ছোট্ট খড়গোশের বড্ড বুদ্ধি

1126648354_45778120
মোঃ শামীম মিয়া:
কোটি কোটি বছর আগের কথা। নাম না জানা একটা বন ছিলো। সেখানে বাস করতো পুশু পাখি সবাই। কারো কোন কিছুর অভাব ছিলো। বনের দুই ধারে ছিলো নদী। নদীতে ছিলো হাজারো প্রজাতির মাছ। আরো ছিলো কুমির অন্য অন্য পোকা মাকড় তো আছেই। তবে হাতি ছিলো বড় পাজি। সে বানরের প্রিয় খাদ্য কলার গাছ গুলো রোজ খেতো। এজন্য বনের বানর হাতির উপড় ধিরে ধিরে ক্ষিপ্ত হতে লাগলো। তবে মনে মনে কাউকে বুঝতে দেয়না বানর। তবে বানরের বাদরামী সেকালেও থেমে থাকেনী। বানরের বাদরামী বাঘ দেখে করে রাগ, মনে মনে বলে যদি তোকে ফাঁদে পাই করবো না মাফ।
যাই হক,
একবার এই বনে প্রচন্ড বৃষ্টির পানিতে বন্যা হয়। জীবন বাঁচানোর জন্য বেশ কয়টা সিংহ আর বাঘ এক রাজার রাজ্যে যায়। রাজার শাসন ব্যবস্থা দেখে তারা মুগ্ধ হয়। রাজার রাজ্যে এসে তাদের মাথায় নতুন কিছু বুদ্ধি ঢুকে যায়। সিংহ,বাঘ এক সাথে চিন্তা করে। আমরা বনকে রাজার মতো রাজ্য বানাতে পারি। রাজ্যের রাজা বয়স্ক ছিলো। তাই কয়জন বললো, রাজ্যের রাজা বয়স্ক তাই আমাদের রাজাও হতে হবে বয়স্ক। সিংহ আর বাঘেরা সবাই সবার বয়স হিসাব করতে লাগলো। হিসাব করে দেখা গেলো তাদের মধ্যে সিংহ সিংসাং এর বয়স বেশি । তাই সিংহ এবং বাঘ ঠিক করলো আজ থেকে সিংসাং আমাদের বনের রাজা। সিংসাং বেশ খুশি হলো। তবে মনে মনে ভাবলো বাঘকে তো কোন পথ দিতে হবে,নইলে বাঘ রাগ করবে। তাই সিংসাং সবার উদ্দেশ্যে বললো, আজ থেকে বাঘেরা আমার ভাগিনা। বাঘ হবে বনের সব জীবজন্তুর মামা। বাঘ আরো কিছু বলতে চাই ছিলো, কিন্তু নতুন রাজা প্রথম একটা কথা বললো, বাঘ তা মেনে নিলো।
বন্যা শেষে তারা বনে এসে সব জীবজন্তুকে ডাকলো। এবং তাদের এই সব পরিকল্পনার কথা জানালো। সব জীবজন্তু মেনে নিলো। তারপর থেকেই পরিচয় লাভ করে বনের রাজা সিংহ এবং বাঘ মামা বলে।
সিংহর শাসন বাঘ মামার দাপট বেশ ভালো জমে উঠলো বনে। বাঘ আর সিংহরা শিকার করতে আর বনে যায়না। তাদের কষ্টও করতে হয় না। রাজার কাছে যে সব নিরীহ জীবজন্তু বিচার নিয়ে আসতো বা কোন দরকারে আসতো সিংহ আর বাঘ তাদের খেয়ে ফেলতো। আস্তে আস্তে এই ভরা বন থেকে জীবজন্তু কমতে থাকতে। চিন্তায় পড়ে যায় সাধারন জীবজন্তুরা। একদিন বেশ কয়েক জাতের জীবজন্তু মিটিং করলো আসলে এই জীবজন্তু গুলো কোথায় যাচ্ছে বা এদের কে কী কেউ খেয়ে ফেলছে। সবার প্রশ্ন এই একটাই। বড় বড় জীবজন্তুরাও ছিলো এই মিটিং এ। কেউ কোন উপায় পেলো না। হঠাৎ এক হরিণ বললো, ভাইযেরা আমরা রাজাকে এর বিচার দিতে পারি। রাজা ছাড়া এর খোঁজ কেউই দিতে পারবেনা। তাছাড়া রাজাকে না বলে আমরা যে মিটিং করছি তা যদি রাজা যেনে যায় আমাদের উপড় র্নিযাতন করবে। ছোট্ট খড়গোশ বললো, আমার মনে হয় আমাদের সাথীদের এই বনের রাজা সিংসাং এবং বাঘ মামারা খাচ্ছে ? এক গরু, খড়গোশকে বললো, ভাই যত বড় মুখ নয় তার চাইতে অনেক বড় কথা বলেছেন। রাজা যদি জানতে পারে তাহলে আপনাকে খেয়ে ফেলবে। খড়গোশ বললো, ভাই এমনটি হতে পারে। কেননা আমি অনেক দিন ধরে লক্ষ করছি রাজা সিংসাং আর বাঘ মামারা শিকারে আসে না। বনের এক হরিণ বললো, ভাই খড়গোশের কথা ফেলে দেওয়ার মত নয়। আমরা একটা তদন্ত দল গঠন করতে পারি। তারা খোজ নিয়ে দেখবে খড়গোশের কথা কত টুকু সত্য। তবে সাবধান শিয়াল পন্ডিত যেন না জানতে পারে আমাদের এই গোপন কথা গুলো। রাজা কে গিয়ে বললে, আমাদের রাজা আর ছাড়বেনা। শিয়াল পন্ডিত আড়াল থেকে সব শুনেছে। শিয়াল দেরি না করে সরাসরি চলে গেলো বনের রাজা সিংহ ,সিংসাং এর দরবারে। সিংহ সিংসাং শিয়ালকে দেখে বললো, কি গো পন্ডিত কোথায় যাও। শিয়াল বললো, হুজুর র্সবনাশ হয়ে গেছে বনের সব জীবজন্তু মিটিং করছে, আপনী এবং বাঘ মামা বনের সব জীবজন্তুকে খেয়ে ফেলছেন। সাধারন জীবজন্তুরা সব জেনে গেছে হুজুর আপনাদের অন্ধকার জগৎের কথা। সিংহ বললো, ঠিকই বলছো হয় তো। কেননা আজ সারা দিনে আমার দরবারে একটাও জীবজন্তু আসেনী। যদি জীবজন্তুরা আমার এখানে না আসে তাহলে তো আমি আমরা না খেয়ে মারা যাবো। শিকার করাও ভুলে গেছি,বসে থেকে খেতে খেতে। আমার বড়ো ক্ষুধা লেগেছে। শিয়ালের দিকে সিংহ তাকিয়ে আছে । শিয়াল বললো, রাজা মশাই আমাকে খাবে নাকী ? এমন করে তাকিয়ে আছো কেন ? সিংহ বললো, তোকে খেতাম, যদি তোর গায়ে র্দুগন্ধ না থাকতো। শিয়াল মনে মনে বললো, বাঁচা গেলো । এবং এক দৌড়ে চলে গেলো বহুদুরে।
এদিকে, নিরীহ জীবজন্তুদের তদন্ত— দল জেনে গেছে সত্যটা। আরো শিওর হওয়ার জন্য ছোট্ট খড়গোশকে তদন্ত দল পাঠালো রাজা সিংসাং এর দরবারে। খড়গোশকে দেখে রাজা সিংসাং বললো, আজ কী বনের সবাই ভালো হয়ে গেছে কারো সাথে করো ঝগড়া নেই, সকাল থেকে একজনও বিচার নিয়ে এলো না আমার দরবারে। ছোট্ট খড়গোশ বললো, হুজুর সব আগের মতই আছে তবে জেনে গেছে আপনার অন্ধকার জগৎের কথা। তবে হুজুর যারা আপনার বিরুব্দে লেগেছে তাদের আমি চিনি। আপনী যদি আমাকে বিশ্বাস করেন, তাহলে আমি তাদের ধরিয়ে দিতে পারি। রাজা সিংহ বললো, কী ভাবে খড়গোশ বললো, তা তখনই বুঝতে পারবেন। তবে বাঘকেও সঙ্গে নিতে হবে। এই বলে চলে আসে খড়গোশ আড়ালে থাকা তদন্ত দলের সদস্যদের কাছে। তদন্ত দলের অন্যরা বললো, খড়গোশ তুমি কী আমাদের ধরিয়ে দিবে না কী ? খড়গোশ বললো, তোমরা জানো সিংহ বাঘদের সাথে আমরা পারবো না। তবে আমি বিশ্বাস করি ওদের চাইতে বুদ্ধি আমাদের বেশি। এবার চলো আমরা সব জীবজন্তুকে এক জায়গায় করি। আমি ছোট্ট খড়গোশ বড় একটা বুদ্ধি বের করেছি। হরিণ, বানর, বন মুরগ,বন হাঁস, গরু, মহিষ, বললো,খড়গোশকে কী বুদ্ধি বেড় করেছো ? ছোট্ট খড়গোশ বললো, তাহলে শোনো, আমরা সবাই মিলে বনের মাঝে একটা র্গত খুড়বো। র্গতটা এতো গভীর হবে সেখান থেকে যাতে বাঘ আর সিংহ উচুতে উঠতে না পারে। এক হরিণ বললো, বুদ্ধিটা বেশ ভালো তবে ওরা কী আসবে এখানে ? খড়গোশ বললো, ওদের এখানে আনার দায়িত্ব আমার। তোমাদের দায়িত্ব সন্ধ্যার আগে এই গর্ত খুড়া। যেই কথা সেই কাজ। সন্ধ্যার আগেই র্গত খুড়া শেষ হলো।
