বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্য মারা গেছেন। মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ কলকাতার বাসভবনেই তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। হৃদরোগজনিত কিছু সমস্যা আগে থেকেই ছিল। এ দিন রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বাথরুমে যেতে গিয়ে আচমকাই অসুস্থ বোধ করেন সুচিত্রা। ফিরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক ডাকা হলে সুচিত্রাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিকৎসক। আজ বুধবারই তার কন্যা এলে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। আকস্মিক এই মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার অনুরাগী পাঠক এবং সাহিত্যিক মহলে নেমে আসে শোকের ছায়া। সুচিত্রার জন্ম ভাগলপুরে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। কম বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু করেছিলেন। বিয়ের পর কিছু দিন থেমে আবার লেখায় ফিরেছিলেন। তবে তার বিপুল জনপ্রিয়তার শুরু নব্বইয়ের দশকে। একে একে ‘কাচের দেওয়াল’, ‘কাছের মানুষ’, ‘দহন’, ‘হেমন্তের পাখি’, ‘নীল ঘূর্ণি’, ‘অলীক সুখ’-এর মতো উপন্যাস এবং বেশ কিছু ছোট গল্প তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিল। দৈনিক মানবজমিনের ঈদ সংখ্যায় বেশ কয়েকটি গল্প লিখেছিলেন তিনি। শহুরে মধ্যবিত্ত জীবন ও তার টানাপোড়েন ছিল তার লেখার প্রিয় বিষয়। বারবার উঠে আসত মেয়েদের জীবনের কথা। তার লেখা থেকে ‘দহন’, ‘ইচ্ছে’, ‘রামধনু’, ‘অলীক সুখ’-এর মতো বেশ কিছু জনপ্রিয় ছবি তৈরি হয়েছে বাংলায়। বৈঠকী মেজাজ আর হাসিমুখের মানুষটি গত কয়েক বছরের রাজনৈতিক-সামাজিক ঘটনাতেও বারবার সরব হয়েছেন। অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অভিনয় করেছিলেন ‘দহন’ এবং ‘অলীক সুখ’-এ। এ দিন সুচিত্রার মৃত্যুর খবর শুনে তিনি বলেন, নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। খুব আন্তরিক সম্পর্ক ছিল আমাদের। মনের একটা জায়গা একেবারে খালি হয়ে গেল। ওঁর ‘দহন’ই তো আমাকে জাতীয় পুরস্কার এনে দিয়েছিল। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, বজ্রাঘাতের মতো মনে হচ্ছে। এই তো সে দিন দেখা হল, ফোনে কথা হল। এ ভাবে যে চলে যাবে, ভাবতেই পারিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোকবার্তায় জানান, সুচিত্রার প্রয়াণে বাংলা সাহিত্য শুধু এক জন জনপ্রিয় নয়, অত্যন্ত শক্তিশালী কলমকে হারাল। আরও অনেক লেখা তার কাছ থেকে পাওয়ার ছিল আমাদের।