকে ইনজেকশন ব্যাক করার চেষ্টা করেন। পরে তাত্ক্ষণিক কিছু চিকিত্সা দিয়ে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। তাহরীনকে প্রথমে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকার নিউরোলজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় ডাঃ এমএ খান তাহরীনকে ভারতের কলকাতার ইন্সটিটিউট অব নিউরো সাইন্স হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে তিনি তাহরীনকে সেখানে নিয়ে যান। সেখানকার ডাক্তাররা দীর্ঘ ৬ মাস তাকে লাইফ সাপোর্টে রেখে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে জানান, ‘ভিনক্রিস্টিন ইনজেকশন ভুলভাবে পুশ করার কারণে তাহরীনের ব্রেইনের কোষগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। তার অবস্থার আর কোন উন্নতি হওয়া সম্ভাবনা নেই। পরবর্তীতে মেয়ে তাহরীনকে নিয়ে নূরুল আফছার দেশে ফিরে আসেন। এরপর তাহরীনকে সিলেটের জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তাহরীন মারা যায়।
সংবাদ সম্মেলনে নূরুল আফছার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়ের চিকিত্সার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনুদান ১ লাখ টাকাসহ প্রায় কোটি টাকা ব্যয় করেছি। কিন্তু অপচিকিত্সক এমএ খানের ভুল চিকিত্সার কারণে মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি। নূরুল আফছার তার মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে ডাঃ এম এ খানকে আসামি করে গত ২ ডিসেম্বর কোর্টে একটি মামলাও করেছেন।
post by Usman gony