সন্ধ্যার দিকে, খড়গোশ গেলো বনের রাজা সিংহ সিংসাং এবং বাঘ ও তাদের সহ পাঠিদের ডাকতে। খড়গোশ যাওয়র সময় অবশ্য বলেছিলো, আমি যদি না ফিরি মনে করবে আমি আর এই সুন্দর পৃথিবীতে নেই। যদি কোন ভুল আর বেদবী তোমার সাথে করে থাকি আমাকে মাফ করে দিও সবাই। আর তোমরা সবাই গর্তের পাশে দ্বাড়িয়ে থাকবে। যাতে বাঘ সিংহ বুঝতে পারে সত্যি সত্যি তোমরা মিটিং করছে।
এদিকে বাঘ সিংহ তাদের সহ পাঠিরা ক্ষুধায় ছটপট করছে। সারাটাদিন তারা কিছুই খায়নী আজ। এক বাঘ আরেক বাঘকে বললো, আমার আর ক্ষুধা সহয্য হচ্ছেনা। এর মধ্যে এসে যায় খড়গোশ। প্রথমে সিংহ রাজা সিংসাং কে সালাম দিলো তারপর খড়গোশ বললো, আমি একটা জরুরি খুব গোপন খবর নিয়ে এসেছি। আপনরা সবাই মনো যোগ সহকারে শুনুন। সিংহ বললো, বলো তোমার খবর। খড়গোশ বললো, অনেক গুলো জীবজন্তু বনের মাঝখানে গোপন মিটিং করছে। আপনাকে মেরে ফেলবে তারা। এই সব কথাই বলছে তারা। সিংহ রাগে আগুন একদিকে খাওয়া নেই সারাদিন। সিংহ বাঘকে বললো, চলো আজ মিটিং এর সব গুলোকে খেয়ে ফেলবো। খড়গোশ বললো, আমার কথাটা শুনুন আগে। বাঘ বললো কী কথা বলো ? খড়গোশ বললো, আপনারদেরকে এক সাথে দৌড়ে যেতে হবে, কোন দিকে তাকানো এবং কারো কথা কেউ কানে নিবেন না। এক দৌড়ে ওদের ধরতে হবে। সিংহ বললো, তাই হবে। খোড়গোশ বললো, এবার চলো । এই দিলো দৌড় সবাই। বনের প্রায় মাঝখানে এসে গেলো ওরা আর লুকিয়ে গেলো খড়গোশ বাঘ সিংহ কোন দিকে চোখ কান না দিয়ে দৌড়েতে থাকে। বাঘ সিংহ দেখতে পাচ্ছে সামানে মিটিং করছে বনের অন্য অন্য জীবজন্তুরা । কোন দিকে না দেখে ওদের ঝাঁপ দিয়ে ধরতে যায় আর সবাই পরে যায় গর্তে। সবজীবজন্তু হৈ দিয়ে উঠে। দুর থেকে হাতি ছুটে এসে বলে ছোট্ট খড়গোশের বড্ড বুদ্ধি। রাজা সিংহ সিংসাং কাঁদছে আর বলছে বাপরে বাপ কোমর গেলো রে। শয়তান খড়গোশ তোকে আমি ছোট মনে করে খাইনা, আর তুই আমার এতো বড় ক্ষতি করলি। সবাই কাঁদছে। এবার খড়গোশ এসে বললো, এই বনের রাজা,তোকে জেন্তই এবার দিবো মাটি চাপা । বাঘ বলছে আমাদের মাফ করে দাও আমরা আর কোন দিন এমন করবো না। তোমাদেরকে আর খাবোনা। হরিণ বললো, খাবিনা কেন না খেলে বাঁচবি কী করে। তোদের মেরে আমরা আনন্দ মিছিল করবো। এই বলে সবাই গর্তে মাটি ফেলতে লাগলো। এক সময় মারা গেলো বাঘ এবং বনের রাজা সিংসাং সিংহ সহ তার সহপাঠি সবাই। তার বনের নিরীহ জীবজন্তুরা খড়গোশকে ঘাড়ে নিয়ে আনন্দ মিছিল করছে। মিছিলের অন্য অন্য স্লোগানের মধ্যে এই স্লোগানও ছিলো ছোট্ট খড়গোশের বড্ড বুদ্ধি। এর পর থেকে সবাই সুখে বসবাস করতে লাগলো। সমাপ্ত
কলেজ
মোঃ শামীম মিয়া। এইচ,এস,সি পরিক্ষার্থী ২০১৫ইং মানবিক শাখা,জুমারবাড়ী আর্দশ কলেজ,সাঘাটা, গাইবান্ধা।
মোবাইল নং- ০১৭৮৮৪০৪২৬২
ই-মেইল-শড়নর.ংযধসরস০৫@মসধরষ.পড়স
মোঃ শামীম মিয়া। পিতা মোঃ সৈয়দজ্জামান, মাতা মোছাঃ ঝরনা বেগম,
গ্রাম-আমদির পাড়া।
ডাকঘর- জুমারবাড়ী।
থানা- সাঘাটা।
জেলা-গাইবান্ধা।
দেশ- বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *