রাজধানীর হাজারীবাগে দিনে-দুপুরে আফজাল হোসেন ওরফে সাত্তার (৪২) নামে এক বিএনপি নেতাকে এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার বিকেলে মনেশ্বর রোডের তিন মাজারের গলিতে এই ঘটনা ঘটে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মমালা হয়নি।
নিহত আফজাল ৪৮নং ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি। আফজাল হোসেন সাত্তার বর্তমানে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য। তিনি বিএনপির সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর ঘনিষ্ট সহযোগী ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি একজন ট্যানারি (চামড়া) ব্যবসায়ী। নিহতের ভাইয়ের অভিযোগ, আওয়ামী লীগে যোগ না দেয়ায় তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতের স্ত্রী সামিনা আক্তার বলেন, ‘দুপুরে ট্যানারির মোড়ে নিজের শিফা এন্টারপ্রাইজ নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে দুপুরের খাবার খেতে তাদের ৮২ মনেশ্বর রোডে বাসায় আসেন আফজাল। সবার সঙ্গে বসে খাবার খান। এরপর আড়াইটার দিকে তিনি অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন।’
কাঁদতে কাঁদতে সামিনা বলেন, ‘আগে জানলে আমার স্বামীকে বাসা থেকে বের হতে দিতাম না। কে জানতো এই খাওয়াই তার জীবনের শেষ খাওয়া।’
আফজাল দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। আফজালের বাবার নাম হাজী আবদুল আজিজ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা পৌনে ৩টার দিকে আফজাল মনেশ্বর রোডের তিন মাজার এলাকায় পৌঁছান। এসময় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ৪/৫ জন দুর্বৃত্ত তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এসময় আশপাশের মানুষ দিকবিদিক ছুটতে শুরু করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আফজালের শরীরে একের পর এক গুলি বিদ্ধ হতে থাকে। আশপাশের মানুষ দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারলেও আফজাল আর পারেননি। মুহূর্তের মধ্যে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে দুর্বৃত্তরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে রাইসুল ইসলাম নামে এক পথচারী আফজালকে উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান আফজালের স্ত্রী সামিনা আক্তার, ছোট ভাই মোতালেবসহ অন্য আত্মীয় স্বজন। সেখানে এক হৃদয়বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়। স্বজনদের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, নিহতের মাথা, বাম পা, পিঠ ও কোমড়ে ৪ থেকে ৫ রাউন্ড গুলি বিদ্ধ হয়েছে।
নিহতের ছোট ভাই মোতালেব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আফজাল শুরু থেকেই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী তাকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিতে চাপ দিয়ে আসছিল। কিন্তু আফজাল তাদের কথায় রাজি হয়নি।’ মোতালেবের অভিযোগ, এই কারণেই তার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে।
পুলিশ জানায়, সাত্তার এলাকায় গালকাটা সাত্তার হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে আশপাশের থানায় ১০/১২ টি মামলা রয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০০৪ সালে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম জানান, ব্যবসায়িক, চাঁদাবাজি ও রাজনীতিকসহ কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। একই সাথে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামছে পুলিশ।
মহানগর পুলিশের ধানমণ্ডি জোনের সহকারী কমিশনার রেজাউল করিম বলেন, ‘নিহত আফজাল একজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।’
By- MD. SUHEL KHAN