৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে যে উত্তাপ ছড়িয়েছে তা তাদের ‘রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাসের দৈন্যতা’ বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। তাদের মতে সম্প্রতি উভয় দলের নেতারা সকাল বিকাল যেসব পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন তার মূলে, তাদের মতে, একদিকে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতা হারানোর শঙ্কা; অন্যদিকে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ‘অস্তিত্বের লড়াই’ ।
২০১৩ এর ১৮ আগস্ট হাসিনার ‘এক চুলও নড়বো না’ ১৯ আগস্ট খালেদা বলেছেন ”চুল উড়ে যাবে’
পরস্পর বিরোধী এই রাজনৈতিক উত্তাপ নতুন নয়। আর তাই নির্বাচনের আগে এড়ানো যায়নি রাজপথের সংঘাত-সংঘর্ষ। ৫ ই জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই সংঘাত কিছুটা কমলেও সংকট কাটেনি।
২০১৪ এর ৬ জানুয়ারি নির্বাচনের পরদিন গণভবনে হাসিনা বলেছেন ‘জনগণ যে ভোট দিতে পেরেছে আমি তাতেই সন্তুষ্ট যতটুকু দিয়েছে ততটুকুই যথেষ্ট’ খালেদা ৩১ ডিসেম্বরের ৭ দফার এক পর্যায়ে বলেছেন ‘যেমন আচরণ করছেন আগামীতে তার প্রতিফল ভয়ঙ্কর হতে পারে
সম্প্রতি পরস্পর বিরোধী অনড় অবস্থান আবারও কেন্দ্রীভূত হয়েছে ওই ৫ ই জানুয়ারিকে কেন্দ্র করেই। একদিকে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট দিনটিকে যে কোনো মূল্যে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল দিনটিকে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ হিসেবে। বিশিষ্টজনরা বলছেন, উভয় দলের নেতাদের সকাল বিকাল পাল্টাপাল্টি বক্তব্য তাদের নিজেদের রাজনৈতিক দীনতাই প্রমাণ করে।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রয়ে গেছে। সেই সাথে ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ে তারা অনেকটাই সন্দিহান বলে মনে হয়। পাশাপাশি সরকার ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন জানান, ‘দেশে সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত। দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানে পিষ্ট হবে শুধু সাধারণ জনগণ।’
৫ জানুয়ারিকে ঘিরে উভয় দলের যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেশের জন্য কল্যাণ করতো নয়ই বরং তা গণতন্ত্রের জন্যও স্বাস্থ্যকর নয় বলে মনে করেন তারা।
তার মতে, দুই বৃহৎ জোটের এই অনড় অবস্থার কারণে দেশের সব শ্রেণীর মানুষ মাশুল গুনছেন।
ইতিহাসের এই শিক্ষক মনে করেন, সংকট উত্তরণে প্রয়োজন নেতৃত্বের মানসিকতা বদল। পাশাপাশি তিনি সংলাপেরও তাগিদ দেন।