ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসের তথ্য মতে, ২০১২-১৩ সেশন পর্যন্ত বর্তমানে ১৩টি অনুষদের আওতাভুক্ত ৭০টি বিভাগে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজারেও বেশি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত দিক দিয়ে এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ২৩ তম। এত বিশাল পরিমাণ শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য রয়েছে ২৩টি হল। কিন্তু পড়াশোনা করার জন্য রয়েছে মাত্র একটি গ্রন্থাগার। ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে যেটির আসন সংখ্যা ৬৬০টি। এই সীমিত আসনের অনেক আসনই আবার ব্যাবহারের অনুপযুক্ত। যার কারণে অনুমিত ভাবেই লাইব্রেরীতে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদেরকে পরতে হয় আসন সংকটে।
ভর্তি যুদ্ধের মত গ্রন্থাগারের ছিট পেতেও রীতিমত সংগ্রাম করতে হয় শিক্ষার্থীদের। গ্রন্থাগার খোলার অনেক আগেই লম্বা লাইন পরে যায় গেটে। কোন কোন সময় এ লাইন ডাকসু ভবন অতিক্রম করে কলা ভবনের ৩ নং গেট পর্যন্তও দীর্ঘস্থায়ী হয়। এত সংগ্রাম করে আসন পাওয়ার পরও থাকতে হয় দুঃশ্চিন্তায়। জরুরী প্রয়োজনে ছিট থেকে উঠলেই যে ছিট না পাওয়া আরেকজন এসে দখল করে নেয়। আবার অনেকে লাইব্রেরীতে না আসা বন্ধুটির জন্যও আলাদা একটি আসন দখল করে রাখেন তার আসার অপেক্ষায়। নজরদারি করা হয় না আসন দখল করে রাখা শিক্ষার্থীটি বৈধ না অবৈধ সেদিকেও।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষে পড়া হানুফা অনু বললেন, “সামনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। পড়াশোনা করতে তাই খুব সকালে লাইব্রেরীতে আসি। কিন্তু লাইব্রেরীতে আসন কই? আগের দিনই যে বিসিএস পরীক্ষার্থীরা তাদের ব্যাগ বই রেখে জায়গা দখল করে রেখেছে।”
এত সংগ্রাম করা হয় যে লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করার জন্য আদতেও সেখানে পড়াশোনার পরিবেশ আছে কিনা, জানতে চাইলে শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী বেলাল আহমেদ বলেন, “পড়াশোনার পরিবেশ আসলেও সুষ্ঠ না। অনেক কেই দেখা যায় দল বেঁধে লাইব্রেরিতে আসে কিন্তু পড়াশোনার বদলে গল্পই বেশি চলে। অনেকে আবার লাইব্রেরীকেই বানিয়ে ফেলেন ডেটিং প্লেস। অন্যদিকে পাশের রাস্তার যানবাহনের আওয়াজ তো আছেই।”
লাইব্রেরীর ভেতরের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে, অবৈধ এবং বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে যথাযথ করতিপক্ষ থাকলেও তাদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের কোন কিছুতে তারা নজরদারি করতে পারেননা। কোন সময় করতে গেলে তাদেরকেই উল্টো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয়।
কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সাথে কথা বললে সামগ্রিক সমস্যা গুলো স্বীকার করে তিনি swadeshnews24.com কে বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী রয়েছে সে তুলনায় আসলে লাইব্রেরীতে আসন দেয়া সম্ভব নয়। বাজেট না থাকায় নতুন করে লাইব্রেরীও স্থাপন করা যাচ্ছে না।”
প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরও বলেন, “লাইব্রেরী মূলত লাইব্রেরীতে যেসব বই আছে সেগুলো অধ্যায়নের জায়গা। বিসিএস কিংবা অন্য কোন পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য লাইব্রেরী নয়। তাই পরীক্ষার প্রস্তুতি হল গ্রন্থাগারেই নেয়া উচিত।”
আসন সমস্যার সমাধান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যেহেতু গ্রন্থাগারের আর আসন বাড়ানো সম্ভব নয়, তাই আমরা চেষ্টা করছি ইন্টারনেট লাইব্রেরী চালু করার। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই লাইব্রেরীর বই গুলো পড়তে পারবে।”
হল গ্রন্থাগারেও আসন সংকটঃ
বিসিএস সহ যেকোনো পরীক্ষার প্রস্তুতি মূলক পড়াশোনা করার জন্য মাননীয় উপাচার্য শিক্ষার্থীদেরকে আহ্বান করেছেন তাদের নিজস্ব হল গ্রন্থাগার ব্যবহার করতে। কিন্তু কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের মত আসন সংকট রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গ্রন্থাগার গুলোতেও।
হলের এক রুমে আসনের তুলনায় আধিক শিক্ষার্থী বসবাস করায় রুমে পড়াশোনার পরিবেশ নেই বললেই চলে। যার কারণে তারা পড়াশোনা করতে কেন্দ্রীয় এবং হল লাইব্রেরী অভিমুখী হন। কিন্তু পর্যাপ্ত আসন না থাকায় প্রতিনিয়ত তাদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটেই চলছে।
BY- MD. SUHEL KHAN