ঘন কুয়াশা ও ডুবোচরের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে নৌযান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। চরে আটকা পড়ে লঞ্চের যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ অঞ্চলের নৌপথে এক সপ্তাহে চারটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে এক শিশু নিখোঁজ হয়েছে।
জানা গেছে, ২৭ ডিসেম্বর মাঝরাতে মেঘনা নদীর চাঁদপুরে বিআইডব্লিউটিসির স্টিমার এমভি বাঙালি ধাক্কা দেয় ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি টিপু নামের একটি যাত্রীবাহী লঞ্চকে। এতে অল্পের জন্য রক্ষা পায় ওই লঞ্চের দুই হাজার যাত্রী। ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরিশালগামী লঞ্চ এমভি সুন্দরবনকে-৭-কে ধাক্কা দেয় বিআইডব্লিউটিসির জাহাজ এমভি বাঙালি। তবে দুটি নৌযানের প্রায় তিন হাজার যাত্রী অল্পের জন্য রক্ষা পায়। একই দিন রাতে ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি দ্বীপরাজ দেড় হাজার যাত্রী নিয়ে কীর্তনখোলা নদীর চর আবদানীর ধানখেতে উঠে যায়। লঞ্চটির চালক (মাস্টার), সুকানি ও কর্মচারীরা পালিয়ে গেলে বিপাকে পড়ে যাত্রীরা। ২৫ ডিসেম্বর বরিশালের বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবে অনিক নামের এক শিশু নিখোঁজ হয়।
এর আগে ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে আমতলী আসার পথে লঞ্চ ‘সুন্দরবন’ মেঘনা নদীতে আটকা পড়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা পর গন্তব্যে পৌঁছায়। ১৯ ডিসেম্বর মাঝরাতে ঢাকা থেকে বরিশাল আসার পথে এক হাজার যাত্রী নিয়ে এমভি পারাবত-৯ নামের একটি লঞ্চ হিজলার মিয়ারচর এলাকায় মেঘনা নদীতে আটকা পড়ে। প্রায় ১০ ঘণ্টা পর এটি গন্তব্যে পৌঁছায়।
এসব লঞ্চের চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ দিন ধরে ঢাকার সঙ্গে বরিশাল, বরগুনা, আমতলী, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভান্ডারিয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব পথের লঞ্চ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে দিক নির্ণয় করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া রয়েছে নাব্যতা-সংকট রয়েছে। এ অবস্থায় ছোট-বড় দুর্ঘটনার পাশাপাশি ডুবোচরে প্রতিদিনই লঞ্চ আটকে পড়ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডবিউটিএ) বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, বরিশাল অঞ্চলে বিআইডব্লিউটিএর এক হাজার ১১০ কিলোমিটার নৌপথের মধ্যে ১৮৫ কিলোমিটার প্রথম শ্রেণির, ৮১৫ কিলোমিটার দ্বিতীয় শ্রেণির ও বাকি অংশ তৃতীয় শ্রেণির আওতাভুক্ত। এসব পথে প্রায় ১৫০টি লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযান চালাচল করে। কর্মকর্তারা জানান, ডুবোচরের কারণে এসব নৌপথের বরিশাল অঞ্চলের ৮৬৯ কিলোমিটার অধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল-চরগজারিয়ার ৯৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার নদীপথ ডুবোচরে বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এ ছাড়া বরিশাল-বরগুনা-পাথরঘাটার ১১৪; বরিশাল-পটুয়াখালীর ৮৭; বরিশাল-খেপুপাড়ার ১৩৩; পটুয়াখালী-আমতলীর ১৯; গলাচিপা-চরকাজলের ১৮ কিলোমিটার; বরিশাল-নাজিরপুর হয়ে লালমোহন পর্যন্ত ৮২; খুলনা-কাউখালী ভায়া মধুমতী পর্যন্ত ১৫০; কাউখালী, মোল্লাহাট ভায়া মধুমতীর ৪০ কিলোমিটার; ঢাকা-বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা নৌপথের ৮০ কিলোমিটার; বামনীচর শোল-চরনাইন্দা শোলের প্রায় ৫০ কিলোমিটারের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ডুবোচর।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সহসভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশনের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, নাব্যতা কমে যাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে ঝুঁকি ক্রমে বাড়ছে। এক সপ্তাহে কয়েকটি দুর্ঘটনা তারই প্রমাণ।
বিআইডব্লিউটিএর বরগুনা নৌবন্দরের কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বরিশাল থেকে ঝালকাঠী, পাথরঘাটা হয়ে বরগুনার খাকদোন নদের নাব্যতা পুনরুদ্ধারে ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। খাকদোন নদ খননের কাজ চলছে। আশা করি, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এ পথে নাব্যতা-সংকট থাকবে না।’
বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল বন্দরের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক আবুল বাশার মজুমদার বলেন, এসব দুর্ঘটনার জন্য লঞ্চের মাস্টারদের খামখেয়ালিপনা দায়ী। বয়া, বিকন বাতির স্বল্পতা থাকতে পারে। দুর্ঘটনার জন্য দ্বীপরাজ লঞ্চের চলাচলের অনুমতি (রুট পারমিট) বাতিল করা হয়েছে।