বাংলাদেশের তিনটি প্রকল্পে ১০৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণসহায়তার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত মঙ্গলবার রাতে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। দাতা সংস্থার ঢাকা কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রকল্পগুলো হচ্ছে, তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন, বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ এবং দরিদ্র শিশুদের পুষ্টি ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশে সাহায্য প্রকল্প। চলমান প্রকল্প প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নের তৃতীয় ধাপে বাড়তি ঋণ দেয়া হচ্ছে ৪০ কোটি ডলার। আর দুর্যোগকালীন বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র প্রকল্পে দিচ্ছে সাড়ে ৩৭ কোটি ডলার। এছাড়া বাকি ৩০ কোটি ডলার দেয়া হবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় সহায়তা কর্মসূচিতে।
এই অর্থে বাংলাদেশের ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ উপকৃত হবে। বিশ্বব্যাংকের অঙ্গসংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (আইডিএ) হতে প্রাপ্ত সুদমুক্ত ঋণের মেয়াদ ছয় বছরের রেয়াতসহ ৩৮ বছর এবং সার্ভিস চার্জ ০.৭৫% প্রযোজ্য হবে।
এর মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের
শীতলতা কাটিয়ে বাংলাদেশকে সহায়তায় ভালোভাবেই ফিরল বিশ্বব্যাংক। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বিতর্কের পর বড় আকারে ঋণসহায়তা এটাই প্রথম।
এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানেস জাট বলেন, এই প্রকল্পগুলো দরিদ্র জনগণের জন্য সুযোগ সৃষ্টির বিশ্বব্যাংকের যে প্রচেষ্টা তাতে পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। প্রকল্পগুলো শিশুদের পুষ্টিমানের উন্নয়নের জন্য দরিদ্র মায়েদের নগদ অর্থ প্রদান করবে, শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে ও উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যালয় অবকাঠামো সৃষ্টি করবে। তিনি আরো বলেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কার্যক্রমগুলো নিশ্চিত করবে যে বাংলাদেশের দরিদ্রতম শিশুরাও যেন তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে পারে।
বিশ্বব্যাক সূত্র জানায়, চলমান ৩০০ মিলিয়ন তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য আরো ৪০০ মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনের হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করে প্রাথমিক শিক্ষামানের অগ্রগতি অব্যাহত রাখা হবে। এ ছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় মেধাভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ ও শূন্যপদ পূরণের নিশ্চয়তা বিধানে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষা বছরের প্রথম মাসেই ৯০ শতাংশ স্কুলে পাঠ্য বই বিতরণ নিশ্চিত করা হবে।
এ প্রকল্পের বিশ্বব্যাংক টাস্ক টিম লিডার আয়েশা ভাওদা বলেন, সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত কর্মসূচির জন্য অতিরিক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে ১ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে স্কুলমুখী করা এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করা নিশ্চিত হবে। আরো বেশিসংখ্যক শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা ছাড়াও এ কর্মসূচির অধীনে বিশেষ করে অনগ্রসর এলাকাসমূহে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা অব্যাহত রাখা হবে এবং স্কুলের সুযোগ-সুবিধা ও অবকাঠামোর মান উন্নত করা হবে।
বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্রের প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে_ প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি প্রবণতা কমিয়ে আনা। প্রকল্পের আওতায় ৯টি উপকূলীয় জেলায় ৫৫২টি নতুন বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, বিদ্যমান ৪৫০টির সংস্কার ও উন্নয়ন এবং আশ্রয়কেন্দ্রে সহজে পৌঁছানোর জন্য সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে।
এ প্রকল্পের টাস্ক টিম লিডার আনা সি ও’ডনেল জানান, এ প্রকল্পের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকার ১ কোটি ৪০ লাখ জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে। উন্নতমানের নির্মাণ ও দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ইস্পাত নির্মিত আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি হবে।
গত তিন দশকে দারিদ্র্যবিমোচনে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অগ্রগতি সত্ত্বেও অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশাল সংখ্যা, উন্নয়নের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর জন্য আয় সহায়তা কর্মসূচি প্রকল্প- অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশ অথবা দেশের সবচেয়ে দরিদ্র ৪২টি উপজেলার ২৭ লাখ মানুষ উপকৃত হবে। প্রায় ৬ লাখ মা তাদের সন্তানদের পুষ্টি ও বুদ্ধি বিকাশ কর্মকা-ে অংশগ্রহণের বিনিময়ে আয় সহায়তা লাভ করবেন।
স্মার্ট ক্যাশ কার্ড ব্যবহার করে এ সব মায়েদের ডাকঘর হিসেবে মাসিক নগদ প্রদান করা হবে। বিশ্বব্যাংকের এ প্রকল্পের টাস্ক টিম লিডার ইফফাত শরিফ বলেন, জন্মের আগে এবং জন্মের পর প্রথম দুই বছর পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করা হলে তা শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে সাহায্য করে। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর বেড়ে ওঠা ও বুদ্ধিবিকাশে সহায়তা তার পরবর্তী জীবনে আয় উপার্জনের ক্ষমতা বাড়াতে এবং এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে দারিদ্র্যের বিস্তাররোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। স্থানীয় সরকারের নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করাও এ প্রকল্পের লক্ষ্য। –
আশিকুর রহমান চৌধুরী স্বদেশ নিউজ২৪.com