সপ্তমবারের মতো শেষ চারে খেলতে নেমে দুঃখ ঘোচালেন কিউইরা। দক্ষিণ আফ্রিকাকে কান্নার সাগরে ভাসিয়ে বিশ্বকাপের স্বপ্নের ফাইনালে উঠে গেছে নিউ জিল্যান্ড। চার উইকেটে জিতেছে কিউইরা। বিশ্বকাপের প্রথম দুই আসরেই সেমিফাইনালে উঠেছিল তারা। পরের আট অাসরে আরো চারটি সেমিফাইনাল। অথচ একবারও বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা হয়নি নিউজিল্যান্ডের।
১১তম আসরে প্রথম সেমিফাইনালের বৃষ্টিবিঘ্নিত উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে পা রেখেছেন কিউইরা। তাও আবার ৪৩ ওভারে ২৯৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে! অপরদিকে চতুর্থবারের মতো সেমিফাইনালে উঠেও বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকার।
মঙ্গলবার অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে টস জিতে আগে ব্যাট করে বৃষ্টির কারণে ৪৩ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৫ উইকেটে ২৮১ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ৪৩ ওভারে নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৯৮ রান। তবে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, কোরি অ্যান্ডারসন ও গ্র্যান্ট ইলিয়টের দারুণ ফিফটিতে ৪ উইকেট ও বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড।
দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের জয়ী দলের বিপক্ষে আগামী ২৯ মার্চ মেলবোর্নে ফাইনাল খেলবে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের দল।
লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ডকে ঝোড়ো সূচনা এনে দেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। প্রকৃতির বৃষ্টিতে ভেজা ইডেন পার্কে চার-ছক্কার বৃষ্টি নামান কিউই অধিনায়ক। মাত্র ২২ বলে ঝোড়ো ফিফটি তুলে নেন তিনি। তবে দলীয় ৭১ রানে মরনে মরকেলের বলে বিদায় নেন ম্যাককালাম। ডেল স্টেইনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ২৬ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৫৯ রান করেন ম্যাককালাম।
এরপর স্কোরবোর্ডে আর ১০ রান জমা হতেই বিদায় নেন কেন উইলিয়ামসন (৬)। ওই মরকেলের বলে বোল্ড হন তিনি। তৃতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন মার্টিন গাপটিল ও রস টেলর। তবে দলীয় ১২৮ রানে ইমরান তাহিরের ওভারে রানআউটের শিকার হয়ে ফেরেন গাপটিল। ৩৮ বল খেলে তার সংগ্রহ ৩৪ রান। দলীয় ১৪৯ রানে রস টেলরও ফিরে যান। জেপি ডুমিনির বলে কুইন্টন ডি ককের গ্লাভসবন্দি হন ৩০ রান করা টেলর।
১৪৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন গ্র্যান্ট ইলিয়ট ও কোরি অ্যান্ডারসন। পঞ্চম উইকেটে ফিফটি রানের জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন দুজন। দলীয় ২০৪ ও ব্যক্তিগত ৩৪ রানে জীবন ফিরে পান অ্যান্ডারসন। সহজ রান আউট মিস করেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। স্টেইনের বলে ননস্ট্রাইকার প্রান্ত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন অ্যান্ডারসন। তিনি ক্রিজে ফেরার আগেই বল পেয়ে যান ডি ভিলিয়ার্স। কিন্তু বলের আগে হাত দিয়ে স্ট্যাম্প ফেলে দেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। এরপর অ্যান্ডারসন-ইলিয়ট দুজনই ফিফটি তুলে নেন।
শেষ ৪২ বলে নিউজিল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৪৭ রান। তবে ইনিংসের ৩৮তম ওভারে মরকেলের শেষ বলে ফিরে যান অ্যান্ডারসন। ৫৭ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৫৮ রান করেন তিনি। দলীয় ২৬৯ রানে সাজঘরে ফেরেন লুক রনকি। তখন নিউজিল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ১৭ বলে ২৯ রান।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করে বৃষ্টির কারণে ৪৩ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৫ উইকেটে ২৮১ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ৪৩ ওভারে নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৯৮ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বোচ্চ ৮২ রান করেন ফাফ ডু প্লেসিস। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৫ রানে অপরাজিত থাকেন এবি ডি ভিলিয়ার্স।
টস জিতে ব্যাট করতে নামা প্রোটিয়াদের শুরুতেই বিপদে ফেলে দেন নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে দলীয় ২১ রানে ওপেনার হাশিম আমলাকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান বোল্ট। ১৪ বল মোকাবিলা করে ২ চারে ১০ রান করেন আমলা। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে প্রোটিয়া শিবিরে আবার অাঘাত হানেন বোল্ট। এবার আরেক ওপেনার কুইন্টন ডি কককে টিম সাউদির ক্যাচে পরিণত করেন এই কিউই পেসার। ডি ককের সংগ্রহ ১৪ রান।
ডি ককের উইকেট নিয়ে রেকর্ড বুকে নাম লেখান বোল্ট। বিশ্বকাপের এক আসরে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ শিকারের রেকর্ড করেন তিনি। ডি ককের উইকেট নিয়ে অাসরে বোল্টের উইকেটসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১টি। এর আগে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের হয়ে ২০ উইকেট নিয়েছিলেন জিওফ অ্যালট।
৩১ রানেই ২ উইকেট হারানোর পর তৃতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন ফাফ ডু প্লেসিস ও রিলে রুশো। ফিফটি রানের জুটি গড়ে দলকে ভালোই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন দুজন। তবে রুশোকে ফিরিয়ে ৮৩ রানের জুটি ভাঙেন কোরি অ্যান্ডারসন। রুশোকে মার্টিন গাপটিলের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। ৫৩ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় রুশোর সংগ্রহ ৩৯ রান।
চতুর্থ উইকেটে এবি ডি ভিলিয়ার্সকে সঙ্গে নিয়ে বড় জুটি গড়ে তোলেন ফাফ ডু প্লেসিস। দুজনই ফিফটি তুলে নেন। ৩৮ ওভার শেষে দলের সংগ্রহ যখন ৩ উইকেটে ২১৬ রান তখন বৃষ্টি হানা দেয় অকল্যান্ডে। বৃষ্টির কারণে ২ ঘন্টা খেলা বন্ধ থাকায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে ৪৩ ওভারে নেমে আসে।
খেলা আবার শুরু হলে বিদায় নেন ডু প্লেসিস। কোরি অ্যান্ডারসনের বলে উইকেটরক্ষক লুক রনকির গ্লাভসবন্দি হন তিনি। ১০৭ বলে ৭ চার ও এক ছক্কায় ৮২ রান করেন ডু প্লেসিস। ডি ভিলিয়ার্স-ডু প্লেসিস জুটিতে আসে ১০৩ রান। এরপর দলীয় ২৭২ রানে ডেভিড মিলার বিদায় নেন ব্যক্তিগত ৪৯ রান করে। তার মাত্র ১৮ বলের ঝোড়ো ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ৩টি ছক্কার মার। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ডি ভিলিয়ার্স (৬৫) ও জেপি ডুমিনি (৮)।