কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃকিশোরগঞ্জে এক সময় ভুট্টা আবাদের প্রচলন ছিলই না। আলু, মিষ্টি আলু, মরিচ, বেগুন, সরিষা, কপিসহ বিভিন্ন শাকসবজির বাগানের ধার ঘেঁষে এক লাইনে সখ করে কৃষকরা কিছু ভুট্টা দানা বুনে দিতেন। আর তা থেকে যতটুকু ভুট্টা পাওয়া যেতো, সেগুলি ঘরে ভেজে খাওয়া হতো। কিন্তু এখন যতই দিন যাচ্ছে, ভুট্টার আবাদ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ভুট্টার আগ্রাসনে এখন স্বল্প লাভের অন্যান্য ফসলের আবাদ কমে যাচ্ছে।জেলা খামারবাড়ি সূত্র জানায়, এবারের ২০১৪-১৫ মৌসুমেও কৃষি বিভাগ ভুট্টা আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, শেষ পর্যন্ত তা অতিক্রম করে গেছে। এবার সারা জেলায় মোট ২ হাজার ১৮৯ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার ৫৪২ টন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ভুট্টার আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে। সেই হিসাবে উৎপাদনও বেড়ে ১৭ হাজার ৪ দশমিক ৬১ টনে দাঁড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একসময় ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আমাদের দেশে চরম খাদ্য সঙ্কট বা আকাল দেখা দিত। তখন গরিব মানুষদের চাহিদা মেটানোর জন্য হাওরের বেলে ধরনের জমিতে বিকল্প খাদ্য হিসেবে মিষ্টি আলুর আবাদ করা হতো। কিন্তু এখন জনসংখ্যা বাড়লেও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার কারণে প্রচুর আবাদযোগ্য পতিত জমি ধান চাষের আওতায় এসেছে। পাশাপাশি কৃষি বিজ্ঞানীরা দিন দিনই উদ্ভাবন করছেন উচ্চ ফলনশীল এবং হাইব্রিড ধানের নতুন নতুন জাত। এছাড়া আকালের সময়টাতে এখন দরিদ্র মানুষকে দেয়া হচ্ছে ভিজিএফ-ভিজিডি কার্ডের চাল। যে কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও এখন আর আগের মত আকাল হয় না। সেই কারণে ভাতের বিকল্প খাদ্য হিসেবে মিষ্টি আলুর চাহিদাও আগের মত নেই। আর এ কারণেও এসব জমিতে এখন ভুট্টার আবাদ করা হচ্ছে। জেলার প্রতিটি উপজেলাতেই কমবেশি ভুট্টার আবাদ হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে সদর উপজেলায়। পাকুন্দিয়া,হোসেনপুর এবং কটিয়াদী উপজেলায়ও প্রচুর পরিমাণ ভুট্টার আবাদ হচ্ছে। দেশে পোলট্রি শিল্পের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে পোলট্রি ফিডের প্রধান উপাদান হিসেবে ভুট্টার চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সেই ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য এখন ভুট্টার আবাদও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভুট্টা দানা দিয়ে’পপকর্ন’ তৈরির প্রচলনও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর জন্যও ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।পোলট্রি শিল্পের জন্য এক সময় ভারত থেকে পোলট্রি ফিড আমদানি করা হতো।স্থানীয় বাজারে তখন এসব পোলট্রি ফিড সহজলভ্য ছিল না। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশেই পোলট্রি ফিডের কারখানা হয়েছে। এমনকি গ্রামীণ জনপদেও এসব কারখানা গড়ে উঠছে। এসব কারণে এখন ভুট্টার বাজারজাতকরণ নিয়েও কৃষকদেরকে উৎকণ্ঠায় থাকতে হয় না। কারণ পোলট্রি ফিড কারখানার মালিকরাই কৃষকদের বাড়ি থেকে ভুট্টা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। কারখানা মালিকরা কৃষকদেরকে অনেক সময় আগাম ঋণও দিয়ে থাকেন বলে জানা গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অমিতাভ দাস জানান, বিভিন্ন জাতের ভুট্টার মধ্যে কৃষকরা সাধারণত হাইব্রিড জাতের ‘হীরা’ ভুট্টার আবাদ বেশি করছেন।কারণ হীরা ভুট্টার দানা বড়, রং উজ্বল, ফলন বেশি, চাহিদাও বেশি। এছাড়া এমনিতেই ভুট্টার রোগবালাই কম হয়। এর মধ্যে আবার হীরা ভুট্টায় রোগ বালাইয়ের সংক্রমণ আরও কম হয় বলে তিনি জানান। ভুট্টা দানা যেমন পোলট্রি ফিডের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, আবার কাঁচা ভুট্টা পাতা গোখাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ভুট্টার মোচা আহরণের পর ভুট্টা গাছও বাড়ির বেড়া এবং জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়।ভুট্টার ভুষিও গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে বহুমাত্রিক ব্যবহারমূল্যের কারণেই কৃষকরা এখন ভুট্টা আবাদ যথেষ্ট লাভজনক মনে করেন।কটিয়াদীতে ধানের দাম কমায় বিপাকে কৃষক কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ থেকে সুবল চন্দ্র দাস ঃ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় চলছে বোরো ধান কাটা মাড়াই উৎসব। মাঠে মাঠে কৃষি শ্রমিকরা পুরনো দিনের মতই ধান কাটার কাজ করলেও আধুনিক মাড়াই কল দিয়ে ধান মাড়াই কাজ করছে এ উপজেলার কৃষকরা। ফসল ঘরে তোলার কাজে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষাণ-কৃষাণিরা। ফলন ভাল হলেও দাম না থাকায় ধান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে কৃষক। এ বছর কৃষক সময়মত তেল, সার পাওয়ায় এবং তা জমিতে ব্যবহারের ফলে শুরু থেকে ধান গাছ খুব ভাল হয়। বিধায় চলতি বছর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেয়।এবছর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে থোর ধানে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি পড়ে শত শত একর জমির ধানের শীষ থেঁতলে যায় এবং ধান গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হবার পরও কৃষক আশায় বুক বাঁধে ধানের ন্যায্যমূল্য পাবার আশায়।