২০ দলীয় জোটের হরতাল অবরোধের মধ্যে কোনোরকমে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করা হয়েছে। কিন্তু এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নির্ধারিত দিনে শুরু নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। ১ এপ্রিল বুধবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এদিন পরীক্ষা শুরু হবে কিনা তা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে সংশয়।
গত শনিবার পর্যন্ত ২০ দলের পক্ষ থেকে হরতালের কর্মসূচি না দেওয়ায় ধারণা করা হয়েছিল এবারের এইচএসসি পরীক্ষা নির্ধারিত দিনেই শুরু হবে। কিন্তু রোববার ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আবারো ৪৮ ঘণ্টার হরতালের কর্মসূচি দেওয়ায় পরীক্ষা শুরু নিয়ে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত অবরোধের পাশাপাশি হরতাল পালিত হবে। তবে নির্বাচনের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। তবে ২০ দলীয় জোটের সাম্প্রতিক প্রবণতা অনুযায়ী বুধ ও বৃহস্পতিবারও হরতাল থাকেলে নির্ধারিত তারিখে পরীক্ষা শুরু হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে
তাই বিএনপির পরবর্তী ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত এ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছে না পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। হরতাল বর্ধিত করা হলে পরীক্ষার বিষয়ে সরকারের মঙ্গলবারের আগে ঘোষণার সম্ভাবনা কম। ২০ দল যদি বুধ ও বৃহস্পতিবারও হরতাল দেয় তবে মঙ্গলবার যে কোনো সময় পরীক্ষা সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের পরীক্ষার্থী ইরতিজা বলেন, পরীক্ষার ধারাবাহিকতায় যদি বিঘ্ন ঘটে গোটা পরীক্ষাই খারাপ হয়ে যাবে। কেননা কোন বিষয়ের প্রস্তুতি নেব সেটাই বড় সমস্যা। রুটিন অনুযায়ী প্রস্তুতি নিলে তো হবে না। এখন যদি একটি বিষয় পড়ি দেখা গেল হরতালে ওই বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে গেল। তাহলে তখন পড়ার কোনো মূল্য থাকে না। এভাবেই একটা হযবরল লেগে যায়। আর পরীক্ষা যদি হরতালের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় তাহলে সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকতে হবে, যে কখন আবার কোন বিপদ ঘটে। কি যে হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না।
রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের এক পরীক্ষার্থীর বাবা আতিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ভাই এই দেখেন নিজে গিয়ে প্রবেশপত্র নিয়ে এসেছি। মেয়েকে পড়ার টেবিলে রেখেছি। কিন্তু বাচ্চাকে পড়ার প্রতি এই যে নিবিষ্ট রেখেছি, তাতে লাভ কি হবে, যদি রুটিন মতো পরীক্ষা না হয়?
তিনি আরও বলেন, আসলে বলার তো কিছু নেই। এসএসসির বাচ্চারা যদি ছাড় না পায় এইচএসসিও যে ছাড় পাবে না সেটা আমরা নিশ্চিত। অথচ দেখেন এইচএসসি পরীক্ষার ফলের ওপরই নির্ভর করবে উচ্চশিক্ষায় সে কোনদিকে যাবে। কিন্তু কে শুনবে কার কথা। না খেয়ে, কম খেয়ে বাচ্চাকে পড়াচ্ছি। এভাবে যদি হরতাল-অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা হয় তাহলে বাচ্চাদের ফলাফলেও এর প্রভাব পড়বে। তাহলে আমাদের সারা জীবনের পরিশ্রমের কি মূল্য রইল।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ১ এপ্রিলই এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। যা কিছু ঘটুক, নির্ধারিত সময়েই আমরা পরীক্ষা নেব। এসএসসির মতো ফাঁকে ফাঁকে পরীক্ষা নিলে এ পরীক্ষা শেষ হতে দীর্ঘদিন লেগে যাবে।
কিন্তু এ ঘোষণায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে নতুন করে উদ্বেগ-আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। কেননা, ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী যদি পরীক্ষা নেয়া হয় আর ২০ দলীয় জোট অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার না করে, তাহলে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার যে কেউ হবেন না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া স্বাভাবিক সময়সূচি অনুযায়ী না পারলে পরীক্ষাও ভালো হবে না। এতে করে গোটা জীবনই হুমকির মুখে পড়বে বলে আশংকা তৈরি হয়েছে।
এদিকে অনিশ্চয়তা আর হতাশার এখানেই শেষ নয়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পরীক্ষার্থীরা জানিয়েছে, পরীক্ষার এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও তারা স্বস্তিতে নেই। শুধু যে পরীক্ষা নিয়ে টেনশন তা নয়, চলমান হরতাল-অবরোধে তাদের প্রস্তুতিতেও বাধার সৃষ্টি হয়। অনেক শিক্ষার্থীই মডেল টেস্টসহ শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিতে শিক্ষকদের কাছে যেতে পারেনি।
এদিকে আবার আসন্ন ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারণে আগামী ২৬, ২৭ ও ২৮ এপ্রিলের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া ২০ দলীয় জোটকে পরীক্ষার মধ্যে হরতাল না দিতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আবারো আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তার এ আহ্বানে ২০ দলীয় জোট এখন পর্যন্ত সাড়া দেয়নি।
প্রসঙ্গত, টানা হরতালের কারণে পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছিল ২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার সময়সূচি। শুধুমাত্র শুক্র, শনিবার করেই পরীক্ষা দিতে হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থীকে। এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮৪ জন ছাত্র-ছাত্রীর অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। রুটিন অনুযায়ী ১ এপ্রিল থেকে শুরু হলে পরীক্ষা শেষ হবে ১১ জুন।