আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল আজ রোববার। এদিন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে মোট ৬০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যথাক্রমে ২১ ও ২৬ জন। আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ১৩ মেয়র প্রার্থী।
রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন কার্যালয় থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
ঢাকার উত্তরে মেয়র পদে ৩০ জন এবং দক্ষিণে ৩১ জন মনোনয়নপত্র কিনেন। আর চট্টগ্রামে কিনেন ১৮ জন। মোট ৭৯ প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও বাকিরা জমা দেননি।
রাজধানীর গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা দক্ষিণের রির্টানিং অফিসার মিহির সরওয়ার মোর্শেদ বিকেলে সাংবাদিকদের জানান, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তাই করা হবে। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে অনেকে শোডাউন অবস্থায় ছিলেন। আপনারা দেখেছেন। এই ধরনের শোডাউনের তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মিছিল-জনসভা করা নিষেধ। মনোনয়ন দাখিলের মাধ্যমে প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের ফাইলবন্দি হয়ে গেলেন। এখন আমরা মনিটরিং টিম করবো। এই মনিটরিং টিম মেয়রদের মনিটর করবেন। যাতে কেউ উস্কানিমূলক কিছু করতে না পারে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের মনিটর করা হবে।
অপরদিকে ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম সাংবাদিকদের ২১ জন মেয়র প্রার্থীর তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, কাউন্সিলর প্রার্থীদের হিসেব এখনো করা হয়নি। হিসাব-নিকাশ করে পরে জানানো হবে।
মেয়র পদে ঢাকা দক্ষিণের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন যারা
মো. আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ, মো. আব্দুল খালেক, মো. জাহিদুর রহমান, আবু নাছের মুহাম্মদ মাসুদ হোসাইন, মো. বাহারানে সুলতান বাহার, এএসএম আকরাম, শাহীন খান, দিলীপ ভদ্র, মো. শহীদুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, মো. বাবুল সরদার চাখারী, মোহাম্মদ শফি উল্লাহ চৌধুরী, মো. নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টু, মো. আবদুর রহমান, মো. আব্দুস সালাম, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, বজলুর রশীদ ফিরোজ, মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন, মশিউর রহমান, এএম আসাদুজ্জামান রিপন, মো. ইমতিয়াজ আলম, মো. গোলাম মাওলা রনি, মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আয়ুব হুসেন ও কাজী আবুল বাশার।
এছাড়া কাজী মো. সাইদুর রহমান মানিক, সৈয়দ শাহ আলম, হাজী মো. সেলিম, মো. সেলিম ভূঞা ও শাহীন মিয়া মনোনয়নপত্র তুললেও জমা দেননি।
মেয়র পদে ঢাকা উত্তরের মনোনয়নপত্র জমা দিলেন যারা
শামছুল আলম চৌধুরী, চৌধুরী ইরাদ আহমদ সিদ্দিকী, আবদুল্লাহ আল ক্বাফী, ববি হাজ্জাজ, এ ওয়াই এম কামরুল ইসলাম, বাহাউদ্দিন আহমেদ, নাদের চৌধুরী, কাজী মো. শহীদুল্লাহ, আবদুল আওয়াল মিন্টু, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ, মো. নাঈম হাসান, আনিসুল হক, সারাহ বেগম কবরী, মো. আনিসুজ্জামান খোকন, তাবিথ আওয়াল, মো. জামান ভূঞা, শেখ শহিদুজ্জামান, মো. জোনায়েদ আবদুর রহিম সাকী, মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী, শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ ও মোস্তফা আজাদী।
এছাড়া মাহমুদুর রহমান মান্না, হেলেনা জাহাঙ্গীর, আতিকুর রহমান নাজিম, মো. একলাস উদ্দিন মোল্লা, মো. সাইফুল সিরাজ, মো. আবু তাহের, ফকির শেখ মুসলিম উদ্দিন আহমদ, মাহবুবুর রহমান ও আমিনুল ইসলাম বুবু মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমা দেননি।
চট্টগ্রামে যে ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন
মোহাম্মদ মনজুর আলম, আ জ ম নাসির উদ্দীন, মো. আবুল কালাম আজাদ, মো: শফিউল আজম, সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা, মোহাম্মদ ফোরকান চৌধুরী, আরিফ মইনুদ্দীন, এম এ মতিন, সোলায়মান আলম শেঠ, মো. আলাউদ্দিন চৌধুরী, হোসাইন মোহাম্মদ মুজিবুল হক, সাইফুদ্দিন আহমেদ (রবি), মো. ওয়াজেদ হোসেন ভূঁইয়া।
ঢাকা উত্তরের সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদপ্রার্থী গণসংহতির নেতা জোনায়েদ সাকি তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের যাতে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র থাকে। নির্বাচন কমিশন তাদের গণতান্ত্রিক ক্ষমতার কোন অপব্যবহার করবেন না বলেও মনে করি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আনিসুল হক বলেছেন, ‘দলীয় প্রার্থী না হলেও আমার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থন রয়েছে ।আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর এ সমর্থনই নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সবচেয়ে বড় শক্তিবলে মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘আমি চাই-সবার অংশগ্রহণে সুন্দর নির্বাচন। সবাই আচরণবিধি মেনে চলুক। নির্বাচনী ব্যয়সীমাসহ সব ক্ষেত্রে আমি আইন মেনে চলব।’
এর আগে এফবিসিসিআইয়ের আরেক সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর পক্ষে তার ছেলে তাফসির ও আজওয়ার আউয়াল মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে তাফসির আউয়াল বলেন, ‘সবার জন্য সমান সুযোগ চাই। আমরা কমিশনের সঙ্গে কথা বলছি। কেউ মামলার জন্য আদালতে দৌড়াচ্ছে। কেউ আবার নির্বাচনী কার্যক্রমে রয়েছে। ভোটের পরিবেশ তৈরি করবে ইসি।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান পরিবেশে আমি সন্তুষ্ট। আশা করি আগামীতেও এ অবস্থা থাকবে। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য সেনা মোতায়েনও চাই আমি।’
আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ সারাহ্ বেগম কবরী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর বলেন, ‘এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন। যে কেউ প্রার্থী হতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী আমাকে আশীর্বাদ করেছেন। আমাকে দোয়া করেছেন তিনি।’
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সাঈদ খোকন বলেন, ‘বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আমি। বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলে আমরা গণমাধ্যমে জানতে পেরেছি। তারাই হবে প্রতিপক্ষ।’
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে মনোনয়ন পত্র জমাদান শেষে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ জ ম নাসির সাংবাদিকদের বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণে উৎসবমুখর হয়ে উঠবে এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আমরা আগেও বলেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সবাইকে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহবান জানিয়েছেন, আশা করছি এবার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমার পর মনজুর আলম বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী শুক্রবার আমি পদত্যাগ করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। তফসিল অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আল্লাহ যাকে নির্বাচিত করবেন তাকেই মেনে নেব।’
রোববার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে নির্বাচনী আচরণ বিধি অনুযায়ী নির্বাচনের ২১ দিন পূর্বে কোনো ধরণের নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না। কেউ নির্বাচনী আচরণ বিধি অনুসরণ না করে প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করলে তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাই নির্বাচন কমিশন সকল প্রার্থীকে এই আচরণ বিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৮ মার্চ তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল আজ ২৯ মার্চ। ১ ও ২ এপ্রিল বাছাই এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ এপ্রিল। আগামী ২৮ এপ্রিল মঙ্গলবার ভোট গ্রহণ করা হবে।