দেশের শেয়ারবাজারে গতকাল রোববার আবারও বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। সূচক ও লেনদেন দুটোই কমেছে দুই বাজারে।
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন প্রায় আড়াই শতাংশ বা ১০০ পয়েন্ট কমেছে। এর ফলে ডিএসইর সূচকটি ৪ হাজার পয়েন্টের ঘরে নেমে গেছে।
গত কয়েক দিনের টানা দরপতনের ধারাবাহিকতায় গতকাল বড় ধরনের পতন ঘটল। এতে করে ২০১৩ সালের অবস্থানে ফিরে গেছে ডিএসইএক্স। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ঢাকার বাজারে ডিএসইএক্স সূচক চালু হয়। সূচকটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট থেকে। গতকাল লেনদেন শেষে সূচকটি ওই অবস্থানের কাছাকাছি নেমে এসেছে। দিন শেষে ডিএসইএক্স কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৪ পয়েন্ট।
২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর পুনর্গঠিত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আমলে এ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় সূচকটি এ পর্যায়ে নেমেছে। অথচ বিএসইসির দাবি, তাদের সময়ে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নানা সংস্কারও হয়েছে এ সময়ে। কিন্তু বিএসইসির কোনো সংস্কার ও কার্যক্রমেই যেন বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না, তাঁদের আস্থা ফিরছে না বাজারে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটিও গতকাল ২ শতাংশ বা প্রায় ২৫৮ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ৬০০ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারও কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। নির্বাচনকে ঘিরে মানুষের মনে একধরনের শঙ্কাও তৈরি হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন স্বদেশ নিউজ ২৪ ডটকমকে বলেন, টানা দরপতন ও একধরনের শঙ্কা থেকে বিনিয়োগকারীদের অনেকে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এভাবে শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ার বিপরীতে বাজারে কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতা নেই। এতে করে বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের পতন রোধে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের যে অংশগ্রহণ দরকার, তেমনটি ঘটছে না বলেই দরপতন অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারের এই দরপতনের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের সম্পর্ক রয়েছে। নির্বাচন নিয়েই সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব শেয়ারবাজারেও পড়েছে।
গতকাল লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ বা ৯৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৪ পয়েন্টে, যা গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ডিএসইএক্স সর্বনিম্ন ৪ হাজার ৯০ পয়েন্টে নেমেছিল।
গত বৃহস্পতিবার ডিএসইএক্স ৬০ পয়েন্ট কমেছে। এ নিয়ে গত পাঁচ দিনে সূচকটি কমল ২৭৯ পয়েন্ট। আর সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক গতকাল ২৩০ পয়েন্ট কমেছে।
ডিএসইতে এদিন ৩০৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে আগের চেয়ে দাম কমেছে ২৪৮টির, বেড়েছে ৩৭টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২২টির। দিন শেষে ডিএসইতে মোট ৩৪১ কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা আগের কার্যদিবস গত বৃহস্পতিবারের ৩৭৭ কোটি টাকার চেয়ে ৩৬ কোটি টাকা কম।
অন্যদিকে সিএসইতে রোববার ২২৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে আগের তুলনায় দাম কমেছে ১৮১টির, বেড়েছে ২৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৬টির। এদিন সিএসইতে প্রায় ৩৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৯ কোটি টাকা কম।