জাহিদুর রহমান তারিকঃ-ঝিনাইদহ অফিস ঃ-
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। সেখানে আরোও একটি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে-সেটি হলো দালাল আর সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মচারীদের কাছেও অসহায় কৃষক ও গ্রামাঞ্চল থেকে আসা মানুষেরা। শৈলকুপা সেটেলমেন্ট অফিসে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বেশি মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে মৌজা ম্যাপ ও পর্চা। আর এ মাধ্যমে জমির মালিক ও সাধারণ কৃষকদের নিকট থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অভিযোগ উঠেছে, সেটেলমেন্ট অফিসের রেকর্ড কিপার বশির আহমেদ, পেশকার জাহাঙ্গীর, বেঞ্চ ক্লার্ক আব্দুল মজিদ ও পিওন খয়বার হোসেন জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত। এদের কেউ কেউ জমির মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বেশি দামে মৌজা ম্যাপ বিক্রি করেন। প্রতিটি মৌজা ম্যাপ ৩শ’ টাকার পরিবর্তে ৩শ’ ৫০ টাকা কখনো চারশ’ টাকা, প্রতিটি প্রিন্ট পর্চা ৬৫ টাকার পরির্বতে একশ’ টাকা হারে বিক্রি করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, তাদের নির্ধারিত এই মূল্যের চেয়ে কম দিতে চাইলে তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অতিরিক্ত অর্থ না দিলে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়। শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন মৌজার অধীনে হাজার হাজার একর জমির মালিকদেরকে মৌজা ম্যাপ ও প্রিন্ট পর্চা বিতরণ করে লাখ লাখ টাকার ঘুষ নিচ্ছে কর্মচারীদের অনেকেই। সরকারিভাবে অর্থ লেনদেন করতে রশিদ ব্যবহার করা কথা থাকলেও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার কারণে জমির মালিকদেরকে অর্থ গ্রহণের কোন রশিদ দেয়া হয় না। শৈলকুপা উপসহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা নজমুল হক, উপসহকারী কর্মকর্তা নওশের আলী এবং যশোর জোনালের খলিলুর রহমান ব্যাপক ঘুষ-দুর্ণীতির খবর গ্রামের কাগজে দ্বিতীয় কিস্তি প্রকাশের পর আরো বেশি করে এসব দুর্নীতির খবর প্রকাশের দাবি ভুক্তভোগীদের। তবে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা দালালদের মাধ্যমে সংবাদ না প্রকাশের দাবি তুলেছে। শৈলকুপা সেটেলমেন্ট অফিসে ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধের পাশাপাশি কৃষক ও ভুক্তভোগীদের মতে, ভূমি সংক্রান্ত আইনগুলোকেও আমূল বদলাতে হবে। এর মাঝে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মালিকানার বিষয়টি মীমাংসা করতে হবে। কেউ একটি জমি কিনল এবং সেই কেনা জমি অন্য একজন দখল করে রাখলে তার মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা দুরূহ হয়। এর মীমাংসা হতে হবে। জমির নিবন্ধন মানেই মালিকানা নাকি দখল মানেই মালিকানা, সেটি যেমন জরুরি, তেমনি কার উত্তরাধিকার কে, কার কাছে বিক্রি করা হলো বা কে ভোগ দখল করল-এসব প্রশ্নের মীমাংসার জন্যও আইনের সুনির্দিষ্টি নির্দেশনা থাকা দরকার। আবার কে খাজনা দিল, কার নামে দলিল, উত্তরাধিকার সূত্রে কে জমিটি বিক্রি করতে পারে বা কে পেতে পারে ইত্যাদি ছাড়াও আছে জমির অতীত অনুসন্ধান ও মালিকানা নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতা। এক নাম্বার খতিয়ান বা খাস জমি বিষয়ক জটিলতা ও অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক জটিলতারও অবসান হওয়া জরুরী বলে অনেকে মনে করেন। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। বছরের পর বছর মামলা ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। প্রয়োজনে আলাদা আদালত গঠন করে ভূমি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে বলেও ভুক্তভোগীরা মত দিয়েছেন। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশের দুর্নীতির সবচেয়ে বড় ক্ষেত্রটি হলো ভূমি ব্যবস্থা।